খোলা আকাশের নিচে ভূমিহীন মুক্তিযোদ্ধার বোন

, জাতীয়

ছাইদুর রহমান নাঈম, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, কিশোরগঞ্জ | 2024-07-01 15:38:12

বাবাগো আমারে বাঁচাও। আমার ছেলেডাও আমারে রাইখা চইলা গেলোগা। পাঁচদিন ধইরা খাইয়া না খাইয়া খোলা আকাশের নিচে পইরারা রইছি। আমারে তোমরা বাঁচাও। আমার ভাই দেশের জন্য যুদ্ধ করছে। এভাবেই বিলাপ করছিলেন ৭০ বছরের বৃদ্ধা গুলেছা বানু।

কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার মসূয়া ইউনিয়ন পরিষদের সামনে পাঁচদিন ধরে খোলা আকাশের নিচে পড়ে আছেন তিনি। খাদ্য-বাসস্থান ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসার অভাবে ধুঁকে ধুঁকে সময় কাটছে তার।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে ও সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বেতাল বাজার সংলগ্ন মসূয়া ইউনিয়ন পরিষদের সামনে দোকানের বারান্দায় শুয়ে আছেন বৃদ্ধা। পাশেই রাখা মুড়ির পুটলা ও পানি। গতরাতে খোলা স্থানে শুয়ে ছিলেন। বৃষ্টি হওয়ার পর বাজারের পাহারাদার দোকানের বারান্দায় রেখে যায়। স্বাভাবিক কথা বলতে পারলেও বয়সের ভারে চলাফেরা করতে পারেন না। মাঝে মধ্যে মানুষের দেওয়া কিছু খাবার খাচ্ছেন। অধিকাংশ সময় না খেয়েই দিন পার করতে হচ্ছে। দেখভাল করার কেউ নেই।

একই ইউনিয়নের বৈরাগিচর গ্রামে তার বাড়ি। বৃদ্ধা গুলেছা বানুর বড় ভাই মৃত ফালু ফকির ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বামী বাতেন ফকির পাঁচ বছর আগে মারা যান। তিনি ছিলেন ইউনিয়ন শ্রমিক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। এরপর থেকে একমাত্র ছেলে হোসেন তার দেখাশোনা করতেন।

পরিত্যক্ত এই ভবনে আগে থাকতেন বৃদ্ধা গুলেছা বানু

ভূমিহীন এই দম্পতি স্বামীর সঙ্গে ৩০ বছর ধরে ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন কৃষি উপ-সহকারী কর্মকর্তার পরিত্যক্ত ভবনে বসবাস করতেন। স্বামীর মৃত্যুর পরও এখানেই ছিলেন। ছেলে ভবঘুরে হওয়ায় মাকে সহ্য করতেন না। প্রায় সময় অত্যাচার করতেন। গত বৃহস্পতিবার ছেলে মাকে বলে উধাও হয়ে যায়। এতেই বিপাকে পড়েন এই বৃদ্ধা। পরিত্যক্ত ভবনে বৃষ্টির পানি জমায় সেখানেও থাকতে পারছেন না। বর্তমানে খোলা আকাশের নিচে কাটছে দিন।

বৃদ্ধা গুলেছা বানু বলেন, একমাত্র ছেলে হোসেন প্রায় সময় আমাকে অত্যাচার করতো। আমি কেন মারা যাচ্ছি না বলতো। ঈদেও একটু ভালো খাবার দেয়নি। আমার সাথে আর নেই বলে পাঁচদিন আগে ফেলে চলে গেলো। এখন আমি কোথায় থাকবো, কী খাবো জানি না। আমি মরলে লাশ যেন এই ছেলে না ধরে।

মসূয়া ইউপি চেয়ারম্যান আবু বাক্কার বলেন, আমি নিজেও অসুস্থ। খোঁজ নিতে পারিনি। কী করা যায় দেখবো। ইউএনওসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে জানাবো বিষয়টি।

সার্বিক বিষয়ে কথা হলে কটিয়াদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ওয়াহিদুজ্জামান বার্তা২৪.কমকে বলেন, আপনার থেকেই জানলাম বিষয়টি। আমি নিজে গিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় কী করা যায় তাই করবো।

এ সম্পর্কিত আরও খবর