গারো নৃগোষ্ঠীর সান্নিধ্যে বার্তাটোয়েন্টিফোর

ঢাকা, জাতীয়

ড. মাহফুজ পারভেজ, অ্যাসোসিয়েট এডিটর, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম | 2023-09-01 21:10:42

গারো জনজাতির সদস্যদের সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয় সত্তর দশকের মধ্যভাগে। সেটা ছিল আমার কিশোর বয়সের স্বপ্নের মতো দিনগুলোর ঘটনা। হালুয়াঘাটের ভারত সীমান্তবর্তী এলাকায় গারোপল্লীর অভিজ্ঞতা রূপকথার মতো সম্মোহিত করেছিল আমাকে।

পরে পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে গবেষণার সময় বাংলাদেশের অন্যান্য ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর পাশাপাশি গারো সম্প্রদায় সম্পর্কে সবিস্তারে জানার ও পড়াশোনার সুযোগ ঘটে। সেসব কথা ১৯৯৭ সালে প্রকাশিক আমার 'বিদ্রোহী পার্বত্য চট্টগ্রাম ও শান্তিচুক্তি' গ্রন্থে আলোচনা করেছি।

এসব অনেক পুরনো কথা আবার মনে পড়ল শুক্রবার (১৫ নভেম্বর)। এদিন নেত্রকোনার বিরিশিরিতে গারো সম্প্রদায়ের সান্নিধ্যে একটি অন্য রকম আয়োজনে শরিক হয়েছিল বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম পরিবারের সংবাদকর্মীরা। সেখান থেকে প্রত্যক্ষ পর্যবেক্ষণ ও অংশগ্রহণের মাধ্যমে বার্তাটোয়েন্টিফোর তুলে এনেছে বিচিত্র ও বর্ণময় গারো সম্প্রদায়ের মনের গহীনে থাকা কথা। মূলস্রোতের মিডিয়ায় উপস্থাপন করেছে গারো সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষের সর্বসাম্প্রতিক অভিব্যক্তি ও অনুভূতি।

আরও পড়ুন: গারো ভূমি বিরিশিরিতে বার্তার আয়োজন

বাংলাদেশের প্রথম ও পথিকৃৎ অনলাইন মাল্টিমিডিয়া নিউজপোর্টাল বার্তাটোয়েন্টিফোর অগ্রণী ভূমিকা পালন করে চলেছে দেশের মানবমণ্ডলী ও সংস্কৃতির শেকড় সন্ধানে। এর আগে প্রথমবারের মতো গারো শিল্পীদের সঙ্গীত কৃতিত্বকে ভিজ্যুয়ালি উপস্থাপন করেছে বার্তাটোয়েন্টিফোর। সাঁওতাল সম্প্রদায়ের উপর প্রকাশ করেছে একাধিক প্রতিবেদন। দেশের অবহেলিত, প্রান্তিক সমাজের বহু মানুষের প্রতিভাকে উমোচিত করেছে বৃহত্তর পরিসরে।

বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম'র এডিটর-ইন-চিফ এবং বাংলাদেশে অনলাইন ও অনলাইন মাল্টিমিডিয়া সাংবাদিকতার জনক আলমগীর হোসেন সুস্পষ্ট নির্দেশনায় বাংলাদেশের মানুষ, সমাজ, সংস্কৃতি, পরিবেশের ইতিবাচক দিকগুলোকে প্রাধান্য দিয়েছেন সব সময়৷ বহুত্ববাদী বৈচিত্র্যময়তায় বাংলাদেশের সমৃদ্ধ ঐতিহ্য ও অনন্যতাকে অনলাইনের বৈশ্বিক কাঠামোতে তুলে ধরার নিত্য প্রণোদনা দিচ্ছেন তিনি, যার বিশিষ্ট প্রকাশ ঘটেছে গারো নৃগোষ্ঠীর প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণমূলক আয়োজনে। এতে গারো সমাজের ফার্স্টহ্যান্ড বা প্রাইমারি সূত্র থেকে সরাসরি তথ্যগুলো আহরণ করে পাঠকদের জানানো হয়েছে।

বার্তাটোয়েন্টিফোর সেতুর মতো বৃহত্তর পাঠক সমাজ ও গারো জনগোষ্ঠীর সঙ্গে সম্মিলনের কাজটিই করেছে। সামাজিক বিজ্ঞানের নৃবৈজ্ঞানিক গবেষণায় প্রাথমিক ক্ষেত্র থেকে অবিকৃত তথ্য সংগ্রহের জন্য অবজারভেশন-পার্টিসিপেশন পদ্ধতি অনুসরণ করে। সাংবাদিকতায় প্রাথমিক সূত্রের নিবিড় নৈকট্যে গিয়ে বস্তুনিষ্ঠভাবে বাস্তবচিত্র তুলে আনতে বার্তাটোয়েন্টিফোর তেমনই চৌকস ও মেধাবী কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছে, যা বাংলাদেশের প্রিন্ট, অনলাইন ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার জন্য উদাহরণ-স্বরূপ ও অনুসরণযোগ্য।

গারো নৃগোষ্ঠীর সান্নিধ্যে বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম'র আয়োজনের রেশ ধরে পাঠকদের জন্য গারো নৃগোষ্ঠীর ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক বিবরণ উপস্থাপন করা প্রাসঙ্গিক হবে। বাংলাদেশে বসবাসকারী একটি নৃগোষ্ঠী হলেও গারোরা উত্তর-পূর্ব ভারতের নানা রাজ্যে, বিশেষত গারো হিলস জনপদে ছড়িয়ে আছেন।

একদা রাজনৈতিকভাবে শক্তিশালী গারো জাতি সামন্ত রাজ্যও প্রতিষ্ঠা করেছিল। মঙ্গোলীয় জনগোষ্ঠীর তিববতীবর্মণ শাখার বোড়ো উপশাখার অন্তর্ভুক্ত গারোদের আদি বাসভূমি বর্তমান চীনের উত্তর পশ্চিমাঞ্চলের সিন-কিয়াং প্রদেশ, যেখান থেকে তারা দেশত্যাগ করে পরবর্তীকালে তিব্বতে দীর্ঘদিন বসবাস করে ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলের পার্বত্য এলাকায় এবং বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গের কিছু এলাকায় আসেন। প্রায় ৪ থেকে সাড়ে ৪ হাজার বছর আগে গারো পাহাড়ে তাদের বসবাস শুরু হয়। এক সময় গারোরা বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলার ভারত সীমান্তবর্তী এলাকায় গারো পাহাড়ের পাদদেশে ক্ষুদ্র সামন্ত রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছিল।

বর্তমানে একটি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী হিসাবে গারোরা বাংলাদেশের টাংগাইল, জামালপুর, শেরপুর, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ, সিলেট, গাজীপুর জেলায় বাস করে। তবে ময়মনসিংহ জেলার হালুয়াঘাট, ধোবাউড়া, নেত্রকোনা জেলার দুর্গাপুর, কলমাকান্দা, শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ী, ঝিনাইগাতী, টাঙ্গাইল জেলার মধুপুর উপজেলায় এরা অধিক সংখ্যায় বসবাস করে। বাংলাদেশ ছাড়াও ভারতের মেঘালয় রাজ্যের গারো পাহাড়ে সন্নিহিত এলাকায় এদের বসবাস রয়েছে।

গারোরা নিজেদের আচিক্ মান্দে বা 'পাহাড়ের মানুষ' বলে পরিচয় দিতে পছন্দ করে। গারো নামটি তাদের মতে অপরের চাপিয়ে দেওয়া এবং শ্লেষাত্মক বিধায় গারোদের কাছে আপত্তিকর ও অবমাননাকর। কোথাও তাদেরকে 'মান্দি' নামেও অভিহিত করা হয়।

গারোদের সমাজ ব্যবস্থা মাতৃতান্ত্রিক। মা-ই পরিবারের কর্তা ও সম্পত্তির অধিকারী এবং এক্ষেত্রে পিতা পরিবারের ব্যবস্থাপকের দায়িত্ব পালন করে। পরিবারের সন্তানসন্ততিরা মায়ের পদবি ধারণ করে। গারোদের প্রথাগত আইন অনুযায়ী পারিবারিক সম্পত্তির উত্তরাধিকারী মেয়েরা। তবে শুধুমাত্র নির্বাচিত মেয়েই সম্পত্তির মালিকানা অর্জন করে। সেই নির্বাচিত মেয়েকে গারো ভাষায় নক্না বলে। সাধারণত পরিবারের কনিষ্ঠ কন্যা সন্তানকেই নক্না নির্বাচন করা হয়। তবে সে নিয়ম বদলাচ্ছে বলে গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্যে দেখাচ্ছে। এখন মা-বাবা তাদের জীবিতাবস্থাতেই পুত্রসন্তানের নামে জমি লিখে দিচ্ছেন।

সামাজিক দিক থেকে সমগ্র গারোসমাজ ১৩টি দলে বিভক্ত। এরা হলো: আওয়ে, আবেং, আত্তং, রূগা, চিবক, চিসক, দোয়াল, মাচ্চি, কচ্চু, আতিয়াগ্রা, মাৎজাংচি, গারা-গানচিং ও মেগাম। বাংলাদেশে আবেং, রূগা, আত্তং, মেগাম, চিবক প্রভৃতি দলভুক্ত গারোরাই বসবাস করে। এদেশে আবেং দলভুক্ত গারোদের সংখ্যাই বেশি। ১৩টি দল ছাড়াও সমগ্র গারো সমাজ ৫টি গোত্রে বিভক্ত। গোত্রগুলো হচ্ছে: সাংমা, মারাক, মোমিন, শিরা ও আরেং। ভারতের জাতীয় সংসদের স্পিকার ও কংগ্রেস নেতা পি. এ. সাংমা গারো সম্প্রদায়ের মানুষ ছিলেন। বাংলাদেশের বৃহত্তর ময়মনসিংহ- সিলেট অঞ্চলের অপর পাশে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের অধিবাসী হলেও পি. এ. সাংমার জন্ম ও শৈশব কেটেছে ময়মনসিংহের গারো সমাজে।

গারো সমাজে বৈবাহিক সম্পর্কের মধ্যে অনন্যতা রয়েছে, যা সম্পূর্ণরূপে অসবর্ণ প্রথা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। একই উপগোত্রের মধ্যে বিবাহ গারোসমাজে নিষিদ্ধ। জীবনযাপন ও খাদ্যাভাসেও তারা বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। গারোদের প্রধান খাদ্য ভাত। ভাতের সঙ্গে মাছ, মাংস, ডাল ও শাকসবজি তারা আহার করে। শুঁটকি মাছ গারোদের অন্যতম প্রিয় খাদ্য। দেশের গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, ভৈরব, কিশোরগঞ্জের ভাঁটি এলাকায় প্রাপ্ত পুঁটি মাছের হিদল বা সিদল শুঁটকি গারোদের নিকট অত্যন্ত প্রিয়। তরকারি রান্নায় গারোরা বেশি পরিমাণে কাঁচামরিচ ব্যবহার করে। গারোরা বিভিন্ন সবজি যেমন বেগুন, লাউ, চালকুমড়া, মিষ্টিকুমড়া, ঝিংগা, চিচিংগা, করলা, বরবটি, কচু প্রভৃতি খেতে ভালবাসে। ক্ষারজল ছাড়াও গারোরা বর্তমানে বাজার থেকে বিলাতি সোডা কিনে তরকারি রান্নার কাজে ব্যবহার করছে। তবে বর্তমানে বাংলাদেশের গারোদের মাঝে খুব কম সংখ্যক পরিবারেই ক্ষারজল ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

সমাজ বদলের ধারায় গারোদের রান্নার পদ্ধতি এবং রুচি বদলেছে। তারা নাখাম্ তরকারির পাশাপাশি ভর্তা, ভাজি, ডাল, মাছ, মাংস, নিরামিষ প্রভৃতি রান্নায় এবং আহারে প্রতিবেশী বাঙালিদের মতোই পটু হয়ে উঠেছে। এমনকি অবস্থাপন্ন পরিবারের লোকজনেরা খিঁচুড়ি, পোলাও, বিরিয়ানি আহারেও অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে। তাদের রান্নার পদ্ধতিও বর্তমানে বাঙালিদের অনুরূপ। শূকরের মাংস, কচ্ছপ এবং কুঁচে তারা পছন্দ করে। বাঁশের কঁচি চারা এবং ব্যাঙের ছাতা গারোদের অন্যতম প্রিয় সবজি।

অতিথি আপ্যায়নে, নানা পালাপার্বণে ধেনো পচুঁই মদ গারোদের নিকট অপরিহার্য। প্রটেস্টটান্ট খ্রিস্টানদের মধ্যে মদপানের প্রচলন নেই বললেই চলে। তবে ক্যাথলিক গারোরা এ ব্যাপারে উদার। বলাবাহুল্য, গারোরা বর্তমানে ৯৯% খ্রিস্টান ধর্মের অনুসারী। কয়েকশত বছরের খ্রিস্টান মিশনারি কার্যক্রমের ফলে গারোদের মধ্যে ধর্মান্তরিত হওয়ার দারা চলছে।

গারোদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক থাকলেও বর্তমানে তাদের পোশাক-পরিচ্ছদ বাঙালিদের মতো। পুরুষেরা লুঙ্গি, গেঞ্জি, পাজামা, ট্রাউজার, শার্ট এবং মেয়েরা শাড়ি, ব্লাউজ, পেটিকোট, সালোয়ার কামিজ ও ওড়না ব্যবহার করে। গারো মহিলাদের নিজস্ব ঐতিহ্যবাহী পোশাক-পরিচ্ছদ রয়েছে এবং সেগুলো তারা অনেক সময় ঘরোয়া পরিবেশে ব্যবহার করে। গারোরা এই পোশাককে দক্বান্দা বলে। দক্বান্দায় বিভিন্ন শিল্পকর্ম চিত্রিত থাকে।

ব্রিটিশ শাসনকালে গারো পুরুষরা হাফপ্যান্ট এবং শার্ট ব্যবহারে অভ্যস্ত হয়ে ওঠে। পরে গারো পুরুষেরা ধুতি শার্ট ব্যবহার শুরু করে। তারা বড় সাইজের রঙিন গামছা ধুতির কায়দায় পিছনে মালকাছা করে পরিধান করে। সঙ্গে গেঞ্জি বা শার্ট ব্যবহার করে। বর্তমানে গারোরা লুঙ্গি ব্যবহারে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। আগেকার দিনে গারো মহিলারা চাঁদিরূপার গহনাই বেশি ব্যবহার করতেন। বর্তমানে অবস্থাপন্ন পরিবারের মহিলারা সোনার গহনা ব্যবহার করে। খ্রিস্টান ধর্মমতে বিবাহের সময় বর-কনে উভয়েরই আংটি পরিধান এবং আংটি বিনিময় অবশ্য পালনীয়।

খ্রিস্টান মিশনারিদের প্রচেষ্টায় শিক্ষাক্ষেত্রে গারোরা ব্যাপক অগ্রগতি লাভ করেছে। উনিশ শতকের শেষদিকে খ্রিস্টান মিশনারিগণ গারোদের মধ্যে খ্রিস্টধর্ম প্রচার শুরু করে। ধর্মপ্রচারের শুরুতে তাঁরা গুরুত্বারোপ করে শিক্ষার উপর। বর্তমানে গারো অধ্যুষিত প্রত্যেক গ্রামে প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং মিশনকেন্দ্রগুলোতে উচ্চ বিদ্যালয় রয়েছে। গারোদের শিক্ষার হার প্রায় ৮০%।

বর্তমানে গারোদের শতকরা নিরানববইজনই খ্রিস্টধর্মে বিশ্বাসী। তবে খ্রিস্টধর্মে ধর্মান্তরিত হওয়ার পূর্বে গারোদের আদিধর্মকে অনেকেই জড়োপাসনা বলে আখ্যায়িত করেছেন। তবে এ ব্যাপারে ভিন্নমত রয়েছে। অনেক গবেষকের মতে, গারোদের আদিধর্ম জড়োপাসনা ছিল না। কারণ গারোরা সর্বশক্তিমান সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বেও বিশ্বাস করতো।

গারো সমাজ একদা পুরোহিত শাসিত ছিল। আদি ধর্মে বিশ্বাসী গারোদের সমাজে অভিজ্ঞ ব্যক্তি কিংবা সমাজে যারা খামাল্ অর্থাৎ পুরোহিত হিসেবে গণ্য তারাই কেবল দেবদেবীর অস্তিত্ব এবং কার্যকলাপ সম্পর্কে জ্ঞাত। সমাজে খামালদের বিরাট ভূমিকা রয়েছে। এই খামালরাই বিভিন্ন অনুষ্ঠানাদি পরিচালনা করেন, অসুখ-বিসুখের কারণ নির্ণয় করেন, কোন দেবতার কোপদৃষ্টিহেতু অসুখ হয়েছে তা ধ্যানের মাধ্যমে জ্ঞাত হন এবং প্রতিকার বিধান করেন। স্বপ্নযোগেই খামালদের দেবদেবীরা উপাসনামন্ত্র শেখায় এবং সেই মন্ত্র নির্দিষ্ট কোন একটি মন্ত্র নয়। প্রায় প্রতিটি দেবদেবীর উপাসনায় নানা ধরনের মন্ত্র রয়েছে। খামাল্ বংশ পরম্পরায় নিযুক্ত হয়না। সমাজের যে কেউ নিজ যোগ্যতাবলে খামাল্ নিযুক্ত হতে পারে। তবে সাধারণত সদ্গুণাবলীর অধিকারী পূর্ণবয়স্ক পুরুষই দৈব প্রদত্ত ক্ষমতাবলে খামাল্ পদে আসীন হন। এমন রীতি শিক্ষা ও আধুনিকতার ফলে ক্রমহ্রাসমান।

উনিশ শতকের শেষে গারোদের মাঝে খ্রিস্টধর্ম প্রচার শুরু করেন অস্ট্রেলিয়ান ব্যাপটিস্ট মিশনারিগণ। তাঁরা নেত্রকোনা জেলার দুর্গাপুর থানাধীন বিরিশিরি গ্রামে অবস্থান করে গারোদের মধ্যে খ্রিস্টধর্ম প্রচার শুরু করেন এবং একাজে তাঁরা অচিরে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেন।

অপরদিকে খ্রিস্টানদের আরেক প্রধান সম্প্রদায় রোমান ক্যাথলিক সম্প্রদায়ের মিশনারিগণ ১৯০৯ সালের দিকে বর্তমান নেত্রকোনা জেলার রাণীখং এলাকার গারোদের মধ্যে তাঁদের প্রচার কাজ শুরু করেন। স্বল্প সময়ের মধ্যে তাঁদের প্রচারকাজেও ব্যাপক অগ্রগতি সাধিত হয়। ধর্মপ্রচারের পাশাপাশি তাঁরা গারোদের শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য পরিচর্যার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করেন। খ্রিস্টান গারোরা প্রধানত দুটি ধর্মীয় সম্প্রদায়ে বিভক্ত: প্রটেস্টান্ট (ব্যাপ্টিস্ট) এবং রোমান ক্যাথলিক। এই দুটি সম্প্রদায়ের অনুসারীদের মধ্যে বাংলাদেশে রোমান ক্যাথলিকরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ। প্রধান এ দুটি সম্প্রদায় ছাড়াও চার্চ অব বাংলাদেশ ও সেভেনডে এ্যাড্ভেন্টিস্ট নামে দুটি খ্রিস্টীয় ধর্মীয় সম্প্রদায়ভুক্ত গারোও এদেশে রয়েছে, তবে তাদের সংখ্যা খুব বেশি নয়।

বাংলাদেশের মূলধারার জাতিসত্তার পাশাপাশি বহুবিচিত্র অনেক ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী রয়েছে, তা সর্বজনবিদিত। পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি নৃগোষ্ঠীর মতো সমতলেও রয়েছে বেশ কিছু নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী। গারো, হাজং, সাঁওতাল ইত্যাদি সম্প্রদায় বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক বিভা ও ঔজ্জ্বল্যের অপরিহার্য অংশীদার। বিশেষত, গারো জনগোষ্ঠী বাংলাদেশের সমাজ ও সংস্কৃতিতে এক অপরূপ বৈচিত্র্য ও অসামান্য রূপময়তার সঞ্চার করেছে, যা তাবৎ দেশের সাংস্কৃতিক বহুমাত্রিকতার মুকুটে সংযোজন করেছে বিশিষ্টতার আলোকচ্ছটা।

বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম বাংলাদেশের প্রতিটি সমাজ ও সংস্কৃতির মানুষের অনন্যতা ও বিশিষ্টতাকে জাতীয় সংস্কৃতির মূল্যবান অংশ বলে বিশ্বাস করে। অক্ষরের বিন্যাসে আর ভিডিওর গতিময়তায় বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম বাংলাদেশের কেন্দ্র ও প্রান্তের যাবতীয় সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও মানবিক প্রপঞ্চকে সদর্থকভাবে উপস্থাপনের জন্য পেশাগত উদ্যোগে সদাপ্রস্তুত।

এ সম্পর্কিত আরও খবর