এখনও লাইসেন্স নেই, প্রায় ১০ লাখ চালকের!

ঢাকা, জাতীয়

শাহরিয়ার হাসান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-28 22:58:51

 

ঢাকা: সড়কে নৈরাজ্য বন্ধ করতে কঠোর অবস্থানে সড়ক ও পরিবহন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। চলতি মাসেই শেষ হয়েছে ১১ দিন ব্যাপী ট্রাফিক সপ্তাহ। তবে এত কিছুর পরও সড়কে বিশৃঙ্খলা কোন ভাবেই রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না।

শনিবার (২৫ আগস্ট) নাটোরে বেপরোয়া গতির বাসের চাপায় একটি লেগুনা পিষ্ট হয়ে প্রাণ গেছে ১৪ জনের। নানা প্রশ্ন উঠলেও সব প্রশ্ন থেকে গেছে একটি জায়গায়। যত গুলো গাড়ির রেজিস্ট্রেশন রয়েছে, তার বিপরীতে চালকের লাইসেন্স নেই এখনও প্রায় ১০ লাখ। এই অদক্ষ চালকের হাতে গাড়ি ঘুরছে দেশজুড়ে, যার ফলে  কোন ভাবেই দুর্ঘটনা রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না।

এ বিষয়ে বিআরটিএর চেয়ারম্যান মশিয়ার রহমান বার্তা২৪.কমকে বলেন, সড়ক নিরাপদ করতে সবাইকেই সচেতন হতে হবে। তবে প্রথমে এগিয়ে আসতে হবে সকল শ্রেণীর চালকদের। এই লক্ষ্যে বিআরটিএর অভিযান অব্যাহত আছে। পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স বা অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে প্রশিক্ষণ আমরা বাধ্যতামূলক করেছি। পাশাপাশি যাদের লাইসেন্স নেই তাদের বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগ করে লাইসেন্স প্রক্রিয়ায় আনতে বাধ্য করছি।

জানা যায়, সারাদেশে মোট রেজিস্ট্রেশন রয়েছে এমন গাড়ির সংখ্যা  ৩৫ লাখ ৪৪ হাজার ৯টি। এর বিপরীতে পেশাদার চালকের সংখ্যা ১২ লাখ ১৫ হাজার ৪৭০ জন। অপেশাদার চালক আছেন ১৪ লাখ ২৪ হাজার ১৮৮ জন। সব মিলিয়ে মোট লাইসেন্সধারী চালকের জন্য  ২৬ লাখ ৩৯ হাজার ৬৫৮ জন। হিসাব বলছে, ৯ লাখ ৪ হাজার ৩৫১ টি রেজিস্ট্রেশনকৃত হালকা, ভারি, মাঝারি গাড়ির বিপরীতে কোন লাইসেন্সধারী চালক নেই।

এখন প্রশ্ন উঠছে, তাহলে এত গুলো রেজিস্ট্রেশনকৃত গাড়ির চালক কারা, আর দুর্ঘটনার পিছনে বড় একটি কারণ কি এই ১০ লাখ অদক্ষ চালক? জানতে চাইলে বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা কেন্দ্রের সহকারি অধ্যাপক কাজী সাইফুন নেওয়াজ বার্তা২৪.কমকে বলেন, সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষেত্রে অবশ্যই চালকের বড় একটা ভুমিকা থাকে। অদক্ষ চালক, প্রশিক্ষণহীন চালকদের কারণেই এমন  ঘটনার সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। এই সব ঘটনায় আমাদের কঠোর আইন প্রয়োগ করতে হবে। পাশাপাশি যিনি লাইসেন্স পাবার যোগ্য তিনিই যেন লাইসেন্স পান, সে বিষয়ে নজরদারি বাড়াতে হবে।

একই বিষয়ে সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে কাজ করা, গবেষক মোঃ রিদওয়ানুর রহমান বার্তা২৪.কমকে বলেন, সাধারণত একটি আদর্শ মহানগরে ২৫ শতাংশ জায়গা সড়কের জন্য থাকা উচিত। কিন্তু ঢাকা মহানগরের সড়কের জন্য আছে মাত্র ৭ শতাংশ।

এমআরআইর গবেষকদের মতে, রাজধানীতে মানুষ বেশি, যানবাহনও বেশি। তাই এখানে দুর্ঘটনার হারও বেশি। তবে সারাদেশের দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রিত পর্যায়ে আনতে না পারার অন্যতম আরেকটি কারণ হচ্ছে বিচারহীনতার সংস্কৃতি। বেপরোয়া বাস চালকরা একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটিয়েই যাচ্ছে। অথচ ক’জনইবা আইনের আওতায় এসেছে। তাদের কারোরই তো যথাযথ বিচার হয়নি। ফলে বেপরোয়া চালকদের সাহস আরও বেড়ে যাচ্ছে। যে কেউ চালকের আসনে বসে গাড়ি চালাচ্ছে।

অন্যদিকে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, আইন অনুসারে লাইসেন্স পেতে, প্রথমে প্রত্যেককে চিকিৎসকের কাছ থেকে শারীরিক ও চোখের পরীক্ষায় যোগ্যতা অর্জন করতে হয়। শিক্ষানবিশ লাইসেন্স, পরে অপেশাদার চালকের জন্য প্রথমে লিখিত পরীক্ষা, এরপর ফিল্ড টেস্ট রয়েছে। আর পেশাদার চালকের বেলায় প্রথমে হালকা যান, এরপর পর্যায়ক্রমে মাঝারি ও ভারী যানের লাইসেন্স নিতে হয়।কিন্ত এই পরীক্ষাগুলো যথাযথভাবে সম্পন্ন না করেই লাইসেন্স দেওয়ার অভিযোগ আছে।

যদি এই সংখ্যাকেও অদক্ষ চালক হিসেবে ধরা হয়। তাহলে দেখা যাবে, লাইসেন্সহীন, অল্প বয়সী, অদক্ষ, ভুয়া লাইসেন্সধারীদের হাতে স্টিয়ারিং। আর তারাই দাপিয়ে বেড়াচ্ছে সড়ক কিম্বা মহাসড়ক।

তবে সবশেষে এই  বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যানবাহন, বিশেষ করে লাইসেন্সহীন এই ১০ লাখ গাড়ির চালকদেরকে একটা নির্দিষ্ট শৃঙ্খলার মধ্যে আনা না হলে দুর্ঘটনার হার দিন দিন আরও বৃদ্ধি পাবে। তবে এসবের পাশাপাশি পথচারীদেরও আত্মসচেতনতা বাড়াতে হবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর