চোরাবালিতে আটকে গেলে কী করবেন
নিয়মিত না হলেও মাঝেমাঝেই আমরা চোরাবালিতে আটকে পর্যটকের মৃত্যুর খবর শুনতে পাই। সাধারণত, নতুন কোথাও বেড়াতে গিয়ে অসাবধানতাবশতঃ এমন দুর্ঘটনার শিকার হন অনেকে। আর শেষ পর্যন্ত চোরাবালিতে তলিয়ে যাওয়ার ঘটনাটি সম্পাদিত হয় আটকে পড়ার পর করণীয় সম্পর্কে জানাশোনার অভাবে। মনে রাখুন, যদি কখনো চোরাবালিতে আটকেও যান, খুব দ্রুতই কোনো কিছু আপনাকে নিচের দিকে টেনে নেবে না। আপনি সময় পাবেন। অনেকেই ঘাবড়ে গিয়ে অকারণ হুড়োহুড়ি বাড়িয়ে দিয়ে তলিয়ে যাওয়াকে ত্বরান্বিত করেন। অথচ সম্যক ধারণা থাকলে খুব সহজেই চোরাবালি থেকে বেঁচে ফেরা সম্ভব।
সাধারণ বালুর সাথে চোরাবালির পার্থক্য হলো এই বালি পানি দ্বারা অতিসম্পৃক্ত অবস্থায় থাকে। বালি, কাদা বা নুড়ি যখন ভূগর্ভস্থ জলীয় প্রবাহের সান্নিধ্যে আসে, তখন পানির সংস্পর্শে এদের দানাগুলোর মধ্যে স্বাভাবিক যে ঘর্ষণশক্তি থাকে তা কমে যায় এবং বালির অণুগুলো জলীয় অণুর মতো আচরণ শুরু করে। সিক্ত হতে হতে একপর্যায়ে বালি এমন পর্যায়ে যায় যে, কোনো ভারী বস্তুর চাপ নিতে পারে না।
আমরা যদি সাধারণ বালির ওপরে হাঁটি তখন পা খুব একটা ভেতরে যায় না। এর কারণ সাধারণ বালিতে থাকা ঘর্ষণ ও বল আমাদেরকে তলিয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করার পক্ষে যথেষ্ট। কিন্তু চোরাবালি যেহেতু পানি দ্বারা প্রচুর পরিমাণে সম্পৃক্ত, তাই এর বল সাধারণ বালির তুলনায় অনেক কম।
সমুদ্র সৈকতে গিয়ে বালিতে দাঁড়িয়েছেন কখনো? দেখবেন ধীরে ধীরে পা বালির ভেতর দেবে যাচ্ছে। এটাও একধরনের ছোটখাটো চোরাবালি। তবে এধরনের চোরাবালির গভীরতা মাত্র কয়েক ইঞ্চি হয়। তাই এসব স্থানে শুধু আমাদের পায়ের গোড়ালি অব্দি ডোবে। তবে যেসব স্থানে এর গভীরতা বেশি সেসব স্থান খুবই বিপদজনক।
সাধারণভাবে দেখে বোঝার উপায় নেই চোরাবালি কোথায় আছে। কারণ চোরাবালিতে পানির স্তর থাকে নিচের দিকে। উপরে তাই সাধারণ বালির মতোই। আবার কোনো কোনো জায়গায় চোরাবালি দেখতে অনেকটা কাদার মতো। এতে পা না-রাখা অব্দি কেউ কিছু বুঝতেও পারবে না। আর এজন্যই সাধারণত অজান্তেই বিপদে পড়ে মানুষ। পা দিয়ে যখন বুঝতে পারা যায় চোরাবালিতে পা পড়েছে, আসল বিপদটা শুরু হয় তখন। নিজের জীবন বাঁচাতে ব্যতিব্যস্ত হয়ে এদিক সেদিক লাফালাফি শুরু করে দেয়। আর এতেই বালি ক্রমে গভীরে টেনে নিতে সক্ষম হয়।
তাই যদি কখনো চোরাবালির ফাঁদে পড়েই যান তবে প্রথমেই নিজের মাথা ঠান্ডা রাখতে হবে। উত্তেজিত হওয়া যাবে না। একটা কথা মনে রাখবেন, আপনি মারা যাবেন না। চোরাবালি আপনাকে মেরে ফেলতে পারবে না। বরং যদি মৃত্যু হয় তবে সেটা হবে আপনার অস্থিরতার কারণে। আপনি যত বল প্রয়োগ করবেন ততই ফেঁসে যাবেন গভীর ফাঁদে।
যদি সুস্থির থেকে হাত-পা ছোড়াছুড়ি না করে নিজেকে উঠিয়ে আনার চেষ্টা করেন তবে সফল হবেন। কেননা মানবদেহের ঘনত্ব প্রতি ঘনফুটে ৬২.০৪ পাউন্ড। আর এই ঘনত্ব নিয়ে আমরা দিব্যি পানিতে ভেসে থাকতে পারি। অন্যদিকে চোরাবালির ঘনত্ব প্রতি ঘনফুটে ১২৫ পাউন্ড। সুতরাং পানিতে ভেসে থাকতে পারলে চোরাবালিতে ভেসে থাকা খুব কঠিন কিছু হবে না।
এখন তাহলে চোরাবালি থেকে পরিত্রাণের উপায় সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক
প্রথমত, আপনার সঙ্গে থাকা যে কোনো কিছুকেই তখন ‘অতিরিক্ত’ বলে ভাবতে হবে। আর নির্দ্বিধায় সেসব ফেলে দিতে হবে। পিঠে ব্যাগ থাকলে খুলে ফেলতে হবে। পায়ে জুতা থাকলে খুলে ফেলুন তাও। কিন্তু যদি ফিতেবাঁধা জুতা পরে থাকেন তবে সময় নষ্ট না-করাই সমীচীন হবে। কেননা চোরাবালি প্রায় এক মিনিট সময় নেয় তরলিত হওয়ার জন্য। এমনকি জুতা খুলতে না পারলেও, চেষ্টা করলে চোরাবালি থেকে মুক্তির জন্য মাত্র এক মিনিটই যথেষ্ট সময়।
মনে রেখে দিন, পানি থেকে যেহেতু চোরাবালির ঘনত্ব বেশি তাই পানিতে ভেসে থাকা গেলে এখানেও যাবে। বেশিরভাগ চোরাবালির গভীরতা কম হয়। খানিকটা ডোবার পর হয়তো পা তলায় আটকে যেতে পারে। যদি তা না-হয়, যদি চোরাবালি খুব গভীর হয় তাহলেই কেবল পুরোপুরি ডুবে যাওয়ার আশঙ্কা থাকতে পারে।
এজন্য পানিতে আমরা যেভাবে সাঁতার কাটি, ঠিক সেভাবেই নিজের শরীরকে যতটা সম্ভব আনুভূমিক করে ফেলতে হবে। তারপর খুব ধীরে ধীরে সাঁতরে চোরাবালির বাইরে আসার চেষ্টা করতে হবে। সাথে যদি কেউ থাকে তাহলে তাকে বলতে হবে নিরাপদ দূরত্ব থেকে কাপড় বা দড়ি জাতীয় কিছু ফেলতে। এবং তা ধরে ধীরে ধীরে চোরাবালি থেকে উঠে আসা সম্ভব। যদি কেউ না থাকে তবে ঠিক সাঁতারের মতো করেই আস্তে আস্তে নিজেকে তুলে আনতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে শক্ত মাটি পাওয়া যায় কিনা। পাওয়া গেলে সেখানে ধরে নিজেকে টেনে নিয়ে আসতে হবে।