গৃহপালিত পশু পালনে লাভবান চরাঞ্চলের নারীরা
মানিকগঞ্জের মূল ভূখন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন পদ্মা নদী বেষ্টিত চরাঞ্চল লেছড়াগঞ্জ। আধুনিকতার ছোঁয়া থেকে এখনো বঞ্চিত চরাঞ্চলবাসী। প্রায় তিন যুগ আগে পদ্মার বুকে জেগে উঠা লেছড়াগঞ্জ চরের বাসিন্দা প্রায় ৪০ হাজার। এসব বাসিন্দাদের জীবিকা নির্বাহের একমাত্র মাধ্যম কৃষিকাজ।
তবে পরিবারের পুরুষ সদস্যরা কৃষিকাজে ব্যস্ত থাকলেও অধিকাংশ নারীরা ব্যস্ত থাকেন গৃহপালিত পশু নিয়ে। গৃহপালিত পশু পালনে বেশ লাভবানও চরাঞ্চলের নারীরা। গৃহপালিত পশু থেকে আয় করা টাকা দিয়ে বাড়ি-ঘর নির্মাণ ও ছেলে মেয়ের পড়াশুনার পাশাপাশি অন্যান্য কাজেও মূলধন হিসেবে বেশ উপকারে আসে বলে জানান নারীরা।
লেছড়াগঞ্জ চরের হরিহরদিয়া এলাকার বাসিন্দা আফরোজা বেগম বলেন, চরে কৃষিকাজ ছাড়া আর কোন কাজ নেই। কৃষিকাজেও অনেক ঝুঁকি। বন্যা এবং বৃষ্টির পানিতে বেশ লোকসান হয়। তবে গরু-ছাগল পালনে কোন লোকসান নাই। গাভি গরু পালন করলে দুধ বিক্রি করা যায় সারা বছর। আর ষাঁড় গরু পালনে পাওয়া যায় বাৎসরিক মুনাফা।
একই গ্রামের হজুফা শেখ বলেন, গরু কেনার টাকা না থাকায় দুইটি ছাগল কিনেছিলেন তিনি। সেখান থেকে এখন ৫টি ছাগল হয়েছে। গেল কোরবানির ঈদে দুইটি খাসি ৩০ হাজার টাকা বিক্রি করে জমি রেখেছেন তিনি। ওই জমির ধান দিয়েই সারা বছরের খাবার ব্যবস্থা হয়ে যাবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
রাশেদা শেখ নামের এক গৃহবধূ বলেন, বাড়িতে ছোট বড় মিলে ১০ টি গরু রয়েছে তাদের। ছেলে মেয়েদের নিয়ে তিনি সেগুলো দেখাশুনা করেন। সকাল আর সন্ধ্যায় তার স্বামীও তাকে সাহায্য করেন। কৃষিকাজ আর গবাদিপশু নিয়ে বেশ ভালোই আছেন তিনি। গবাদিপশু থেকে আয় হওয়া টাকা দিয়ে বাড়ি-ঘর ছাড়াও মেয়ে বিয়ের জন্য সঞ্চয় জমা করছেন বলে মন্তব্য করেন তিনি।
স্থানীয় যুবলীগ নেতা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, কৃষিকাজ ও মাছচাষ ছাড়া চরাঞ্চলে জীবিকা নির্বাহের আর কোন মাধ্যম নেই। তবে বাণিজ্যিকভাবে গরু-ছাগল পালন করতে পারলে বেশি লাভবান হওয়া যাবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। কৃষিকাজ ও মাছচাষে ঝুঁকি থাকলেও গরু-ছাগল পালনে ঝুঁকি খুব কম। আবার মুনাফা বেশি বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
স্থানীয় লেছড়াগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ হোসেন ইমাম বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, চর এলাকার প্রতিটি বাড়িতেই কম বেশি গরু-ছাগল রয়েছে। গৃহপালিত পশু পালনে বেশ লাভবান চরাঞ্চলের নারীরা। তবে স্বল্প সুদ বা বিনা সুদে লোনের ব্যবস্থা হলে গরু-ছাগল পালনে তারা আরও এগিয়ে যাবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।