জরুরি ভিত্তিতে নিরাপত্তাসহ ১২টি সেবা গ্রহণে সরকার ১৬-২০তম গ্রেডে শূন্য পদে জনবল নিয়োগ করতে নতুন নীতিমালা প্রণয়ন করছে, যা আউটর্সোসিং প্রক্রিয়ায় সেবা গ্রহণ নীতিমালা-২০১৮ নামে অভিহিত হয়েছে।
বুধবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে অর্থ সচিব আব্দুর রউফ তালুকদার স্বাক্ষরিত এই নীতিমালা জারি করা হয়।
অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, আউটসোর্সিং প্রতিষ্ঠান অথবা অন্য কোনো উৎস থেকে এ জনবল নিয়োগ দেয়া হবে। যাদের বয়সসীমা ১৮-৬০ বছর। সরকার ১২টি সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠান প্রার্থীর যোগ্যতা ও শর্ত নির্ধারণ করে দেবে। যেমন গাড়ি চালক নিয়োগে সেবা গ্রহণকারী প্রতিষ্ঠান প্রার্থীকে এসএসসি অথবা সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ এবং বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকার শর্ত দিতে পারবে। আবার নিরাপত্তা প্রহরী ও পরিচ্ছন্নকর্মী পদে সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে প্রার্থীর যোগ্যতা ৮ম শ্রেণি অথবা জেএসসি অথবা সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। তবে মন্ত্রণালয় ও বিভাগ পরিচ্ছন্নকর্মীর পদ ৮০ ভাগ হরিজন সম্প্রদায়ের জন্য বরাদ্দ থাকবে।
তাছাড়া আউটসোর্সিং প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন, ট্রেড লাইসেন্স, আয়কর সনদ, ব্যাংক সলভেন্সি সনদ ও কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। জেলার ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসক এবং সিটি করপোরেশনের ক্ষেত্রে সিটি করপোরেশন থেকে প্রতিষ্ঠান নিবন্ধন গ্রহণ করতে হবে।
নীতিমালা অনুসারে, সেবা ক্রয়ের জন্য নির্ধারিত সেবাগুলো তালিকায় রয়েছে নিরাপত্তা ও পাহারা (কেপিআই ব্যতীত), পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা, বাগান পরিচর্যা, পরিবহন সেবা, ইলেকট্রিক্যাল, মেকানিক্যাল ও কাঠের কাজ, কুকিং ও ডাইনিং সংক্রান্ত, হোস্টেল, মেসরুম, ক্লাব, স্পোর্টস, কমনরুম, হাউজ কিপিং, কেয়ার টেকিং, হাসপাতাল সেবা, লিফট মেইনটেন্যান্স, পাম্প অপারেটিং, জেনারেটর অপারেটিং, মেশিন অপারেটিং ও প্রজেক্টর অপারেটিং, এয়ার কন্ডিশন যন্ত্র স্থাপন ও মেইনটেন্যান্স, ডাক বিতরণ, স্যানিটারি ও প্লাম্বিং কাজ এবং অর্থ বিভাগ কর্তৃক সময়ে সময়ে নির্ধারিত অন্য যেকোনো সেবা। আউটসোসিং প্রক্রিয়ায় সংগৃহীত সেবা প্রদানকারীর সেবামূল্য সেবা প্রদানকারীর নিজ নামীয় ব্যাংক হিসাবে দেওয়া হবে।
বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ, সংযুক্ত অফিস, অধিদফতর, পরিদফতর, দফতর, সংবিধিবদ্ধ সংস্থা, রাষ্ট্রয়ত্ত প্রতিষ্ঠানে এবং প্রকল্পের ক্ষেত্রে পিপি, ডিপিপি, টিএপিপিতে আউটসোর্সিং থেকে জনবল নিয়োগ দেওয়া হবে। তবে আউটসোর্সিং থেকে অথবা অন্য কোনো উৎস থেকে নিয়োগ পাওয়া জনবল সরকারি নিয়োগ বলে বিবেচিত হবে না। এটা প্রতিষ্ঠান কিংবা ব্যক্তির সঙ্গে নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের চুক্তিভিত্তিক সম্পূর্ণ সাময়িক সেবা গ্রহণকে বুঝাবে। জনপ্রশাসন ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মতির ভিত্তিতে আউটসোর্সিং থেকে জনবল সেবা নেওয়া হবে।
প্রকল্প ও কর্মসূচির ক্ষেত্রেও একই নীতিমালা প্রযোজ্য হবে। ১৬-২০তম গ্রেডের পদগুলো স্থায়ী কিংবা অস্থায়ী, অবসর, মৃত্যুজনিত, চাকরিত্যাগ, চাকরিচ্যুতি অথবা অন্য কোনো কারণে পদ শূন্য হলে এই নীতিমালার আলোকে ওই সব পদে জনবল নিয়োগ দেওয়া হবে। এমনকি উন্নয়ন প্রকল্প অথবা কর্মসূচির ক্ষেত্রে একই নীতি প্রযোজ্য হবে।
তবে যে সকল পদের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা, রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা সরকারি স্বার্থ বিঘ্নিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে অথবা নিরবিচ্ছিন্ন দক্ষ বা বিশেষায়িত সেবা পাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে সেসব পদসমূহে জনপ্রশাসন ও অর্থ বিভাগের সম্মতি সাপেক্ষে আউটসোর্সিং থেকে জনবল নিয়োগ দান থেকে বিরত থাকা যাবে।
নতুন এ নীতিমালা অনুসারে শূন্য পদে দৈনিক, মাসিক এবং বাৎসরিক ভিত্তিতে জনবল নিয়োগ দেওয়া যাবে। সেই ক্ষেত্রে পাবলিক প্রকিউরমেন্ট আইন ২০০৬, পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা ২০০৮ অনুসরণ করে প্রতিযোগীতামূলক মূল্যে নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান থেকে জনবল নিয়োগ দিতে হবে।
আউটসোর্সিং জনবলের সেবামূল্য অর্থাৎ বেতন ভাতাসহ আর্থিক সুবিধাদি অর্থ বিভাগ থেকে জারিকৃত নির্দেশনার আলোকে নির্ধারিত হবে। সরকারিভাবে ঘোষিত নির্ধারিত কর্মঘণ্টাই আউটসোর্সিং থেকে নেওয়া জনবলের কর্মঘণ্টা হবে। তবে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের চাহিদা মোতাবেক অতিরিক্ত ঘণ্টা বা সময় কাজ করলে চুক্তি মোতাবেক অতিরিক্ত মজুরি দেওয়া হবে।
নিয়োগকারি প্রতিষ্ঠান অর্থ বিভাগের অনুমোদিত নির্ধারিত ফরমে জনবল নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি সম্পাদন করবে। বিশেষ প্রয়োজনে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সম্মতি গ্রহণ করে নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান ছাড়াই সরাসরি জনবল নিয়োগ দেওয়া যাবে। সেই ক্ষেত্রে যাদের নিয়োগ দেওয়া হবে নির্ধারিত ফরমে তাদের সঙ্গে চুক্তি সম্পাদন করতে হবে। সেই ক্ষেত্রে ব্যক্তির জাতীয় পরিচয়পত্র, শিক্ষাগতযোগ্যতা, স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেই তাদের নিয়োগ দিতে হবে।
যেসব পদে আউটসোর্সিং থেকে জনবল নিয়োগের সিদ্ধান্ত রয়েছে ওই সব পদে আউটসোর্সিং ছাড়া অন্য কোনো উপায়ে জনবল নিয়োগ দেওয়া যাবে না। নিবন্ধিত আউটসোর্সিং প্রতিষ্ঠানের সরবরাহ করা জনবলের সেবা সন্তোষজনক না হলে নিয়োগকারি প্রতিষ্ঠানের অনুরোধে ব্যক্তিকে প্রতিস্থাপন করতে বাধ্য থাকবে। ব্যক্তির ক্ষেত্রেও একই নিয়ম প্রযোজ্য হবে। অন্যথায় চুক্তি বাতিল বলে গণ্য হবে। সেই ক্ষেত্রে উভয়পক্ষ দেনা পাওয়ানা পরিশোধ করতে হবে। সেবা ক্রয়কারী সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বাজেটে ভৌত সেবা খাতে বরাদ্দ হতে আউটসোসিং সেবা ক্রয়ের প্রয়োজনীয় ব্যয় মেটানো যাবে।