গোপন দানে আল্লাহর ভালোবাসা পাওয়া যায়

  • মাহফুজ আবেদ, অতিথি লেখক, ইসলাম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

বিশিষ্ট সাহা্বি হজরত আবু হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কিয়ামতের দিন আল্লাহতায়ালা বলবেন, ‘হে আদম সন্তান! আমি অসুস্থ ছিলাম কিন্তু তুমি আমাকে দেখতে আসনি। সে বলবে, আমি আপনাকে কিভাবে দেখতে আসতে পারি? আপনিতো সারা বিশ্বজগতের প্রতিপালক! তিনি বলবেন, তুমি তো জেনে ছিলে যে, আমার অমুক বান্দা অসুস্থ ছিল, তবুও তুমি তাকে দেখতে যাওনি। তুমি কি জানতে না যে, যদি তুমি তাকে দেখতে যেতে, তবে তুমি আমাকে তার নিকট পেতে? (তিনি বলবেন) হে আদম সন্তান! আমি তোমার কাছে খাদ্য চেয়েছিলাম, কিন্তু তুমি আমাকে খাদ্য দাওনি। সে বলবে, হে আমার প্রতিপালক! আপনিতো বিশ্বজাহানের প্রভু! আমি আপনাকে কিভাবে খাওয়াতে পারি? তিনি বলবেন, তুমিতো জেনে ছিলে যে, আমার অমুক বান্দা তোমার কাছে খাদ্য চেয়েছিল, কিন্তু তুমি তাকে খাদ্য দাওনি। তুমি কি জানতে না যে, তুমি যদি তাকে খাবার খাওয়াতে তাহলে আমার কাছ থেকে তা পেয়ে যেতে। (তিনি বলবেন) হে আদম সন্তান! আমি তোমার কাছে পানি চেয়েছিলাম অথচ তুমি আমাকে পানি দাওনি। সে বলবে, আপনি হলেন সমগ্র বিশ্বজগতের প্রতিপালক, আপনাকে আমি কিভাবে পান করাতাম? তিনি বলবেন, তুমি তো জেনে ছিলে যে, আমার অমুক বান্দা তোমার কাছে পানি পান করতে চেয়েছিল, কিন্তু তুমি তাকে পানি দাওনি। তুমি কি জানতে না যে, যদি তুমি তাকে পান করাতে তবে তার পুরস্কার আমার নিকট পেতে।’ -সহিহ মুসলিম

আলোচ্য হাদিসে ‘খেদমতে খালক’ তথা সৃষ্টির সেবার প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। হাদিসের মূল কথা হলো- আল্লাহর রহমত, বরকত ও সওয়াব হাসিলের সবচেয়ে সহজ এবং সংক্ষিপ্ত পথটি হচ্ছে- আল্লাহর সৃষ্টির প্রতি বিশেষত মানুষের প্রতি সহযোগিতা, কল্যাণ ও উপকারের হাত বাড়িয়ে দেওয়া।

বিজ্ঞাপন

পার্থিব জীবনে আমরা জিকির, নামাজ, কোরআন তেলাওয়াত, রোজা বা তাহাজ্জুদ ইত্যাদি ইবাদতের সওয়াব সম্পর্কে যতটুকু সচেতন, সৃষ্টির সেবার ফজিলত ও গুরুত্ব সম্পর্কে ঠিক ততটাই যেন বেখবর। অথচ সৃষ্টির সেবার গুরুত্ব অপরিসীম। বলা হয়েছে, আল্লাহকে ভালোবাসতে হলে অবশ্যই তার সৃষ্টিকে ভালোবাসতে হবে এবং তাদের সেবা ও সাহায্যে এগিয়ে আসতে হবে।

আল্লাহর রাসূল (সা.) অন্য এক হাদিসে বলেছেন, ‘প্রত্যেক মুসলিমের দায়িত্ব মানুষের কল্যাণে ব্যয় করা।’ –সহিহ বোখারি

বিজ্ঞাপন

মানবকল্যাণের গুরুত্ব সম্পর্কে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যতক্ষণ একজন মানুষ অন্য কোনো মানুষের কল্যাণে নিয়োজিত থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহতায়ালা তার কল্যাণে রত থাকবেন।’ -সহিহ মুসলিম

আলোচ্য হাদিসে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের কথা বলা হয়েছে। বিষয়গুলো হলো-
১. অসুস্থ ব্যক্তির সেবা করা ও খোঁজখবর নেওয়া,
২. ক্ষুধার্ত ব্যক্তিকে খাদ্য দান করা ও
৩. পিপাসিত ব্যক্তিকে পানি পান করানো।

হাদিসে বর্ণিত বিষয়গুলোর গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে আলোচনা করার ক্ষেত্রে ইসলামী স্কলাররা বলেছেন-
প্রথমত: অসুস্থ মানুষের প্রতি সমাজের অন্য মানুষের দায়িত্ব হলো- তাদের সেবা করা, দেখতে যাওয়া, চিকিৎসা গ্রহণে উৎসাহ প্রদান, মানসিক আস্থা তৈরি করা এবং দোয়া করা। হাদিসের ভাষ্যমতে, কাউকে অসুস্থ জানার পরও তাকে দেখতে না গেলে কিয়ামতের দিন আল্লাহর সামনে জবাবদিহি করতে হবে।

হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যদি কেউ কোনো অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যায়, তবে সে যেন ফিরে না আসা পর্যন্ত অবিরত জান্নাতের বাগানে ফল রোপণ করতে থাকে।’ -সহিহ মুসলিম

দ্বিতীয়ত: মানবসেবার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো- ক্ষুধার্ত ব্যক্তিকে খাদ্য দান করা। আল্লাহর একজন অভাবী অভুক্ত বান্দাকে ক্ষুধার্ত রেখে নিজে পেটপুরে খাবার গ্রহণ করলে কিয়ামতের দিন আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে। প্রকৃত মুমিন হতে হলে এবং আল্লাহর প্রিয় হতে চাইলে ক্ষুধার্ত ব্যক্তিকে খাওয়ানোর কোনো বিকল্প নেই।

হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি তার প্রতিবেশীকে অভুক্ত রেখে তৃপ্তি সহকারে আহার করে সে মুমিন নয়।’ -হাকিম ও তাহাবি

তৃতীয়ত: পিপাসিত ব্যক্তিকে পানি পান করানো আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের অন্যতম মাধ্যম। এটি একটি মানবকল্যাণমুখী কর্ম। হাদিসের ভাষায় একে উত্তম সদকা হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে।

হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘সবচেয়ে উত্তম সদকা হলো- মানুষকে পানি পান করানো।’ –সুনানে আবু দাউদ

উপরের তিনটি কর্মই মানবকল্যাণমুখী কর্ম। ইসলামের প্রচার ও প্রসারে এ ধরনের কাজগুলোর প্রতি গুরুত্বারোপ করতে হবে। খ্রিস্টান মিশনারিগণ এমন সেবামূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে তাদের ধর্মের প্রসার ঘটাচ্ছে। মানবসেবার মাধ্যমে তারা ধর্মান্তকরণ করছে। অতএব আমাদের দাওয়াতি কাজের সম্প্রসারণ ঘটাতে হলে এই জাতীয় কল্যাণমুখী কর্মের কোনো বিকল্প নাই।

আল্লাহর কাছেও এর গুরুত্ব অপরিসীম। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, মানবকল্যাণমুখী কর্ম বিপদাপদ ও অপমৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করে। গোপন দান আল্লাহর ক্রোধ নির্বাপিত করে। রক্তসম্পর্কীয় আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করা আয়ু বৃদ্ধি করে।