বোবাবাড়িতে ১১ বাকপ্রতিবন্ধী, ভাতা পান ১ জন
ময়মনসিংহের গৌরীপুরে এক বাড়িতেই ১১ জন বাকপ্রতিবন্ধীর সন্ধান মিলেছে। ওই বাড়িটির অবস্থান উপজেলার সহনাটি ইউনিয়নের পলটিপাড়া গ্রামে। বাকপ্রতিবন্ধীদের কারণে গ্রামের ওই বাড়িটি স্থানীয়দের কাছে বোবাবাড়ি নামে পরিচিত।
তবে বাড়ির ১১ জন বাকপ্রতিবন্ধীর মধ্যে সরকারি ভাতা পান মাত্র ১ জন। বাকিরা সরকারি সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত।
স্থানীয়রা জানান, বাকপ্রতিবন্ধীরা ভাষাহীন হওয়ায় নিজেদের সমস্যা কাউকে বলতে পারেন না। অপরদিকে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও তাদের সহযোগিতায় এগিয়ে আসেন না। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে একাধিকবার তাদের তথ্য সংগ্রহ ও ছবি তুলে নিলেও সরকারি কোনো ভাতা পাননি তারা।
শুক্রবার (১৯ জুলাই) বিকেলে পলটিপাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিবন্ধীদের ওই বাড়িতে নারী-পুরুষ-শিশু মিলে ৩০ জন বসবাস করে। তাদের ঘরবাড়িগুলো জরাজীর্ণ। বাড়িতে শৌচাগার নেই, নেই নলকূপ।
প্রতিবেশী ইসলাম উদ্দিন ও তার স্ত্রী জেসমিন নাহার দোভাষীর দায়িত্ব পালন করে বাকপ্রতিবন্ধীদের সঙ্গে ইশারা-ইঙ্গিতে কথা বলে তাদের সুখ-দুঃখের কথা তুলে ধরেন বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমের এই প্রতিবেদকের কাছে।
জেসমিন নাহার জানান, এই বাড়ির তিন বাকপ্রতিবন্ধী মেয়ে হলেন- জাহের বানু (৪৫), চান বানু (৬৫) তাহের বানু (৫৫)। জাহের বানু নিঃসন্তান। চান বানুর দুই ছেলে আবদুল মালেক (৩৩) ও আবদুল খালেক (৩৬)। তারা বাকপ্রতিবন্ধী। তাহের বানুর এক সন্তান। সে সুস্থ ও স্বাভাবিক।
বাকপ্রতিবন্ধী এই নারীদের বিয়ে হলেও তারা বেশিদিন স্বামীর সংসার করতে পারেননি। শারীরিক সমস্যার কারণে স্বামীরা তাদের বাবার বাড়িতে রেখে গেছেন। ফলে তারা ভিক্ষা করে জীবিকা নির্বাহ করেন।
এদিকে চান বানুর ছেলে আবদুল মালেকের তিন সন্তানের মধ্যে আবার দুজনই বাকপ্রতিবন্ধী। আরেক ছেলে আবদুল খালেকের তিন সন্তানের মধ্যে একজন বাকপ্রতিবন্ধী।
অপরদিকে চানবানুর ভাই মো. মেরাজ মিয়া (৬৫) ও আবদুস সাত্তার (৫৫)। তারা দুজনও বাকপ্রতিবন্ধী। আবদুস সাত্তারের এক সন্তানও বাকপ্রতিবন্ধী।
উপরে বর্ণিত বাড়ির ১১ জন বাকপ্রতিবন্ধীর মধ্যে কেবল মাত্র আবদুস সাত্তার সরকার প্রতিবন্ধী ভাতা পাচ্ছেন। তবে সাত্তারের এক বছরের ভাতা সহনাটি ইউনিয়নের একজন জনপ্রতিনিধি আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ তুলেন তার স্ত্রী রুমেলা খাতুন।
তিনি বলেন, ‘ভাতা হওয়ার পর কিছু টাকা পাইছিলাম। বাকি টাকা জনপ্রতিনিধি রাইখ্যা দিছে।’
প্রতিবেশী ইসলাম উদ্দিন জানান, বাকপ্রতিবন্ধী নারীরা ভিক্ষাবৃত্তি ও পুরুষরা পরের জমিতে কাজ করে তাদের সংসার চালায়। কিন্তু কানে না শোনায় সহজে কেউ তাদের কাজে নিতে চায় না।
বাকপ্রতিবন্ধী মেরাজ মিয়ার স্ত্রী সাহিদা আক্তার বলেন, ‘আমার বাড়িতে কল নাই, ভালা ল্যাট্রিন নাই। ঘর-দুয়ার ভাইঙ্গা পড়তাছে। কিন্তু সরকারের লোকজন কেউ খবর লয় না। জামাইডা প্রতিবন্ধী, কতো কষ্টে যে সংসার চালাই কেউ বুঝে না।’
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফারহানা করিম বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, ‘বাকপ্রতিবন্ধীদের বিষয়টি জানতে পেরে প্রত্যেক পরিবারে একটি করে ভিজিডির কার্ড দেয়ার জন্য ইউপি চেয়ারম্যানকে বলেছি। আর নির্ধারিত বয়স না হলে বয়স্ক ভাতা দেয়া সম্ভব হয় না। বাকপ্রতিবন্ধীদের মধ্যে যাদের বয়স হয়েছে তারা যেন ভাতা পায় সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’