মায়ের বনাম বৌয়ের হাতের রান্না

  • ইকরাম কবীর
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

মায়ের হাতের রান্না ও বৌয়ের হাতের রান্না নিয়ে অনেক কথা মানুষের মুখে মুখে আছে। প্রসঙ্গটি উঠলো এক পুরুষের আড্ডায়। বন্ধুরা এক সাথে বসেছিলাম, তখনই। রেস্তোরাঁয় খাচ্ছিলাম আর গল্প করছিলাম। আমাদের একজনের সামনে রাখা খাবারের সূত্র ধরে মায়ের হাতের রান্না খাওয়ার কথা তার মনে জাগলো। স্মৃতিতে ভরপুর হয়ে গেল মন। আহারে, কি যে মজা ছিল মায়ের রান্না খাবারগুলো! সেই রান্না আর কোথাও পেলাম না। মায়ের রান্না কারো সাথে মেলে না, ভোলা যায় না।

মুখরোচক প্রসঙ্গ; এ নিয়ে কিছুক্ষণ আলাপ করতেই হয়।

বিজ্ঞাপন

বাঙালি ছেলেরা মা ছাড়া “অন্য আর কারো হাতে” রান্না বলতেই বোঝান বৌয়ের হাতের রান্না। মায়ের রন্ধনশৈলীর কথা মনে এলেই বাঙালি ছেলেরা বৌয়ের সঙ্গে তুলনা করা শুরু করেন। বৌ হচ্ছে আমাদের একজন চিরন্তন রাধুনি যাকে আমরা পাই বিয়ে করার সূত্রে। তারা সারাদিনমান – আপিস-আদালতে থাকলেও – আমরা স্বামীরা কী খাবো তা নিয়ে চিন্তায় বিভোর থাকেন। কিন্তু মায়ের চেয়ে কখনোই বৌয়ের রান্না মজাদার হয় না। মা’ই সবার চেয়ে ভাল রান্না করে গেছেন। আর কেউ পারছে না।

আমি বিষয়টিকে একটু অন্যভাবে দেখতে শিখেছি।

বিজ্ঞাপন

শিশুবেলায় মাকে ছাড়া আর কাউকেই চিনতাম না। ধীরে ধীরে বিশ্বকে চিনছিলাম তার মাধ্যমেই। মায়ের তৈরি খাবারই আমার কাছে সর্বপ্রথম এবং সর্বনতুন ছিল। তার হাতে রান্না করা খাবারই আমার প্রথম খাবার। এমন চলেছে বহু বছর। মা যাই রেঁধেছেন তাই আমার কাছে নতুন ও প্রথম। মা হচ্ছেন সবচেয়ে আস্থার আশ্রয়। তার মত আর কেউ নেই। তার মত করে ভালবাসা আর কেউ দেন নি; দেবেনও না। তার কোন দাবী ছিল না, চাওয়াও ছিল না। সেভাবেই মায়ের স্মৃতি আমাদের কাছে সবচেয়ে মধুর স্মৃতি হয়ে দাঁড়ায়। তার আশেপাশে আর কেউ থাকেন না।

আর আমার যখন পঞ্চাশ বছর পার হয়ে যায়, তখন তো আর কথাই নেই। মায়ের স্মৃতিই মুখ্য।

বৌ যে বেলায় আমাদের জীবনে প্রবেশ করেন তখন আমরা অনেক অভিজ্ঞতাসম্পন্ন; অনেক দেখেছি, অনেকের হাতের রান্না খেয়েছি। বৌয়ের হাতের রান্না তখন হয়ে যায় ঐ হাজারো হাতের রান্নার মত; মায়ের মত নয়। এটি এক ধরনের মানসিক অবস্থা। এভাবেই আমরা বৌয়ের রান্নার প্রতি মনযোগ হারিয়ে ফেলি। ওদিকে কিন্তু, ঠিক সে সময়েই, আমার বৌয়ের সন্তানের কাছে কিন্তু তার মায়ের রান্নাই শ্রেষ্ঠ হয়ে উঠছে।

যখনই রান্নার বিষয়টি আসে, বৌয়ের রাঁধা খাদ্য আমাদের কাছে হাজারো খাদ্যের মাঝে হারিয়ে যায়; প্রতিদিনের ব্যস্ততার মাঝে খেতে খেতে তাঁর রান্না যে কতটা সুস্বাদু তা ভাবতে ভুলে যাই। এটিও একটি মানসিক অবস্থা। 

আমি এই দুজনের রান্নার স্বাদ খুব ভাল করে বিশ্লেষণ করেছি। কিছু রান্না আমার মা খুবই ভাল রাঁধতেন, আবার কিছু তিনি খুব ভাল পারতেন না। ওদিকে আবার, কিছু খাদ্য আছে আমার স্ত্রী খুবই ভাল রাঁধেন এবং কিছু কিছু আছে যেথায় তিনি খুব পারদর্শী নন। ব্যাপারটি একটু মনোযোগের। মায়ের হাতের রান্না আমাদের ভাল লাগে কারণ তিনি এখন আর রাঁধেন না; আমরা তাঁর অনুপস্থিতি বোধ করি। আমাদের সত্তুর বছর হলে যখন আমার বৌ আর হেঁসেল ঘরে যাবেন না, আমার মনে হয় তখনই আমাদের কাছে তাঁর রান্না খাদ্যও স্মৃতি হয়ে থাকবে। এটিও একটি মানসিক পরিস্থিতি।

বাবার হাতের রান্নার কথা আরেকদিন জানাবো…

ইকরাম কবীর: গল্পকার ও কলামিস্ট