ড. মাকসুদুল আলম : সোনালি আঁশের রঙিন পথযাত্রার দ্রষ্টা

  • দীপ্তি হক, কন্ট্রিবিউটর
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ড. মাকসুদুল আলম (১৯৫৪-২০১৪)

ড. মাকসুদুল আলম (১৯৫৪-২০১৪)

১৬ জুন ২০১০ তারিখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংবাদসম্মেলন করে পাটের জিনোম সিকোয়েন্স আবিষ্কারের ঘোষণা দেন। যার একান্ত প্রচেষ্টায় এবং নেতৃত্বে এই আবিষ্কার সম্ভব হয়, তিনি ড. মাকসুদুল আলম।

বাংলাদেশেই প্রথম পাটের জিনোম সিকোয়েন্স আবিষ্কার—বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের জন্য এটা এক বিরাট প্রাপ্তি।

বিজ্ঞাপন

পাটের জিনোম সিকোয়েন্স হলো তার জেনেটিক বৈশিষ্ট্যের নীলনকশা। এর মাধ্যমে জিনোমের সিকোয়েন্স জানা যায়। ভেতরগত পাঠোদ্ধার করা যায় বলে এর পরিবর্তন করা সম্ভব হয়, যে কোনো উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব হয়—যা করতে সক্ষম হয়েছিলেন বাংলাদেশী বিজ্ঞানী মাকসুদুল আলম।

ড. মাকসুদুল আলমের জন্ম ১৯৫৪ সালে, ফরিদপুরে। বাবা দলিলউদ্দিন আহমেদ ছিলেন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ইপিআর কর্মকর্তা, মা লিরিয়ান আহমেদ ছিলেন শিক্ষিকা। দলিলউদ্দিন আহমেদ স্বাধীনতা যুদ্ধে মারা গেলে মা লিরিয়ান শিক্ষকতা করেই সন্তানদের বড় করেন।

বিজ্ঞাপন

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2018/Dec/20/1545296564828.jpg

মাকসুদুল আলম মাধ্যমিক পাশ করেন গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাইস্কুল থেকে আর ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক। স্বাধীনতার পর চলে যান রাশিয়ায়। মস্কো রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন অণুপ্রাণবিজ্ঞানে।

১৯৮২ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর ১৯৮৭ সালে জার্মানির এক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাণরসায়নে পুনরায় পিএইচডি সম্পন্ন করেন।

যার দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন, তিনি ভ্লাদিমির পেত্রোভিচ মুলাচেভ। প্রাণরসায়নের নানা শাখায় পেত্রোভিচের অবদান রয়েছে। ডিয়েটার ওয়স্টারহেল্ড ও জেরাল্ড হেজেলবাউয়ের-এর সঙ্গে তিনি কাজ করার সুযোগ পান জার্মানিতে। এদেরও প্রাণরসায়নে অবদান রয়েছে।

২০০০ সালে তিনি তার সহকর্মীসহ আবিষ্কার করেন প্রাচীন জীবাণুতে মায়োগ্লোবিন নামের প্রোটিন। মাকসুদুল মূলত এই কাজের মাধ্যমে মানুষের নজরে আসেন।

প্রথমে তিনি ব্যক্তিগত উদ্যোগেই পাট নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। ২০০৯ সালে বাংলাদেশ কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে তাকে দেশে এসে গবেষণা করার অনুরোধ করা হয়। ২০১০-এ কাজ শুরু করেন; সাফল্য আসে ওই বছরই।

তিনি শুধু পাটের জিনোম আবিষ্কার করেছেন তা না; পেঁপে, রাবার এবং ছত্রাকের জিনোমও আবিষ্কার করেন। পাটের জিনোম আবিষ্কারের মাধ্যমে তিনি আমাদের ‘সোনালি আঁশ’কে আবারও এক আশার প্রতীক হিসেবে ফিরিয়ে নিয়ে এসেছেন। বিশ্বজুড়ে পলিথিন ব্যবহার কমছে, মানুষ সচেতন হচ্ছে পরিবেশ নিয়ে। বিকল্প হিসেবে খুঁজছে সহজে পচনশীল, টেকসই পণ্য। যা পাট দিয়ে তৈরি সম্ভব। পাটকে বিভিন্নভাবে ব্যবহারের উপযোগী করে তোলা সম্ভব হচ্ছে জিনোম সিকোয়েন্স আবিষ্কারের ফলে।

২০০১ সাল থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত অধ্যাপক হিসেবে কাজ করেছেন হাওয়াই বিশ্ববিদ্যালয়ে। বাংলাদেশের জন্য বিশাল সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করা এই বিজ্ঞানী—সোনালি আঁশের রঙিন পথযাত্রার দ্রষ্টা ২০ ডিসেম্বর, ২০১৪ সালে যকৃতের জটিলতায় ভুগে যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াইয়ে কুইন্স মেডিকেল সেন্টারে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।