দরিদ্রতা জয় করে জেএসসিতে সফলতা

  • এসএম শহীদুল ইসলাম, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, সাতক্ষীরা, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

জেএসসিতে ভাল ফলাফল করা সুমাইয়া, ছবি: সংগৃহীত

জেএসসিতে ভাল ফলাফল করা সুমাইয়া, ছবি: সংগৃহীত

দারিদ্র্যকে জয় করে জেএসসি পরীক্ষায় সাফল্য ছিনিয়ে এনেছে সুমাইয়া। কোন দিন খেয়ে, কোন দিন না খেয়ে দিন কেটেছে তার। মা অন্যের বাড়িতে কাজ করে। তাই বাড়ির কাজও সামলাতে হয় সুমাইয়াকে। বাবা থেকেও নেই। মাকে ছেড়ে দিয়ে বাবা বিয়ে করেছে আরেকজনকে। সকালে ঘুম থেকে উঠে ঘর ঘোচাতেই বেলা যায় সুমাইয়ার।

স্কুলের সময় হলে যা জোটে তাই খেয়ে স্কুলে যায় সে। এমন দিন পার করে পরাশুনা চালিয়ে গেছেন সুমাইয়া। সদ্য প্রকাশিত জেএসসি পরীক্ষায় সুমাইয়া জিপিএ-৫ পেয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। অভাবের সাথে অবিরাম সংগ্রাম করেও থেমে থাকেনি সে। ছিনিয়ে এনেছে সাফল্য।

বিজ্ঞাপন

এ বিষয়ে খাদিজা বিনতে বাশার সুমাইয়া জানায়, খাতা, কলম, পোশাক পরিচ্ছদ ক্রয়ের টাকা নেই, ইচ্ছা থাকলেও প্রাইভেট পড়া সম্ভব হয়নি। বাবা থেকেও নেই। মা অন্যের বাড়ি ঝিয়ের কাজ করে। ঝিয়ের কাজ করে মা যা পায় এবং বিভিন্ন ব্যক্তির সাহায্যের যে টাকা হয় তা দিয়ে সংসার ও পড়া লেখার খরচ চালানো হয়। কোন দিন খাওয়া হয় আবার কোন দিন হয় না। জেএসসি পরীক্ষার ফরম ফিল-আপের টাকা ছিল না, অন্যের সাহায্যের টাকায় ফরম ফিল-আপ করেছিলাম। জিপিএ-৫ পেয়েছি। খুব খুশি হয়েছি। মাকেও খুশি করতে পেরে খুব ভাল লাগছে। সারা জীবন সকলের দোয়া ও আশীর্বাদে মায়ের মুখে হাসি দেখতে চাই। আগামীতেও এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে সেই হাসি ধরে রাখতে চাই। মা ছাড়া যে আপন কেউ নেই।

সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার নকিপুর গ্রামের আনোয়ারা বেগমের ছোট কন্যা খাদিজা বিনতে বাসার সুমাইয়া নকিপুর সরকারি এইচসি পাইলট মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে সদ্য প্রকাশিত জেএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছে। বাবা চলে যাওয়ার পর থেকে তার মা পরিবারের সকল দায় দায়িত্ব পালন করে আসছেন। এ কারণে এ ফলাফলের পেছনে মায়ের অবদান বেশি বলে জানান সুমাইয়া।

বিজ্ঞাপন

দুই বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে সে সকলের ছোট। ছোটবেলা থেকে সকল ক্লাসে ১ম হয়েছেন সুমাইয়া। ৫ম শ্রেণিতেও সে জিপিএ-৫ পেয়েছে। সুমাইয়ার মা জানায়, তার বাবার দেয়া সামান্য জায়গায় বসবাস করছেন। একমাত্র পুত্র টাকার অভাবে লেখাপড়া বন্ধ হয়েছে। বর্তমানে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরে দর্জি প্রশিক্ষণ নিচ্ছে এবং সেখান থেকে যে ভাতা পাচ্ছে সেটা দিয়ে মেয়ের পড়া লেখা ও পরিবারের খরচ চালানোর চেষ্টা করেন।

এ ছাড়া বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ব্যক্তি তাকে মেয়ের পড়ালেখার জন্য টাকা দিয়েছে সেটা মেয়ের জন্য খরচ করেছেন। সুমাইয়া জানায়, তার স্কুল শিক্ষকরা প্রাইভেট পড়ানোর টাকা চাইত না। পরীক্ষার ফিসও কম করে নিত। এজন্য শিক্ষকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। সে ভবিষ্যতে চিকিৎসক হতে চায়। সুমাইয়া বিজ্ঞান বিভাগ নিয়ে পড়তে চায়। সে সকলের আশীর্বাদ কামনা করে।