ইতিহাসের সাক্ষী কুষ্টিয়ার ঝাউদিয়া শাহী মসজিদ

  • এস এম জামাল,ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, কুষ্টিয়া, বার্তা২৪
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তা২৪

ছবি: বার্তা২৪

ইতিহাসের সাক্ষী প্রাচীন এক মসজিদের নাম ঝাউদিয়া শাহী মসজিদ। দেশের অন্যতম ঐতিহাসিক স্থাপত্য নিদর্শন এই মসজিদটি কুষ্টিয়া সদর উপজেলার ঝাউদিয়া গ্রামে অবস্থিত। কুষ্টিয়া শহর থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান এই মসজিদের।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jan/02/1546413930385.jpg

বিজ্ঞাপন

মসজিদটি ইট, পাথর, বালি ও চীনামাটির গাঁথুনি দিয়ে তৈরি। এর উপরিভাগে সুদৃশ্য পাঁচটি গম্বুজ ও ভেতরের প্রবেশ দরজায় দুটি মিনার রয়েছে। এটি অপূর্ব শৈল্পিক কারুকার্য সংবলিত।

তবে প্রতি শুক্রবার জুমার নামাজের আগে ও পরে এখানে লোক ধারণের জায়গা থাকে না। অনেকেই মানত করতে ছাগল, হাঁস, মুরগি নিয়ে এখানে উপস্থিত হন। মসজিদটিকে ঘিরে কিছু কুটির শিল্পের লোকজনও নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে।

বিজ্ঞাপন

স্থানীয় অনেকের মতে, বহু বছর আগে অলৌকিকভাবে মসজিদটি মাটি থেকে ফুঁড়ে ওঠে। মসজিদটি তৈরির কথা এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে এটি দেখতে আসেন অনেকে।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jan/02/1546413956033.jpg

আবার অনেকের দাবি, প্রায় ১ হাজার ১০০ বছর আগে ইরাক হতে ভারত, ভারত থেকে শাহ সুফি আদারি মিয়া ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া ও বাগেরহাট এলাকায় ইসলাম ধর্ম প্রচার করতে এসেছিলেন। সে সময় তিনি ঝাউদিয়া গ্রামে বসতি স্থাপন করেন। তিনিই মসজিদটি নির্মাণ করেছিলেন।

আদারি মিয়ার মত্যুর পর মসজিদ সংলগ্ন এলাকায় তাকে কবর দেওয়া হয়। তবে ওই স্থানে তার কোনো বংশধর নেই বলে স্থানীয়রা জানান। তার কবর রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রতিষ্ঠিত হয় একটি মাজার কমিটি।

মসজিদের প্রবেশদ্বারে লেখা আছে ‘এটির বড় পরিচয় মানুষের তৈরি এবং এটা প্রতিষ্ঠিত হয় মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের শাসনামলে’। কিন্তু ওই সময় কে নির্মাণ করেছে তার কোনো উল্লেখ নেই। স্থানীয় সচেতন ব্যক্তিরাও এর উৎপত্তি সম্পর্কে কিছু বলতে পারেননি।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jan/02/1546414142327.jpg

১৯৬৯ সালে এলাকার সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি হাসান চৌধুরী তৎকালীন সরকারের সঙ্গে একটি রেজি. চুক্তিনামা অনুযায়ী মসজিদটি প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের কাছে হস্তান্তর করেন।

চুক্তিনামা অনুযায়ী এই মসজিদের মোতোয়ালি (তত্ত্বাবধায়ক) হিসেবে থাকবে হাসান আলী চৌধুরী অথবা তারই বংশধর। বর্তমানে তার বংশধররাই মসজিদটি পরিচালনা করছেন। মসজিদটি পরিদর্শনে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে শত শত মানুষ ভিড় করেন।

সম্প্রতি কোনো এক শুক্রবারে জুমার নামাজের আগে সেখানে গিয়ে দেখা যায় অনেক মানুষের ভীড়। কেউবা মুরগী, খাসি হাতে নিয়ে এখানে সেখানে দৌঁড়াচ্ছেন। দুরদুরান্ত থেকে অনেকেই এসেছেন। তাদের অনেকেরই নানা ধরণের মানত রয়েছে।

মিরপুর উপজেলার মশান গ্রাম থেকে আগত কিরামত আলী জানান, তার নাতনীর মুখে ভাত অনুষ্ঠানে এসেছেন এখানে। তার নাতনী জন্মগ্রহনের আগেই মান্নত করেছিলেন, ভালোভাবে আমার নাতনী জন্মগ্রহণ করলে এই শাহী মসজিদের খাসি দেবেন। তাই প্রতিশ্রুতি রক্ষার্থে খাসি জবাই করে বাড়ী থেকেই রান্না করে আত্মীয়-স্বজন পরিবার পরিজন নিয়ে এখানে আসেন। শুধু কেরামত আলীই নয় তার মতো আরও অনেকেই মানত পুরন করতেই এখানে আসেন।

তবে এখানে আগত দর্শনার্থীদের জন্য তেমন সুযোগ-সুবিধা নেই, নেই থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা। ফলে এ স্থানটি দর্শনীয় হওয়া সত্ত্বেও এর সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছে। আবার মসজিদটি দীর্ঘদিন উন্নয়ন না হওয়ায় সৌন্দর্যও নষ্ট হতে বসেছে।