খুলনায় অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় পাখির চাষ

  • মানজারুল ইসলাম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

খুলনার একটি খামারে চাষকৃত ইমু পাখি, ছবি: বার্তা২৪

খুলনার একটি খামারে চাষকৃত ইমু পাখি, ছবি: বার্তা২৪

দূরদূরান্ত পার হয়ে অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় পাখি ইমু এখন দক্ষিণের নোনা ভূমিতে। খুলনায় বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় পাখি ইমু। যে কোন পরিবেশে চাষ যোগ্য, মৃত্যুহার কম ও উড্ডয়নে অক্ষম এ পাখির মাংসে চর্বির পরিমাণ কম থাকায় এ অঞ্চলের চাষিরা ইমু চাষের দিকে ঝুঁকছেন।

অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় পাখি ঈমু। এ পাখির বৈজ্ঞানিক নাম ড্রোমাইয়াস নোভাহোল্যান্ডিয়া। উড্ডয়নে অক্ষম এই পাখি আফ্রিকা থেকে এনে চাষ করা হচ্ছে বাংলাদেশে। তৃণভোজী এ পাখি যে কোন পরিবেশেই চাষ করা সম্ভব। প্রাণিজ আমিষের চাহিদা মেটাতে ও বিভিন্ন চিড়িয়াখানা ও পর্যটন কেন্দ্রে সৌন্দর্যবর্ধন চাহিদা রয়েছে এই পাখির।

বিজ্ঞাপন

খুলনার বটিয়াঘাটার ইমু চাষি মোঃ ইমরান হোসেন বার্তা২৪-কে বলেন, '২০১৭ সালে আমি প্রথম ইমু চাষ শুরু করি। ৪০০ গ্রামের একটি ইমুর বাচ্চা ১২ থেকে ১৪ মাস পরে ৬০ কেজির বেশি ওজন হয়। ১৮ মাসে ইমু বাচ্চা দেওয়া শুরু করে। একটি ইমু ১৮ থেকে ৩৫টি ডিম দিতে পারে। এক জোড়া ইমু’র বাচ্চা ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা কেনা হয়। ১২ থেকে ১৪ মাস পর জোড়া ৬০ থেকে ৭০ হাজার বিক্রি হয়। বিক্রি করা যায় এর মাংসও। এছাড়াও ডিম থেকে বাচ্চু ফুটিয়েও বিক্রি করা যায়।'

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jan/11/1547181593134.gif

বিজ্ঞাপন

বটিয়াঘাটা উপজেলা চেয়ারম্যান আশরাফুল ইসলাম খান জানান, তার খামারে ১৯০টি ইমু পাখি আছে। ইমু পাখি তৃণভোজী এরা ঘাস, শাক-সবজি খায়। পাশাপাশি ফিড খাওয়ানো হয় এদের বৃদ্ধির জন্য। এছাড়াও খাওয়ানো হয় লাইম স্টোন (পাথর কুচি) যা এদের হজম শক্তি বৃদ্ধি করে। সব থেকে বড় বিষয় হচ্ছে ইমু’র মৃতের হার টার্কি, ফার্মের মুরগীর থেকে কম।

ইমু’র প্রতি আকৃষ্ট হওয়ার মূল কারণ হিসেবে তিনি বলেন, 'এর মাংসে কোলেস্টেরলের পরিমাণ কম। ৯৮ ভাগ কোলেস্টোরল মুক্ত অর্থাৎ মাত্র ২ ভাগ কোলেস্টেরল রয়েছে এর মাংসে। অতএব এটি স্বাস্থ্য সচেতন মানুষদের পছন্দের তালিকায় থাকবে।'

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jan/11/1547181616233.gif

বটিয়াঘাটা উপজেলার প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ বঙ্কিম কুমার হালদার বলেন, 'এ অঞ্চলে ধীরে ধীরে ইমু পাখি চাষ জনপ্রিয়তা পাচ্ছে চাষিদের কাছে। ইতোমধ্যে বটিয়াঘাটা উপজেলায় তিনটি ছোটবড় খামার গড়ে উঠেছে। এর মধ্যে সব থেকে বড় খামার উপজেলা চেয়ারম্যান আশরাফুল ইসলামের। এছাড়াও রূপসা নদীর পাড়ে ইমু চাষ করা হচ্ছে। আমরাও চাষিদের এ পাখি চাষে উৎসাহিত করছি কারণ এটির মৃত্যুহার অনেক কম। এবং এর মাংসে কোলেস্টেরলের পরিমাণ কম।'

প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, মানব শরীরের প্রাণিজ আমিষের চাহিদা মেটাতে ভূমিকা রাখবে ইমু পাখি। ইমু’র মাংসে কোলেস্টেরলের পরিমাণ খুবই কম। ইমু পাখির মৃত্যুহার কম হওয়ায় চাষিরাও লাভবান হবে। এছাড়াও এ পাখির চাহিদা রয়েছে দেশের বিভিন্ন চিড়িয়াখানা ও পর্যটন কেন্দ্রেও। ইমু পাখি গড়ে ২৫ বছর পর্যন্ত বাঁচে। বছর দেড়েক বয়স হলেই এ পাখি ডিম দিতে শুরু করে। এরা সাধারণত শীতকালে ডিম পাড়ে। গড়ে ২৫টি করে ডিম পাড়ে। প্রতিটি ডিমের দাম প্রায় ১২০০ টাকা। ডিম দেওয়ার আগে পর্যন্ত ইমুর মাংস প্রতি কেজি ৮০০ থেকে হাজার টাকা দামে বিক্রি হয়। তবে ডিম পাড়া শুরু করলে মাংসের দাম ও চাহিদা কমে যায়। ইমুর চামড়া থেকে ব্যাগ তৈরি হয়। হাড়ের গুঁড়ো থেকে ওষুধ, নখ ও পালক থেকে সাজগোজের সামগ্রী এবং মল থেকে মাছের খাবার তৈরি হয়। ইমু'র চর্বি থেকে তৈরি তেলও বহুমূল্য।