২৬০ বছরের ঐতিহ্যবাহী 'হুম গুটি' খেলা
বাংলা পৌষ মাসের শেষ দিন। এদিনটিকে ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলায় আঞ্চলিক ভাষায় বলা হয় ‘পুহুরা’। প্রতিবছর এই দিনে একই স্থান ও সময়ে আড়াই শতাধিক বছর ধরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে একটি খেলা। যার নাম 'হুম গুটি' খেলা।
পিতলের মোড়কে তৈরি ৪০ কেজি ওজনের একটি বল উন্মুক্তভাবে ছেড়ে দেয়া হলে বলটি নিয়ে হাজারো মানুষের মাঝে শুরু হয় কাড়াকাড়ি। বলটিকেই বলা হয় গুটি। গুটিটি ‘গুম’ না হওয়া পর্যন্ত চলে এ খেলা।
রোববার (১৩ জানুয়ারি) বিকেলে উপজেলা সদর থেকে ৫ কিলোমিটার উত্তরে লক্ষ্মীপুর ও দশমাইলের মাঝামাঝি বড়ই আটা নামক স্থানে পতিত ধানের জমিতে শুরু হয় এ খেলা। ২৬০ তম হুম গুটি খেলার উদ্বোধন করেন ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক এম এ কদ্দুছ।
হুম গুটি খেলায় মুক্তাগাছা, ত্রিশাল, ময়মনসিংহ সদর ও ফুলবাড়িয়া উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে দল বেঁধে হাজার হাজার খেলোয়াড় ও উৎসুক জনতা আসে খেলাটি দেখতে।
জানা যায়, আড়াইশ বছর আগে মুক্তাগাছার জমিদার রাজা শশিকান্তের সঙ্গে ত্রিশাল উপজেলার বৈলরের হেমচন্দ্র রায় জমিদারের জমির পরিমাপ নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি হয়। জমিদার আমলের শুরু থেকেই তালুকের প্রতি কাঠা জমির পরিমাপ ছিল ১০ শতাংশে, পরগনার প্রতি কাঠা জমির পরিমাপ ছিল সাড়ে ৬ শতাংশে। একই জমিদারের ভূখণ্ডে দুই নীতির বিরুদ্ধে গড়ে ওঠে প্রতিবাদী আন্দোলন।
জমির পরিমাপ নিয়ে সৃষ্ট বিরোধ মীমাংসা কল্পে লক্ষ্মীপুর গ্রামের বড়ই আটা নামক স্থানে ‘তালুক-পরগনার সীমানায়’ এ গুটি খেলার আয়োজন করা হয়। গুটি খেলার শর্ত ছিল গুটি গুমকারী এলাকাকে ‘তালুক’ এবং পরাজিত অংশের নাম হবে ‘পরগনা’।
জমিদার আমলের সেই গুটি খেলায় মুক্তাগাছা জমিদারের প্রজারা বিজয়ী হয়। এভাবেই তালুক পরগনার সীমান্তের জিরো পয়েন্টে ব্রিটিশ আমলে জমিদারী এই খেলার গোড়াপত্তন।
জমিদার ও জমিদার প্রথা না থাকলেও সেই হুম গুটি খেলাটির ঐতিহ্য ধরে রেখেছে এলাকাবাসী। এ খেলায় কোনো রেফারি থাকে না। বিকেল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলে খেলা। কখনো দুই-তিনদিন পর্যন্ত খেলা চলার রেকর্ড আছে। একেক এলাকার একেকটি নিশানা থাকে। ওই নিশানা দেখে বোঝা যায় কারা কোন পক্ষের লোক। ‘গুটি’ কোন দিকে যাচ্ছে তা মূলত চিহ্নিত করা হয় নিশানা দেখেই। নিজেদের দখলে নিতে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করা হয় খেলায়। এভাবে গুটি ‘গুম’ না হওয়া পর্যন্ত চলে খেলা।
হুম গুটি স্মৃতি সংসদের সভাপতি আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, 'জমিদার আমল থেকে হুম গুটি খেলা চলে আসছে। জমিদার আমলের পর থেকে আমার পূর্ব পুরুষরা ঐতিহ্যবাহী খেলাটির আয়োজন করে আসছে। তারই ধারাবাহিকতায় এ আয়োজন।'