সমস্যায় জর্জরিত শুঁটকি পল্লী

  • ইমরান হোসেন, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বরগুনা, বার্তা২৪
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তা২৪

ছবি: বার্তা২৪

বিশুদ্ধ পানির সংকট ও আবাসন ব্যবস্থা না থাকায় দুর্বিসহ দিন কাটাচ্ছেন বরগুনার আশারচড় ও লালদিয়ার চড়ের শুঁটকি পল্লীর জেলেরা।

জেলেরা জানান, নলকূপ না থাকায় সাগরের পানি খেয়ে অনেক জেলেই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। আর তীব্র শীতে বালির বিছানায় রাত পার করেও ঠাণ্ডা জনিত রোগের শিকার হচ্ছেন জেলেরা। তবে নানান সমস্যার সাথে যুদ্ধ করেও শুঁটকির জন্য কাঙ্ক্ষিত মাছ পাচ্ছেনা তারা।

বিজ্ঞাপন

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jan/16/1547635379317.jpg

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বরগুনার তালতলী উপজেলার সাগড় মোহনায় আশারচর ও পাথরঘাটা উপজেলার লালদিয়ারচর। এই দুই চরে প্রতিবছর শীত মৌসুমে দেশের উত্তর অঞ্চলের প্রায় ৭টি জেলা থেকে পরিবারসহ জেলেরা আসেন শুঁটকির ব্যবসা করতে। সাগর ও নদীর বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ক্রয় করে প্রাকৃতিক উপায়ে শুঁটকি তৈরি করেন তারা। মৌসুম শেষে নিজ নিজ জেলায় চলে যায় তারা, আর এক মৌসুমে যে আয় হয় তা দিয়েই চলে বছরের বাকি সময়গুলো।

বিজ্ঞাপন

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jan/16/1547635393861.jpg

শুঁটকি পল্লীর একাধিক জেলেদের সাথে কথা বলে জানা যায়, পুরো মৌসুম জুড়েই তাদের সমস্যার শেষ নেই। আশে-পাশে নেই কোন নলকূপ। তাই সাগরের পানি পান করে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। আর থাকার জন্য হোগল পাতার ছোট ছোট ঘড় তুলে বালির বিছানায় থাকছেন তারা। ফলে ঠাণ্ডা জনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে পুরো মৌসুমে অসুস্থ শরীর নিয়েই শুঁটকি করছেন তারা।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jan/16/1547635410351.jpg

পল্লীর জেলে মাইনুল ইসলামের (৪৮) সাথে কথা বলে জানা যায়, দুই সন্তান ও স্ত্রী নিয়ে দুই মাস আগে প্রতিবেশীদের দেখাদেখি দিনাজপুর থেকে শুঁটকি পল্লীতে এসেছেন তিনি। তবে আসার পর প্রথমেই দেখলেন জনশূন্য একটি চড় এটি। আশে পাশে নেই কোন বসতঘড়, নেই নলকূপ, নেই কোন পণ্য সামগ্রী কেনার দোকান। সমস্যার যেন শেষ নেই। তিনি আরও বলেন, শুঁটকির ব্যবসায় সরকারও লাভবান হচ্ছে। তবে কোন নজরদাড়ি নেই এখানে। স্থানীয় জেলেরা মাত্রাতিরিক্ত দামে বিক্রি করছেন মাছ, তাই প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন তিনি।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jan/16/1547635426288.jpg

শুঁটকি পল্লীর দিনমজুর কহিনুর বেগম (৪০) বলেন, রোজগারের আশায় লালমনিরহাট থেকে এ পল্লীতে এসেছেন তার স্বামী ও আট বছরের শিশু মারিয়া। তবে আশার পর থেকেই একের পর এক রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন তারা।

শুঁটকি পল্লীর জেলে দেবাশীষ গোলদার জানান, ধার-দেনা ও দাদন নিয়ে ১ লক্ষ টাকা নিয়ে এই চরে এসেছেন তিনি। তবে এই বছর এখনো আশানুরূপ মাছ আসছেনা পল্লীতে। দুই মাসে ৪০ হাজার টাকার মাছ কিনতে পেরেছেন তিনি। মাছের পরিমাণ কম থাকায় দামও বেড়েছে ব্যাপক। আশানুরূপ মাছ না আসায় মাছ কিনতে পারছেন না তারা। তাই এখন ব্যবসার মূলধন থেকে বাজার খরচ চালাতে হচ্ছে তার। মৌসুম শেষের দিকে তাই ঋণের বোঝা ও দাদনের জ্বালায় তাদের অতিষ্ঠ করে তুলছে প্রতিনিয়ত।

তবে অপার সম্ভাবনার শুঁটকি পল্লী নিয়ে বরগুনা জেলা প্রশাসক শোনালেন আশার কথা। তিনি বলেন, শুঁটকি পল্লীর জেলে ও ব্যবসায়ীদের ব্যাপারে খোঁজ খবর নিয়েছেন তিনি। এসব সমস্যার সমাধান করা কঠিন কিছু নয়। অতিদ্রুত জেলেদের সকল সমস্যার সমাধান করা হবে।

সাগর উপকূলের এ দুটি শুঁটকি পল্লীতে প্রায় এক হাজার পরিবার শুঁটকির ব্যবসা করছেন। এ পল্লীতে খাবার শুঁটকি, পোল্ট্রি ও মাছের খাবারের জন্য শুঁটকি তৈরি করা হয়।