রাতজাগা চালক ক্ষুব্ধ হতেই পারেন

  • সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, ঢাকা, বার্তা ২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

ভোর পাঁচটা। খিলক্ষেতে তখন দশ-পনেরটি সিএনজি চালিত অটোরিকশা দাঁড়ানো। নৈশকোচ থামতে দেখে দূর থেকে আরও বেশকিছু সিএনজি এসে ঘিরে ধরে।

কাছের ভেড়ার জন্য সিএনজি চালকদের মধ্যে প্রতিযোগিতা বেশ লক্ষণীয়। খামারে হাসের ঝাঁকে খাবার দিতে গেলে যেভাবে ঘিরে ধরে তেমনি অবস্থা। প্রত্যেকের জিজ্ঞাসা কোথায় যেতে চাই। মিরপুর বলতেই ফরফর করে ভাড়া বলতে থাকলেন সিএনজি চালকরা।

বিজ্ঞাপন

আমি উবারে যাবো বলতেই একজন বয়স্ক গোছের লোক বললেন, চলেন আমিই নিয়ে যাই। ভাড়া ২০০ টাকা দিলেই চলবে। উবারের চেয়ে কমে হবে। মোবাইলের স্কিনে চোখ রেখে গাড়ির তালাশ করতে করতে বিনীতভাবে জানালাম ভাই আমি সিএনজিতে যাবো না, উবারে যাবো।

কিন্তু পাশ থেকে একজন সিএনজি চালক যেনো তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠলেন। উবার কি আপনাকে ফ্রি নিয়ে যাবে। তার ক্ষেপে যাওয়ার কারণ বুঝতে খুব একটা বেগ পেতে হলো না। তাই শান্তভাবেই জবাব দিলাম, উবার ফ্রি নিক আর বেশি নিক তাতে আপনার কি। আমি সিএনজিতে যাচ্ছি না। সকালের ঠাণ্ডা বাতাস আর এক সময়ে সিএনজির বেপরোয়া আচরণ আমাকে সিদ্ধান্তে অনড় থাকতে প্রলুব্ধ করছিল।

বিজ্ঞাপন

মিনিট পাঁচেকের মধ্যে গাড়ি এসে হাজির হলে রওয়ানা দিলাম। তখনও দেখলাম অনেক সিএনজি যাত্রীর অপেক্ষায় বসা। তখন ভাবলাম এইতো সেদিনের কথা। যখন সিএনজি ওয়ালাকে ভাড়া জিজ্ঞেস করলে হ্যান্ডেলে পা তুলে উল্টো দিকে মুখ করে থাকতো। আগে গন্তব্য পছন্দ তার পর দরদাম। দামও হাঁকতেন আকাশ চুম্বি। দরাদরি করতে গেলে তাদের সাড়া পাওয়া যেতো না। বলতো না পোষালে অন্য সিএনজি নেন।

২০১১ সালের একটি ঘটনা আজও মনের মধ্যে খচখচ করে। সেদিনও এ রকম ভোর বেলায় ছিলো। শ্যামলী থেকে মগবাজার দিলু রোডে যাওয়ার জন্য অনেক বলে কয়ে ৩’শ টাকায় রফা করেছিলাম। সিএনজি থেকে নামার সময় মিটারে দেখলাম মাত্র ৫৬ টাকা উঠেছে। মনে মনে অনেক অভিশাপ দিয়ে ভাড়া পরিশোধ করেছিলাম। তখন ভাবতাম এর থেকে পরিত্রাণের বুঝি কোনই পথ নেই।

একই রকম আচরণ ছিলো ট্যাক্সি ক্যাবের। তারাও কিন্তু হারিয়ে গেছে ডিজিটাল বাংলাদেশের ধাক্কায়। সর্বশেষ এসেছিল ৮০ টাকা কিলোমিটারের ট্যাক্সি। তারাও এখন যাই যাই করছে। অনেকে এখন বিভিন্ন অ্যাপসে যোগদিচ্ছে পেট বাঁচাতে।

কিন্তু ৮ বছর ব্যবধানে সিএনজি চালকদের এই আচরণ বারবার একটি কথাই মনো হলো। প্রকৃতির বিচার রয়েছে, কোনো কিছু নিয়ে বাড়াবাড়ি করা উচিত না। যে সব ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, জনপদ এমনকি হাটবাজার যখন মানুষের মনকে অতিষ্ঠ করে তুলেছে। তারা কিন্তু বিলীন হয়ে গেছে।

অনেক জনপদ ছিলো যারা মানুষকে অত্যাচার করেছে সে সব জনপদ কিন্তু হারিয়ে গেছে কালের গর্ভে। অনেক এলাকায় অনেক বিখ্যাত হাটবাজার ছিলো, যেগুলো থেকে মানুষ মুখে ফিরিয়ে নেওয়া সেগুলো এখন কাগজের পাতায় ঠাঁই নিয়েছে।

নগরবাড়ি ফেরিঘাট নিয়ে একটি গল্প প্রচলিত ছিলো, বাবা-ছেলে খেতে বসেছে। ছেলে বাবাকে বলছে বাবা ডিমের মধ্যেতো বাচ্চা হয়েছে। বাবা তাকে বলছে আস্তেবল না হলে পুরো রোষ্টের দাম কষবে। বাস্তবে এমন ঘটনা ঘটার কোনো সম্ভাবনা নেই। তবে এই ঘটনা দিয়ে নগরবাড়ি ফেরীঘাটের অত্যাচারকে বুঝানো হতো। সেই নগরবাড়ি কালের আবর্তে বিলীন হয়ে গেছে। এখন খাঁ খাঁ করে। হোটেল মালিকরা অনেকে ব্যবসা পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়েছেন।

ঢাকায় যদি জরিপ করা যায় ১ ‘শ জনের মধ্যে নাকি ১০১ জন সিএনজির বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করবে। কিভাবে ১০১ জন হবে! উত্তর পাওয়া গেছে যিনি জরিপ করবেন তিনিও থাকবেন তার মধ্যে। মানুষ এখন সিএনজির সঙ্গে দরদাম করার আগ্রহও দেখান না। সরাসরি অ্যাপসে চেপে গন্তব্যে পৌঁছে যাচ্ছেন।

অল্প সংখ্যক লোকজন যারা অ্যাপসে অভ্যস্ত নন তারাই এখন সিএনজির অন্যতম ভরসা। তবে সেটাও মনে হয় বেশিদিন টিকতে পারবে না যেনে নিজেরাই অ্যাপসে ঢুকছে সিএনজি। তাতেও খুব সাড়া মিলছে না। যে কারণে এখন রাস্তায় রাস্তায় ভেউ ভেউ করে ঘুরতে হচ্ছে।

আর যাত্রী না পেয়ে রাতজাগা চালক ক্ষুব্ধ হতেই পারেন। তাতে আমার রেগে যাওয়া চলে না, কারণ তারও সংসার রয়েছে।