ক্রয়ে নিশ্চয়তা, থামছে না তামাক চাষ
তামাক প্রক্রিয়াজাত কোম্পানিগুলোর আর্থিক সহযোগিতায় দেশের উত্তরের সীমান্তবর্তী জেলা নীলফামারীতে দিন দিন তামাক চাষের চাহিদা বেড়েছে। বিনা মূল্যে বীজ, ঋণের ওপর সার ও নগদ অর্থসহ তামাক ক্রয়ের নিশ্চয়তার লোভেই তামাক চাষে ঝুঁকে পড়েছে এ অঞ্চলের চাষিরা। শুধু তাই নয়, স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর জেনেও অধিক মুনাফা লাভের আশায় তামাকের জমিতে কাজ করানো হচ্ছে শিশুদেরও।
জেলার নীলফামারী সদর, ডোমার, ডিমলা, জলঢাকা, কিশোরগঞ্জ ও সৈয়দপুর ঘুরে দেখা গেছে, মাঠের পর মাঠ জুড়েই শুধু তামাক চারা। দিন যতই যাচ্ছে ততই বাড়ছে তামাক চাষ।
নীলফামারী সদরের রামনগর ইউনিয়নের তামাক চাষি আব্দুল বাতেন বলেন, ‘শরীরের ক্ষতি হইবে জানি, অন্য কোনোর থাকি তামাক চাষে লাভ হয় ভাল। শীতের সকালেও সবায় মিলি কাজ করিছি।’
সদর উপজেলার সিংদই হাতিবান্দা গ্রামের তামাক চাষি ছপিয়ার রহমান বলেন, ‘তামাক চাষে লাভ বেশি। ধান আাবদ করি কিন্তু দাম পাই না। পুরান তামাক এখন বাজারে ৩ হাজার ৫০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে।
কৃষক আবু নাসের বলেন, ‘সরকার যদি বিনা শর্তে ঋণসহ ফসল ক্রয়ের নিশ্চয়তা দেয় তাহলে তামাক চাষ ছেড়ে দিয়ে কৃষকরা ভুট্টা, গম, আলু ও সরিষা চাষ করবে।’
তবে কৃষকরা বলছেন, চলতি বছর জেলায় ফসলি জমিতে দ্বিগুণ পরিমাণ তামাক চাষ হয়েছে। কোম্পানিগুলো তামাক ক্রয়ের শতভাগ নিশ্চয়তা দেন। কিন্তু কৃষকের উৎপাদিত পণ্য ক্রয়ের ব্যাপারে সরকারের নেই কোনো উদ্যোগ।
নীলফামারীর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরে (২০১৮-১৯) ৩ হাজার ১০২ হেক্টর জমিতে তামাক চাষ হয়েছে। ২০১৭-১৮ সালে ৩ হাজার ৫৬০ হেক্টর জমিতে তামাকের চাষ হয়েছিল। সে হিসেবে এবার তামাক চাষ কমেছে ৪৫৮ হেক্টর জমিতে।
নীলফামারী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ পরিচালক গোলাম ইদ্রিস বলেন, ‘তামাক চাষে কৃষকদের নিরুৎসাহিত করতে কৃষি বিভাগ যথেষ্ঠ আন্তরিক হয়ে কাজ করছে। কিন্তু চাষিরা অধিক মুনাফার আশায় তামাক চাষে ঝুঁকে পড়ছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘গত বছরের চেয়ে এবার ৪৫৮ হেক্টর জমিতে তামাকের কম চাষ হয়েছে। আশা করি সরকারের পৃষ্টপোষকতায় আগামীতে কৃষক তামাক চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে।’
ক্ষতিকর দিক জানা সত্ত্বেও বিভিন্ন তামাক কোম্পানির লোভনীয় প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে জেলার চাষিরা বছরের পর বছর তামাক চাষ অব্যাহত রেখেছেন। তামাক চাষ বন্ধে সচেতনতা বৃদ্ধি, আইন প্রয়োগসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন জেলার সচেতন মানুষ।