চট্টগ্রাম এমইএস কলেজের কীর্তিমান ড. খালিদ হোসেন



ড. মাহফুজ পারভেজ, কন্ট্রিবিউটিং এডিটর, বার্তা২৪.কম
ড. আফম খালিদ হোসেন, ছবি: বার্তা২৪.কম

ড. আফম খালিদ হোসেন, ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

ঘটনাটি কাকতালীয়, নাকি দৈব-সংযোগ, আমি জানি না। বৃহস্পতিবার (৩১ জানুয়ারি) সকালে আমি তাকে ফোন করি। তার একটি প্রবন্ধ গ্রন্থের ভূমিকা লিখেছি আমি। বইটি বের হলে আমাকে পাঠানোর ব্যাপারে কথা বলাই ছিল ফোনের উদ্দেশ্য।

জানালেন, ‘বইটি বের হয়েছে। আমাকে সহসাই পাঠাবেন।’ ফোনের অপর প্রান্তে আলাপ-আলোচনার শব্দ শুনে জানতে চাইলাম, ‘কোথায় আছেন?’ বললেন, ‘কর্মস্থল কলেজে।’

পরে বিকালের দিকে আরেক সূত্রে জানলাম, তিনি ২৭ বছরের সুদীর্ঘ অধ্যাপনার শেষ দিনটি কাটিয়ে আজই অবসর নিচ্ছেন। অথচ কথাটি তিনি নিজের মুখে বলেন নি।

কেন বলেন নি, তার একটি কারণ এমন যে, কর্মপ্রবণ মানুষ প্রকৃত অর্থে অবসরে যান না। মৃত্যুই কেবল তাদেরকে পূর্ণ অবসর দিতে পারে। ফলে প্রাতিষ্ঠানিক অবসর হলেও বহু-বিস্তৃত কাজের জগৎ থেকে তার যে অবসর হচ্ছে না, এ কথা বলাই বাহুল্য।

যার কথা বলছি, তিনি প্রফেসর ড. আফম খালিদ হোসেন, চট্টগ্রামের মানুষ তো বটেই বাংলাদেশ তথা উপমহাদেশের ইসলামিক স্কলারগণ একনামে তাকে চেনেন।

চট্টগ্রামের নাসিরাবাদ-খুলশী এলাকার বিখ্যাত ওমর গণি এমইএস কলেজের এই জনপ্রিয় অধ্যাপক নিজস্ব মনন ও মনীষায় ঋদ্ধ। কীর্তিমান অবয়বে বাংলাদেশের বুদ্ধিবৃত্তিক অঙ্গনে জাজ্বল্যমান।

বছরের পুরো সময়ই তিনি সেমিনার, আলোচনা, পাবলিক লেকচারে দেশ-বিদেশে সফর করেন। আমার সঙ্গে বছরে এক-দুইবারের বেশি কথাও হয় না। উভয়ের ব্যস্ততার কারণে দেখা হয় কদাচিত। বরং তার পুত্র চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের তরুণ অধ্যাপকের সঙ্গে দেখা হয় বেশি।

তিন যুগের মতো সময় চট্টগ্রামে অবস্থানের কারণে যেসব চিন্তক ও পণ্ডিতের সঙ্গে আমার সংশ্লেষ হয়েছে, তাদের মধ্যে ইতিহাসবিদ আবদুল করিম, প্রবীণ-প্রাজ্ঞজন মুঈনুদ্দীন আহমদ খান, রাষ্ট্রবিজ্ঞানি আরআই চৌধুরী, ইসলামের ইতিহাসবিদ ইনাম-উল হক অন্যতম। এদের জ্ঞান পরম্পরার বিশিষ্ট ও কৃতি ছাত্র ড. আফম খালিদ হোসেনের সঙ্গেও সঙ্গত কারণে যোগাযোগ গড়ে উঠে। বিভিন্ন একাডেমিক, ধর্মতাত্ত্বিক, দার্শনিক, ঐতিহাসিক বিষয়ে এই লেখক, অধ্যাপক ও সম্পাদকের সঙ্গে আমার নিবিড় আলাপ-আলোচনা হয়েছে। লেখালেখির সম্পর্কও গড়ে উঠেছে নানা প্রসঙ্গে।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jan/31/1548938535477.jpg

জ্ঞানচর্চার ইতিহাসে নিয়োজিত একজন ব্যক্তির জীবনব্যাপী অবদানের পরিমাণ ও গুরুত্ব অপরিসীম। কারণ নিবেদিত ব্যক্তিবর্গের সম্মিলিত প্রচেষ্টাতেই জ্ঞানচর্চার ধারা অব্যাহত থাকে এবং বিকশিত হয়।

ড. খালিদ হোসেন একনিষ্ঠভাবে জ্ঞান ও শিক্ষার পথে এ কাজটিই করেছেন। শুধু করেছেন বললে কম বলা হবে। তিনি কৃতিত্বের সঙ্গে স্বীয় দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে নিজেকে এবং নিজের বিদ্যাক্ষেত্রকে আলোকিত করেছেন।

পেশাগত সাফল্যের সূত্রে কৃতিত্বের শিখর স্পর্শ করার এমন সুযোগ সবাই কাজে লাগাতে পারে না, তিনি তা দক্ষতার সঙ্গে করতে পেরেছেন। ফলে তার স্বীকৃতি ও অবস্থান জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরে প্রসারিত হয়েছে।

দৃষ্টান্তস্বরূপ কর্মনিষ্ঠ ড. খালিদের শেষ কর্মদিবসের বিবরণ দেওয়া যায়। পেশাজীবনের শেষ দিনটিকে তিনি আলস্য ও স্মৃতিকাতরতায় নয়, প্রথম বর্ষের তাজা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দীর্ঘ ক্লাশ নিয়ে ইতিবাচকভাবে সমাপ্ত করেছেন। কাজের প্রতি নিবেদিত এই অধ্যাপক সমগ্র পেশাজীবনে একাধিক গ্রন্থ প্রণয়ন, পিএইচডি গবেষণা সম্পন্ন করে ডিগ্রি অর্জনের পাশাপাশি ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বিশাল ‘ইসলামি বিশ্বকোষ’-এর ৩য় থেকে ১০ম খণ্ড সম্পাদনার সঙ্গেও জড়িত ছিলেন।

ইসলাম বিষয়ক পাঠকপ্রিয় মাসিক পত্রিকা সম্পাদনা করে চলেছেন বহু বছর ধরে। বাংলাদেশের এমন কোনো জায়গা সম্ভবত নেই, যেখানে তিনি বক্তব্য রাখতে যান নি। দক্ষিণ এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য ও বিশ্বের অন্যান্য দেশেও গিয়েছেন আমন্ত্রিত হয়ে। সঙ্গে নিয়ে গেছেন তার প্রিয় কর্মক্ষেত্র ওমর গণি কলেজ, চট্টগ্রাম এবং বাংলাদেশের বার্তা।

প্রকৃতির ধারায় ড. আফম খালিদ হোসেন আনুষ্ঠানিক অবসর নিলেও তিনি যে জ্ঞান ও ধর্মচর্চা, গবেষণা ও বক্তৃতা, লেখা ও সম্পাদনায় অবিরাম নিয়োজিত থাকবেন, তা বিলক্ষণ বলা যায়। বরং প্রাতিষ্ঠানিক বাধ্যবাদকতা না থাকায় তিনি তার কাজ আরো গতিশীলভাবে করতে পারবেন। দেশ ও বিদেশে নিজেকে আরো প্রসারিত করতে সক্ষম হবেন।

প্রথাগত অবসর নিলেও চট্টগ্রাম তথা বাংলাদেশের সমাজ, সংস্কৃতি ও বৃদ্ধিবৃত্তিক ক্ষেত্রে ড. খালিদ হোসেন জ্ঞান ও শিক্ষাচর্চার আলোকিত বাতিঘরের মতো অবস্থান করবেন। দক্ষিণ চট্টগ্রামের ঐতিহ্য লালিত এবং ইসলাম ও ইতিহাস চর্চায় নিবেদিত এই ব্যক্তিত্ব সমুদ্র ও পাহাড়ের মেলবন্ধনের নিয়ামত-আশ্রিত শক্তি ও সুষমায় ইসলামের ইতিহাসের গৌরবময় মুকুটে আরেকটি স্বর্ণের পালক সংযোজন করবেন বলে আমরা প্রত্যাশা করি।

 

 

   

চিড়িয়াখানায় কুকুরকে পান্ডা বানিয়ে প্রদর্শন



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
চিড়িয়াখানায় কুকুরকে পান্ডা বানিয়ে প্রদর্শন

চিড়িয়াখানায় কুকুরকে পান্ডা বানিয়ে প্রদর্শন

  • Font increase
  • Font Decrease

পূর্ব চীনের একটি চিড়িয়াখানা কুকুরকে ‘পান্ডা’ বানিয়ে প্রদর্শন করা হয়েছে। কুকুরের শরীরে সাদা এবং কালো রং মাখিয়ে আসল পান্ডাদের মতো বানিয়ে প্রদর্শন করা হয়। চীনের জিয়াংসু প্রদেশের তাইঝু চিড়িয়াখানায় গত ০১ মে এ ঘটনা ঘটে।

সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক পোস্টের এক প্রতিবেদনে এমন অবাক কাণ্ডের তথ্য প্রকাশিত হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়- পহেলা মে’র ছুটিকে কেন্দ্র করে চিড়িয়াখানায় দর্শনার্থী বাড়াতে কর্তৃপক্ষ চিড়িয়াখানায় ‘পান্ডা কুকুর’ দেখা যাবে বলে বিজ্ঞাপন দেয়। তাদের বিজ্ঞাপন দেখে দর্শনার্থীরা চিড়িয়াখানায় ছুটে আসে। এসে তাদের এমন কাণ্ড দেখে অনেক দর্শনার্থী ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানায়।

নিউইয়র্ক পোস্টে বলা হয়, চিড়িয়াখানার কর্মকর্তারা দুটি চৌ চৌ কুকুরের মুখ কালো রং করেছেন, যাতে কুকুরগুলোকে ক্ষুদ্রাকৃতির পান্ডাদের মতো দেখা যায়। এই কুকুরগুলোকে প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৫টার মধ্যে প্রদর্শনের জন্য রেখে দেওয়া হয়, যেখানে দর্শনার্থীদের ভিড় করে তাদের দেখার জন্য জড়ো হয়।

যখন দর্শনার্থীরা বুঝতে পারেন কুকুরগুলো আসল পান্ডা নয়, তখন অনেকে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান। তারা অভিযোগ করেন, প্রাণীর সঙ্গে এমন আচরণ নিষ্ঠুরতা।

তবে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, যে রং তারা ব্যবহার করেছেন তা ক্ষতিকারক নয় এবং এ রঙে কোনো রাসায়নিকও নয়।

চিড়িয়াখানার একজন মুখপাত্র জানান, তাদের চিড়িয়াখানায় কোনো পান্ডা ভাল্লুক ছিল না। তাই তারা এমনটি করেছেন। মানুষও চুলে রং করে। কুকুরের লম্বা পশম থাকলে প্রাকৃতিক রং ব্যবহার করা যায়।

অন্য একজন জানান, তাদের চিড়িয়াখানায় আসল পান্ডা রাখার জায়গা নেই। এভাবে করলে দর্শনার্থীদের আরও বেশি আনন্দ দেওয়া যাবে বলে তারা এমনটি করেছেন।

উল্লেখ্য, চৌ চৌ একটি স্পিটজ-টাইপ কুকুর, যা মূলত উত্তর চীনে পাওয়া যায়।

;

চম্পারণের ১০৭ বছর



ফিচার ডেস্ক বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

১০৭ বছর আগে ১৯১৭ সালের ১৫ এপ্রিল বিকেলের কথা। শোষণের হাত থেকে বাঁচার জন্য হাজার হাজার কৃষক বিহারের চম্পারণের মতিহারি রেলস্টেশনে তীক্ষ্ণ চশমা পরা এক লোকের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। রাজকুমার শুক্লা নামে একজন চম্পারণের কৃষক মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী জী কে চম্পারণে আসার জন্য অনুরোধ করেন।

তিনি এখানে আন্দোলনের নেতৃত্ব দিতে না আসলেও প্রায় এক বছর ধরে তার উকিল বন্ধু ব্রজ কিশোর প্রসাদ, রাজেন্দ্র প্রসাদ, গোরখ প্রসাদ, চন্দ্রভাগা সহায় এবং বাবু ধারনীধরদের নিয়ে ভারতীয় ইতিহাসে সবচেয়ে বড় কৃষকদের সমীক্ষা চালিয়েছিলেন। সাবধানতার সাথে ৪ হাজারের বেশি সাক্ষ্য লিপিবদ্ধ করেন তারা। প্রধানত কৃষকদের দুঃখজনক জীবনের বর্ণনা ও দ্বিগুণ করের আওতায় তাদের শোষণের কথা সমীক্ষায় উঠে আসে।

চম্পারণ সত্যাগ্রহ ছিল ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামের একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা এবং ভারতীয় জাতীয় আন্দোলনের পদ্ধতি ও মতাদর্শ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। এটি অহিংস প্রতিরোধ এবং নাগরিক অবাধ্যতার সাথে মহাত্মা গান্ধীর প্রথম দিকের পরীক্ষাগুলির মধ্যে একটি চিহ্নিত করে, যা পরে তার নেতৃত্ব এবং ভারতের স্বাধীনতার জন্য বৃহত্তর আন্দোলনের বৈশিষ্ট্য হয়ে ওঠে। চম্পারণ সত্যাগ্রহ ১৯১৭ সাল থেকে ১৯১৮ সালের মধ্যে ভারতের বিহারের চম্পারণ জেলায় সংঘটিত হয়েছিল।

১০০ বছর পর হস্তলিখিত সাক্ষ্যগুলি জাতীয় আর্কাইভস থেকে সংগ্রহ করে সবরমতী আশ্রমের আর্কাইভ বিভাগে প্রতিলিপি করা হচ্ছে। এসব আর্কাইভ আটটি খণ্ডে রূপান্তরিত হচ্ছে। কীভাবে কৃষকরা তাদের কণ্ঠস্বর উত্থাপিত হতে দেয় এবং শান্তিপূর্ণভাবে তাদের অধিকারের দাবি জানায়। সাক্ষ্য রেকর্ড করার এই সত্যাগ্রহের ফলেই চম্পারণ কৃষি আইন প্রণয়ন করা হয়েছিল।

চম্পারণ সত্যাগ্রহ গান্ধীর নিপীড়ক ব্রিটিশ নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদের উপায় হিসাবে অহিংস প্রতিরোধকে নিয়োগ করার প্রথম প্রচেষ্টাগুলির মধ্যে একটি হিসাবে চিহ্নিত করেছিল। তিনি এই কৌশলটিকে “সত্যাগ্রহ” বলে অভিহিত করেন, যার অনুবাদ “সত্য শক্তি”।

 চম্পারণের মতিহারি রেলস্টেশন। ছবি: সংগৃহীত

চম্পারণ অভিযানের জনগণের হতাশা একটি কার্যকর রাজনৈতিক হাতিয়ারে পরিণত হয়। গান্ধী জী এবং তার দল রেকর্ড করছিল কিভাবে কৃষকরা নীল চাষের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। নীলকররা কিভাবে কৃষকদের বাধ্য করছে নীল চাষ করার জন্য এসব বিষয় তুলে ধরেছেন। নীল চাষ না করলে কৃষকদের উপর দ্বিগুণ করন চাপিয়ে দেওয়া হতো। ব্রিটিশ রোপনকারীরা এজেন্টদের ব্যবহার করে বলপ্রয়োগ ও সহিংসতার মাধ্যমে কর আইন কার্যকর করতো।

সবরমতি আশ্রমের পরিচালকের মতে, গান্ধী ও তার অ্যাডভোকেট বন্ধুরা শ্রোতার ভূমিকা পালন করেন। গান্ধীর মাধ্যমে কৃষকরা নির্দ্বিধায় কথা বলতে পারেন। তারই ফল হলো আজ আমাদের সাথে কৃষকদের সম্পর্কের বিস্তারিত রেকর্ড রয়েছে জমিদার, ব্রিটিশ নীল কারখানার মালিকদের সাথে সম্পর্ক এবং ভূমি রাজস্ব কাঠামোর শোষণমূলক প্রকৃতি।

তিনি বলেন, চম্পারণ সত্যাগ্রহের সময়, বাপু দেখিয়েছিলেন যে মানুষকে স্বাধীনতার জন্য একটি গণআন্দোলনে আকৃষ্ট করার জন্য তাদের ব্যক্তিগত জীবনে একটি সুস্পষ্ট এবং পরিমাপযোগ্য পরিবর্তন করা গুরুত্বপূর্ণ। তবেই স্বাধীনতার ধারণা তাদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে পারে।

চম্পারণ সত্যাগ্রহের ফলস্বরূপ, ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ কৃষকদের অভিযোগ তদন্তের জন্য চম্পারন কৃষি তদন্ত কমিটি নিয়োগ করতে বাধ্য হয়েছিল। এই কমিটি শেষ পর্যন্ত কৃষকদের অনুকূলে সংস্কারের সুপারিশ করেছিল, যা গ্রামীণ জনগণের মধ্যে উন্নত অবস্থা এবং ক্ষমতায়নের বোধের দিকে পরিচালিত করে।

;

রেলস্টেশনে বুকশপ আর চোখে পড়ে না!



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, খুলনা
ছবি: বার্তা২৪, খুলনা রেলওয়ে স্টেশন

ছবি: বার্তা২৪, খুলনা রেলওয়ে স্টেশন

  • Font increase
  • Font Decrease

একটা সময় ছিল যখন রেলের দীর্ঘ যাত্রায় রেলের বগিতে সময় কাটাতে হতো। তখন এই অলস সময় কাটাতে বইয়ের কোনো বিকল্প ছিল না। যাত্রাপথে বই খুলে গভীর মনোযোগ দিয়ে বই পড়তেন। সে কারণে রেলের বগিতে, স্টেশনগুলোতে কিছুক্ষণ পর পর বই বিক্রেতাদের হাকডাকও ছিল বেশ রকমের। স্টেশনেও থাকতো বই বিক্রির দোকান, যা ‘বুকশপ’ নামে পরিচিত ছিল। এখন তা শুধুই স্মৃতি মাত্র!

রেলস্টেশনে এসব বইয়ের দোকানে অনেক ধরনের বই পাওয়া যেতো, যা বাজারের বইয়ের দোকানগুলোতে থাকতো না। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদলে গেছে সবকিছু। এখন বই কিনে আর কেউ রেলে চড়েন না। প্রযুক্তির ছোঁয়ায় স্মার্টফোনে সময় পার করেন। রেলের কোচে এখন আর বইয়ের ফেরিওয়ালাও ওঠেন না, বই কেনার কাউকে পাওয়া যায় না বলে।

১৯৮৫ সালে খুলনা রেলস্টেশনে বইয়ের ব্যবসা শুরু করেছিলেন মো. আবু বক্কার। বিশাল বইয়ের দোকান ছিল রেলস্টেশনে। বইয়ের দোকানের নাম ছিল ‘প্রজ্ঞা রেলওয়ে বুক স্টল’। কিন্তু এখন আর এত বই নেই সে দোকানে। গুটি কয়েক বই রয়েছে সে বুকশপে। তবে এগুলোও বিক্রি হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। এখন পুরনো স্টেশনের সেই দোকানটিতে চা, পান, সিগারেট বিক্রি হচ্ছে।

অন্যদিকে, খুলনার রেলস্টেশনটি এখন আন্তর্জাতিক মানের। যদিও সেখানে বইয়ের দোকান দেওয়ার জন্য কোনো স্থানই আর খালি নেই। আগ্রহও নেই রেল কর্তৃপক্ষের।

এ বিষয়ে প্রজ্ঞা রেলওয়ে বুক স্টলের মো. আবু বক্কার আক্ষেপ নিয়ে বলেন, এখন আমার বয়স ৮০। কী আর করবো! কেউ আর বই কিনে রেলে চড়েন না। বই পড়েনও না। অন্য ব্যবসা পারি না। তাই, এখন এই দোকানে বসে চা, পান, বিড়ি বিক্রি করি। কিছু পুরনো বই রয়েছে। কিন্তু বিক্রি হয় না’।

আবৃত্তিকার কামরুল কাজল জানান, রেলে চড়ার অনেক স্মৃতি রয়েছে আমার। প্রতিবার রেলে উঠলে নতুন নতুন বই কিনতাম। অনেক নতুন বই রেলস্টেশনের স্টলে পেতাম, যা খুলনার অনেক বইয়ের দোকানে পেতাম না। আবার রেলে উঠলে অনেক হকার বই বিক্রি করতেন। সেই সব বইগুলো ছিল সময় কাটানোর বড় অনুষঙ্গ। কিন্তু এখন বইয়ের প্রতি মানুষের আগ্রহ দেখি না।

রেলস্টেশনে বুকশপ বা বইয়ের স্টল এখন আর চোখেই পড়ে না! খুলনা রেলওয়ে স্টেশন, ছবি- বার্তা২৪.কম

বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি খুলনা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক বোরহান উদ্দীন বিশ্বাস জানান, এখনকার ছেলে-মেয়েদের মধ্যে বই পড়ার আগ্রহ কমে গেছে। আগ্রহ তৈরিতে এলাকাভিত্তিক পাঠাগার গড়ে তুলতে হবে। বইয়ের চাহিদা না থাকায় অনেক ব্যবসায়ী ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছেন।

রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চল জোনের (রাজশাহী) ব্যবস্থাপক অসীম কুমার তালুকদার জানালেন, পুরনো রেলস্টেশনগুলোতে বই বিক্রির জন্য স্থান থাকলেও নতুন যেসব স্টেশন তৈরি হয়েছে, সেসব স্টেশনে আলাদা স্থান রাখা হয়নি। এছাড়া যারা স্টেশনে ব্যবসা করার জন্য আবেদন করেছেন, তারা বেশির ভাগ খাবারের দোকান হিসেবে বরাদ্দ চান।

 

;

প্রকৃতিতে শোভা ছড়াচ্ছে ‘সোনালু ফুল’



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, নওগাঁ
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

সবুজের ফাঁকে উঁকি দিয়ে হলুদ আভায় মুগ্ধতা ছড়ানো ফুল সোনালু। নজরকাড়া সৌন্দর্যে মুখরিত এই ফুল পথিকের মনে এনে দিচ্ছে প্রশান্তির ছোঁয়া। পরিবেশ ও প্রকৃতির শোভা বর্ধনে সোনালু দারুণ এক নিসর্গ মায়া এনে দিয়েছে। এই ফুলের দেখা মিলছে নওগাঁর বিভিন্ন পথে প্রান্তরে।

মঙ্গলবার (৭ মে) বিকেলে সরেজমিন দেখা যায়, নওগাঁ শহরের বরেন্দ্র অফিসের পাশে থোকায়-থোকায় হলুদ আভায় ঝুলে আছে সোনালু। ফুলের মাথা হতে লম্বা লতার মত বড় হয়েছে।

শীতকালে সব পাতা ঝরার পর বসন্তে একেবারেই মৃতের মতো দাঁড়িয়ে থাকে গাছটি। গ্রীষ্মের শুরুতে দু’একটি কচিপাতার সাথে ফুল ফুটতে শুরু করে। হলুদ সোনালি রঙের অসংখ্য ফুল সারা গাছজুড়ে ঝাড় লণ্ঠনের মতো ঝুলতে দেখা যায়।


জানা যায়, সোনালু গাছের পাতাঝরা মাঝারি আকৃতির । এটি আট থেকে ৯ মিটার উঁচু হয়। হলুদ বরণ এ ফুল দেখতে যেমন আকর্ষণীয় তেমনি আছে তার বাহারি নামও। পরিচিত নামগুলো হলো সোনালু, সোনাইল, সোঁদাল, বান্দরলাঠিসহ আরো অনেক। ফুল থেকে ধীরে ধীরে লাঠির মত কালো রঙের ফল হয়ে সেটি কয়েক সেন্টিমিটার অব্ধি লম্বা হয়ে থাকে।

পথচারী আলমগীর বলেন, সোনালু দিন দিন বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। আর শহরের মধ্যে চোখে পড়েনা বললেই চলে। যতবার দেখি খুব সুন্দর লাগে। মনের মধ্যে এনে দেয় এক প্রশান্তি। 

স্থানীয় বাসিন্দা মিঠু বলেন, আমি মোবাইল দিয়ে প্রচুর ছবি তুলেছি এই ফুলের। আমার খুব ভালো লাগে সোনালু ফুল। তবে এই ফুল যেন হারিয়ে না যায় সেজন্য আমাদের গাছ লাগানো উচিৎ। আমাদের বাড়ির আশেপাশে অনেক সোনালু গাছ আছে যা আমাদের মুগ্ধ করে।


নওগাঁ সরকারি কলেজের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. এনায়েতুস সাকালাইন বার্তা২৪.কমকে বলেন- এটি মূলত সৌন্দর্য বর্ধনে রোপণ করা হয়। গ্রাম বাংলায় এই ফুলকে বাদর লাঠি গাছ বলেও ডাকা হয়। এটির বৈজ্ঞানিক নাম 'কেসিয়া ফিসটুলা (Cassia Fastula)। এই উদ্ভিদ বাংলাদেশে অনেক জাতের আছে। ফুলটার জন্য বেশি খ্যাতি রয়েছে বলে অনেক জায়গায় লাগানো হয়। গাছের কাঠগুলো জ্বালানি কাজে ব্যবহার করা হয়।

;