মানসিক সমস্যার কারণ যখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম!
আমাদের জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে গেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম।
একটাদিনও যেন তার উপস্থিতি ছাড়া পার করা সম্ভব নয়। বিনোদন কিংবা পরিচিতদের মাঝে যোগাযোগ রাখার অন্যতম এই মাধ্যমগুলো বেশ শক্তপোক্তভাবেই নিজেদের অবস্থান তৈরি করে নিয়েছে। নিজেদের জীবনে যে মাধ্যমটি এমন গভীরভাবে বসতি গড়ে তুলেছে, মানসিক স্বাস্থ্যের উপর তাদের প্রভাব নিয়ে কি কখনো ভেবে দেখা হয়েছে!
ভালোভাবে খেয়াল করলে দেখা যাবে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো উপকারিতার চাইতে অপকারিতাই যেন তৈরি করছে খুব সূক্ষ্মভাবে। নেতিবাচক প্রভাব ফেলে দিচ্ছে নিজেদের প্রতিদিনের জীবনযাত্রায় ও মানসিক অবস্থায়। কিভাবে ঘটছে এমনটা, সেটাই তুলে ধরা হলো।
মানসিক চাপ
সময়ে সময়ে নতুন ট্রেন্ডের সাথে নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা নিজের ভেতরে উদ্বেগ সৃষ্টি করে। সকলে অমুক জায়গায় যাচ্ছে, ছবি তুলছে, আনন্দ করছে- কিন্তু আমি যেতে পারছি না, আমাকেও যেতে হবে যেভাবেই হোক। অথবা সকলেই ওই কাজটি করছে তাই আমাকেও করতে হবে- এমন অনুভূতি থেকেই তৈরি হয় মন খারাপ ভাব, উদ্বেগ ও মানসিক চাপ।
মানসিক ও শারীরিক অবসাদ
অনলাইনের দুনিয়ায় নিশ্চয় নির্দিষ্ট একটি অ্যাপ নিয়ে থাকা হয় না। একইসাথে কয়েকটি অ্যাপে বিচরণ চলতে থাকে সমানতালে। এমনভাবে মাল্টি টাস্কিং এর ফলে কোন বিশেষ দক্ষতা বৃদ্ধি না পেলেও, মগজ খুব দ্রুত ক্লান্ত হয়ে পরে। এই ক্লান্তিভাব থেকে খুব সহজেই দেখা দেয় মানসিক ও শারীরিক অবসাদ। খেয়াল করলে দেখবেন, এই মাল্টি টাস্কিং এর ফলে প্রোডাক্টিভ ও ইতিবাচক কোন ফলাফল দেখা না দিলেও, নেতিবাচক ফলাফল দেখা দিবেই।
সামাজিক উদ্বেগ
যদিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের মূল উদ্দেশ্যই হলো পরিচিতদের মাঝে সংযোগ স্থাপন করা ও যোগাযোগটা সহজ করে তোলা। কিন্তু অন্যতম সহজ এই যোগাযোগ মাধ্যমই একটা সময় কিছু মানুষের জন্য সামাজিক উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তারা মানুষদের সঙ্গে সামনাসামনি দেখা করার চাইতে অনলাইনে যোগাযোগ করতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। কারোর সঙ্গে দেখা করার বিষয়টি তাদের ভেতর বড় ধরণের সামাজিক উদ্বেগ তৈরি করে।
লক্ষ্যভ্রষ্ট
অবশ্যই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রয়োজনীয়তা আছে। কিন্তু তার মাঝেও রয়েছে নির্দিষ্ট একটি গণ্ডি ও পরিসীমা। কোন একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজের মাঝে যদি মোবাইলের স্ক্রিনে আলো জ্বলে ওঠে কিংবা নোটিফিকেশনের শব্দ কানে আসে, হাতের কাজ ফেলে মোবাইল হাতে সময় কাটানো শুরু হয়। সেই সঙ্গে কাজের প্রতি মনোযোগটাও হারিয়ে যায় একদম। ফলে যে কাজটি ঘন্টাখানেকের মাঝে শেষ করা সম্ভব হতো, সেই কাজের পেছনে দ্বিগুণ সময় দিতে হয়। এভাবে লক্ষ্যভ্রষ্ট হতে হয় বলে পিছিয়ে যেতে হয় অনেকখানি।
হীনমন্যতা
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সবচেয়ে বড় যে নেতিবাচক প্রভাবটি তৈরি করে সেটা হলো- হীনমন্যতাবোধ। সামাজিক মাধ্যমগুলোতে অন্যের পোস্ট দেখে নিজের অবস্থার সঙ্গে তুলনা করে মানসিকভাবে হীন বোধ করার ফলেই এমনটা হয়ে থাকে। যেটাকে ইংলিশে বলা হয়ে থাকে ইনফিওরিটি কমপ্লেক্সে ভোগা। অথচ প্রতিটা মানুষের জীবনেই সমস্যা রয়েছে। সকলকেই ভালো ও খারাপ সময় পার করতে হয়। কারোর ভ্রমণের ছবি দেখে ভাবার কিছুই নেই যে, সে আদ্যপান্ত একজন সুখি মানুষ।