‘আসক্তি’ দেখা দিতে পারে এই সকল কাজেও!
আসক্তি শব্দটা পড়ার সাথে সাথেই নিশ্চয় ড্রাগ, অ্যালকোহল কিংবা জুয়া খেলার আসক্তির বিষয়টি মাথায় কাজ করবে।
আসক্তি কখনোই ইতিবাচক ধারণা তৈরি করে না। আসক্তি শব্দটা যেমন নেতিবাচক, তেমনভাবে জীবনের উপরেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে দেয়।
তবে আসক্তি শুধু ড্রাগস কিংবা পানীয়ের উপরে নয়- নিত্য ব্যবহার্য জিনিস, আচরণগত অভ্যাস এমনকি অনুভূতির উপরেও দেখা দিতে পারে আসক্তি। এমন কিছু বিষয়ের উপরে আসক্তি দেখা দিতে পারে, যা অবাক করে দিবে আপনাকে। অন্যান্য যে সকল বিষয়ের উপর আসক্তি দেখা দিতে পারে, তার কয়েকটি নিচে তুলে ধরা হলো।
কেনাকাটা করা
অনেকেই কথার কথা বলেন, কেনাকাটা করা নেশার মতো হয়ে গেছে একদম। এক্ষেত্রে নোট নিয়ে রাখুন, কেনাকাটা করাটা আক্ষরিক অর্থেই নেশার মতো হয়ে যায়। ‘টু বাই অর নট টু বাই: হোয়াই উই ওভারশপ অ্যান্ড হাও টু স্টপ’ বইয়ের লেখিকা এপ্রিল লেন বেসনস জানান, ভালো বোধ করার জন্য এবং নিজের মাঝে নিরাপদজনিত বোধকে কাজ করানোর জন্য অনেকেই কেনাকাটার প্রতি বেশি ঝুঁকে পড়েন। এমনকি কেনাকাটা করার মাধ্যমে নিজেকে শান্ত রাখা সম্ভব হয় এবং নিজের মানসিক অশান্তিকে সাময়িকভাবে কমানো যায়’।
কিন্তু কীভাবে বুঝবেন আপনি কেনাকাটার প্রতি আসক্ত কিনা! কেনাকাটার সম্ভবনার উপর যখন আপনার মুড পরিবর্তন নির্ভর করবে এবং অন্য কোন কাজে মন ভালো করা কষ্টকর হয়ে উঠবে, তখন বুঝতে হবে এক্ষেত্রে আপনার আসক্তি তৈরি হয়েছে। এছাড়াও অতিরিক্ত কেনাকাটার ফলে পরিবার ও বন্ধুদের কাছ থেকে যখন নতুন কেনা পণ্য ও পণ্যের বিল লুকিয়ে রাখতে হবে, তখন বুঝতে হবে আসক্তি বেড়ে গেছে বেশ অনেকখানি।
গান শোনা
মজা করেই অনেকে বলেন, গান শুনলে নেশার মতো বোধ হয়। মজাচ্ছলে বলা কথাটিরও বাস্তব ভিত্তি রয়েছে। তবে আশার কথা হলো, এই আসক্তিটিকে জীবন থেকে সরানোর কোন প্রয়োজন নেই। ‘ন্যাচার’ জার্নালে প্রকাশিত সায়েন্টিফিক রিপোর্টের তথ্য মতে, উপভোগ্য ও পছন্দসই ভালো মানের সংগীত ‘ন্যাচারাল হাই’ অনুভূতি তৈরি করে। জার্নালে উল্লেখ করা হয়, ভালো খাবার খাওয়ার ফলে যেই অনুভূতিটি তৈরি হয়, গান শোনার ক্ষেত্রেও সেই একই অনুভূতিটি কাজ করে নিউরোট্রান্সমিটারে ডোপামিন নিঃসরণের মাধ্যমে।
সাইক্রিয়াটিস্ট ডেই নুয়েন জানান, এই কেমিক্যাল নিঃসরণের ফলে সেই একই কাজ বারবার করার আমাদের আগ্রহ তৈরি হয়। যে কারণে পারফেক্ট পছন্দসই গান বারবার শোনার প্রতি আমাদের খুব সহজেই আসক্তি চলে আসে।
চুল টানা
ট্রিকোটিলোম্যানিয়া (Trichotillomania) নামক কেমিক্যাল এর প্রভাবে চুল টানা কিংবা আঙ্গুলে চুল প্যাঁচানোর মতো কাজটি থেকে নিজেকে নিবৃত রাখতে পারেন না আসক্ত ব্যক্তি। ক্যালিফোর্নিয়ার সার্টিফায়েড ডার্মাটোলজিস্ট অ্যানা গুয়ানচে জানান, এটা অনেকটাই অন্যমনস্ক একটি অভ্যাস। টিভি দেখার সময়, কারোর কথা শোনার সময় একেবারেই অন্য মনে চুল তানার কাজটি করে থাকেন অনেকে।
সেলফি তোলা
যেখানেই যাওয়া হোক না কেন- নতুন সেলফি তোলা, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করা, নতুন লাইক কমেন্ট চেক করার মাধ্যমে ডোপামিন নিঃসরণের মাত্রা অনেকটা বেড়ে যায়। যার ফলাফল স্বরূপ একটা সময় পর এই অভ্যাসটি আসক্তিতে রূপ নেয়। ফলে ঘনঘন সেলফি তোলার প্রবণতা দেখা দেয় তুলনামূলক বেশ খানিকটা বেশি।
ব্যস্ততা
এই পয়েন্টে অনেকেই প্রশ্ন তুলবেন, ব্যস্ত থাকার সঙ্গে আসক্তির সম্পর্ক আছে কি আদৌ? আছে বৈকি। ছুটে চলার এই জীবনে ব্যস্ততার সাথেই যেহেতু সখ্যতা বেশি থাকে, সেক্ষেত্রে যে আসক্তিও তৈরি হবে এ নতুন কিছু নয়। যেহেতু মানুষ একা থাকতে পছন্দ করে না, নিজের একাকীত্বকে কাটাতে ও একা থাকার সময়কে সংক্ষিপ্ত করতে এখন অনেকেই ইচ্ছাকৃতভাবে অতিরিক্ত ব্যস্ততার প্রতি ঝুঁকে পড়ছে, ব্যস্ত জীবনযাপন করছে।
ভিডিও গেমস
সাইক্রিয়াটিস্ট ডেই নুয়েন জানান, খেলায় জিতে যাওয়ার আবেদনটা সবসময়ই অন্যরকম। এর সাথে যখন সম্পূর্ণ একটি ভার্চুয়াল জগতের সংমিশ্রণ ঘটে তখন বাস্তব জীবনের চাইতেও বেশি রোমাঞ্চ বোধ হয়। এই আসক্তিটি মাত্রাতিরিক্ত পর্যায়ে চলে যেতে পারে। অতি দীর্ঘ সময় ভিডিও গেম খেলা, স্ক্রিন টাইমের প্রতি বেশি ঝুঁকে যাওয়া, অন্যান্য কাজের তোয়াক্কা না করা, প্রয়োজনীয় বিষয়ে গাফেলতি করার মতো লক্ষণগুলো দেখা দিতে শুরু করে ধীরে ধীরে। যা ব্যাক্তিজীবনে তো বটেই, শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উপরেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে দেয়।
ভালোবাসা
এই পয়েন্টটি পড়ে বিদ্রূপাত্মক হাসি দেওয়ার কোন প্রয়োজন নেই। ‘ফিলোসফি, সাইকিয়াট্রি এন্ড সাইকোলজি’ জার্নালে প্রকাশিত গবেষণার তথ্যানুসারে জানা যায়- বিহাভিয়ারাল, সাইকোলজিক্যাল এন্ড নিউরোসাইকোলজিক্যাল ইঙ্গিত প্রমান করে যে, ভালোবাসার অনুভূতির সঙ্গে ক্রনিক ড্রাগ খোঁজার আচরণের মাঝে অনেক বেশি মিল রয়েছে। যে কারণে ভালোবাসার অনুভূতি প্রকট আকার ধারণ করলে মানুষ সঠিক-বেঠিক কিংবা লজিক্যাল চিন্তার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে।
আরও পড়ুন: দীর্ঘায়ু পাওয়া যাবে মাত্র দশ মিনিটেই