ধমনির সুস্থতায় উপকারী ৯ খাবার
ধমনি হৃদযন্ত্রের সবচেয়ে বড় রক্তনালীকা।
এটি সম্পূর্ণ শরীরকে হৃদযন্ত্রের সাথে যুক্ত করে অক্সিজেন ও পুষ্টি সরবরাহ করে। তাই রক্ত সরবরাহের জন্য ধমনি হওয়া উচিত নমনীয় ও চর্বিমুক্ত। কিন্তু বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে কমতে থাকে ধমনীর কার্যক্রম।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এর মতে, ২০১৫ তে হৃদরোগজনিত মৃতের গড় সংখ্যার প্রায় ২৬ শতাংশ, যেটি করোনারী ধমনি রোগ বলেও পরিচিত। এছাড়া স্বাস্থ্যগত অন্যান্য সমস্যার সাথে হৃদরোগের ঝুঁকিও বেশি দেখা দেয়।
হৃদরোগের কারন অনেক কিছুই হতে পারে- রক্ত সংক্রমণ, হাই কোলেস্টেরল, চর্বি এবং অন্য পদার্থ- যেগুলোর ফলে হার্টে পানি জমে ও ধমনিনালী বন্ধ হয়ে যাওয়া ইত্যাদি। এতে শরীরে রক্ত চলাচলে ব্যাঘাত ঘটে হার্ট অ্যাটাকের মতো সমস্যা হয় এবং মস্তিষ্কের সঠিক পরিমাণে রক্ত না যাওয়াতে স্ট্রোক জনিত সমস্যা হয়।
নিজেকে ও ধমনিকে সুস্থ রাখতে সর্বপ্রথম স্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণ প্রয়োজন। জেনে রাখুন যেসব খাদ্য ধমনী সুস্থ রাখতে সাহায্য করবে।
রসুন
মানসম্পন্ন অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, যেমন- ভিটামিন সি ও ই যা শরীরে মৌলগুলো মুক্ত করে দেয়। রসুনে এলডিএল তথা খারাপ কোলেস্টেরল লেভেল কমিয়ে দেয়, রক্তনালী প্রশস্ত করে, রক্ত চলাচল সচল করে এবং মহাধমনী ঠিক রাখে। প্রতিদিন রসুন খেলে রক্তচাপ ও ব্লাডসুগার লেভেল ঠিক থাকে। সেক্ষেত্রে চিকিৎসকেরা পরামর্শ দিয়ে থাকেন দিনে ১-২ টি কাঁচা রসুনের কোয়া খেতে।
ডালিম
অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট পূর্ণ লাল রঙের ফলটির দানাগুলো পলিফেনল বহন করে, যা স্বাস্থ্যের জন্য পুষ্টি ও আঁশের গুরুত্বপূর্ণ উৎস। শরীরের জন্য প্রয়োজন ভিটামিন সি এর ৪০ শতাংশ পাওয়া যাবে একটি ডালিমে থেকেই। শুধু খেয়াল রাখুন রক্তচাপ বা কোলেস্টেরলের সমস্যায় নির্দিষ্ট পরিমাণ ডালিম খেতে হবে। এই ফলটি রক্তের ঘনত্ব হালকা রাখে, সাথে ধমনী শক্ত হওয়া থেকে রক্ষা করে।
ব্রকলি
স্বাদ ও সুবিধার মধ্যে ব্রকলি খুব জনপ্রিয় সবজি। ব্রকলি প্রচুর পুষ্টির সাথে উচ্চমানের আঁশ ও ফ্যাট মুক্ত এবং ভিটামিন-সি, এ, বি৬, পটাশিয়াম ও প্রোটিন সমৃদ্ধ। এটি রক্তে কোলেস্টেরল হ্রাস করে এবং এতে উপস্থিত সালফোরাফেন ব্লাড সুগারের ফলে রক্তনালীর ক্ষতি হওয়া থেকে রক্ষা করে।
ওটস
গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ওটসের কিছু আঁশ যাকে বলা হয় বেটা-গ্লুকান, রক্তে থাকা এলডিএল কোলেস্টেরল, নন-এইচডিসি কোলেস্টেরল ও আপোবি কোলেস্টেরল কমিয়ে দেয়। অর্থাৎ ওটস তিন ধরণের কোলেস্টেরল কমাতে জন্য কাজ করে। এছাড়া ওটস খাওয়ার ফলে রক্তচাপ ঠিক থাকে এবং হৃদযন্ত্রের ক্ষতি হওয়া থেকে রক্ষা করে।
বাদাম
অসম্পৃক্ত ফ্যাটি অ্যাসিড (ওমেগা-৬ ও ওমেগা-৩) আঁশ, প্রোটিন ও পুষ্টির জন্য বাদাম উপকারী খাদ্য উপাদান। তবে খেয়াল রাখতে হবে বাদামে পর্যাপ্ত ক্যালরি রয়েছে, যা অতিমাত্রায় খাওয়া ঝুঁকির কারণ হতে পারে। প্রমান রয়েছে যে, কিছু বাদাম হৃদযন্ত্র, ব্লাডসুগার এবং নানান রোগ ভালো করতে খুবই কার্যকরী।
অলিভ অয়েল
জলপাইতে চাপ প্রয়োগ করে জলপাই তেল বা অলিভ অয়েল সংগৃহীত করা হয়, ফলে এটি সম্পূর্ণ শুদ্ধ থাকে। সবুজ সবজি বা ফল ও অলিভ ওয়েলের মিলে একটি অণু তৈরি করে যেটিকে বলা হয় ‘নাইট্রো ফ্যাটি অ্যাসিড’। এটি রক্তচাপ কমায় ও রক্তনালীকা শিথিল করে। এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ ওয়েলে উচ্চমানের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, ভিটামিন ই ও কে প্লাস রয়েছে।
ডাল
ডালে প্রচুর পরিমাণ প্রোটিন ও ফাইবার রয়েছে, যেটি শরীর সুস্থ রাখতে খুব প্রয়োজন। সবুজ, খয়েরি, লাল ও কালো রঙের ডালে প্রচুর পরিমাণ ফলেট ও ম্যাঙ্গানিজ রয়েছে। তাই ডাল হৃদরোগের ও ডায়বেটিসের ঝুঁকি কমাতে খুব গুরুত্বপূর্ণ।
টমেটো
প্রোটিনোয়েড লাইকোপেন অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের ফলে টমেটো লাল রং হয়ে থাকে। এটি সবুজ ও হালকা লাল টমেটোতেও রয়েছে। যে সকল খাদ্যে লাইকোপেন উপস্থিত, সেগুলো কোলেস্টেরল হ্রাস করে ও এর অক্সিডেশন কমিয়ে দিতে পারে। টমেটোতে আরও রয়েছে ভিটামিন এ ও সি, ফলিক এসিড, বিটা ক্যারোটিন এবং এতে প্রদাহ বিরোধী বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা হৃদরোগসহ নানান সমস্যা থেকে রক্ষা করে।
দারুচিনি
ধমনী বন্ধ হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যা থেকে রক্ষা পেতে দারুচিনি খুবই কার্যকরী উপাদান। পরীক্ষার মাধ্যমে দেখা গিয়েছে, দারুচিনি হৃদযন্ত্রে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে পরিপূর্ণ দারুচিনি অক্সিডেটিভ চাপ হ্রাসে সহায়ক। এছাড়া শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় ক্যালসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ ও আঁশের প্রধান উৎস হচ্ছে দারুচিনি।
এছাড়াও অনেক কার্যকরী খাদ্য উপাদান রয়েছে যা হৃদযন্ত্রের সাথে শরীরের অন্যান্য অঙ্গকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে থাকে। তবে সবকিছুই নিয়ম মেনে পরিমাণমতো গ্রহণ করা উচিত।
আরও পড়ুন: ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে চার পদ্ধতিতে চিয়া সিডস
আরও পড়ুন: হৃদরোগের ঝুঁকি কমে দারুচিনি গ্রহণে