ফোবিয়া: ভীতি যেখানে গ্রাস করে সবকিছু
ভয় পাওয়ার ব্যাপারটা আমাদের সবার মাঝেই আছে।
পরীক্ষায় খারাপ করা, অফিসে দেরী হয়ে যাওয়া অথবা প্রিয়জনকে হারিয়ে ফেলার ভয়। তবে আজকের বিষয়টি এমন সাধারণ ও সামগ্রিক ভয় নিয়ে নয়। আজকে কথা বলা হবে ফোবিয়া নিয়ে।
কী এই ফোবিয়া?
কোন জিনিস বা বস্তু, সংখ্যা, পশু, স্থান, ঘটনা অথবা যেকোন কিছুর ব্যাপারে অতিরিক্ত ভীতি, বিরক্তিভাব, ঘেন্নাভাব ও অস্বস্তিভাব কাজ করাকেই বলা হচ্ছে ফোবিয়া (Phobia). ফোবিয়ার দরুন যে বিষয়টিতে সমস্যা শুরু হয় তার মুখোমুখি হলে প্যানিক অ্যাটাক কিংবা অ্যাংজাইটি অ্যাটাক দেখা দেয়। সাধারণ অ্যাংজাইটি ডিসঅর্ডারের মতো যেকোন বিষয়ে বিচলিত হয়ে পড়া নয়, ফোবিয়া নির্দিষ্ট একটি বিষয়ের সাথেই জড়িত থাকে এবং সমস্যা তৈরি করে।
কী কারণে ফোবিয়া দেখা দেয়?
জিনগত অথবা আশেপাশের পরিবেশজনিত কারণে ফোবিয়া দেখা দিতে পারে। পরিবারের কোন সদস্যের অ্যাংজাইটি ডিসঅর্ডারের সমস্যা থাকলে, নিজের মাঝেও সেই সমস্যা দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এছাড়াও পূর্বের খারাপ অভিজ্ঞতা থেকেও ফোবিয়ার উৎপত্তি হতে পারে।
শারীরিক কোন সমস্যার জন্য মেডিকেশনের মধ্য থাকার ফলেও ফোবিয়া দেখা দিতে পারে। ট্রমাটিক ব্রেইন ইনজুরি কিংবা ডিপ্রেশনের কারণেও অনেক সময় ফোবিয়া দেখা দিয়ে থাকে।
ফোবিয়ার লক্ষণগুলো কী?
ফোবিয়ার ক্ষেত্রে খুব সাধারণ একটি লক্ষণ হচ্ছে প্যানিক অ্যাটাক। এছাড়াও বেশ কিছু লক্ষণ দেখা দেয়।
১. হার্টবিট অনেক বেড়ে যাওয়া।
২. শ্বাসপ্রশ্বাসে সমস্যা হওয়া।
৩. কথা জড়িয়ে যাওয়া বা কথা বলতে সমস্যা হওয়া।
৪. মুখের ভেতরের অংশ শুকিয়ে যাওয়া।
৫. পেটে ব্যথাভাব দেখা দেওয়া।
৬. বমিভাব দেখা দেওয়া।
৭. রক্তচাপ বেড়ে যাওয়া।
৮. হাত-পা কাঁপা।
৯. বুকে টানভাব বা ব্যথাভাব দেখা দেওয়া।
১০. মাথা ঘোরানো।
১১. অনেক বেশি ঘাম হওয়া।
ফোবিয়ার প্রকারভেদ
একশ’র উপরে বিভিন্ন ধরনের ফোবিয়া চিহ্নিত করা হয়েছে এ পর্যন্ত। এর মাঝে সবচেয়ে কমন কয়েকটি ফোবিয়ার বিষয়ে জানানো হলো।
অ্যাগোরাফোবিয়া
কোন স্থান অথবা পরিস্থিতিতে আটকা পড়ে যাওয়ার ভীতিকে বলা হয় অ্যাগোরাফোবিয়া। মূলত যাদের এই ফোবিয়া আছে, তারা মানুষজন ও ভিড়যুক্ত স্থান এবং ঘরের বাইরে উন্মুক্ত স্থানকে ভয় পায়। যাদের দীর্ঘসিন যাবত শারীরিক অসুস্থতা আছে, তাদের মাঝেই সাধারণত এই ফোবিয়াটি দেখা দেয় বেশি।
সোশ্যাল ফোবিয়া
নাম দেখেই বোঝা যাচ্ছে এটা কিসের বা কেমন ফোবিয়া হতে পারে। এই ফোবিয়ায় আক্রান্ত মানুষেরা সামাজিকতা বা অন্য মানুষের সাথে সাধারণ কথাবার্তা বলতেও ভয় পেয়ে থাকেন। কল রিসিভ করা কিংবা রেস্টুরেন্টে কোন খাবার অর্ডার দেওয়াও এদের জন্য কঠিন হয়ে পড়ে।
ক্লস্ট্রোফোবিয়া
বদ্ধ ও ছোট কোন স্থানে থাকার প্রতি ভীতি কাজ করে এই ফোবিয়া থাকার ফলে। এতে করে অনেকেই গাড়ি ও লিফটে চড়তে পারেন না।
হেমোফোবিয়া
শরীরের কোন স্থানে ক্ষতভাব বা রক্তের প্রতি এই ফোবিয়া কাজ করে। নিজের বা অন্যের রক্ত দেখার সাথে সাথেই এই ফোবিয়ায় আক্রান্তরা অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং তাদের প্যানিক অ্যাটাক হয়।
অ্যাক্রোফোবিয়া
এটা হলো উচ্চতাভীতি। উঁচু যেকোন স্থান যেমন পাহাড়, সেতু অথবা উঁচু বিল্ডিং এর থেকেও ভয় দেখা দেয়। এর ফলে ফোবিয়া আক্রান্ত ব্যক্তি যেকোন উঁচু জায়গায় যেতে ভয় পান এবং উঁচু কোন স্থানে গেলে অসুস্থ হয়ে পড়েন।
ডেন্টোফোবিয়া
দাঁতের চিকিৎসা, দাঁতের ডাক্তার এমনকি ডাক্তারের চেম্বার ও জিনিসপত্রের প্রতিও এই ফোবিয়ায় আক্রান্তদের ভীতি কাজ করে। জরুরি ভিত্তিতে দাঁতের চিকিৎসা প্রয়োজন হলেও তারা দাঁতের ডাক্তার দেখাতে চায় না।
ট্রিপোফোবিয়া
ট্রিপোফোবিয়ায় আক্রান্তরা একই স্থানে একসাথে অনেকগুলো গর্ত অথবা উঁচুনিচু জিনিসের দিকে তাকাতে পারে না। এতে করে তাদের অস্বস্তি ও খারাপ লাগা তৈরি হয়।
এছাড়াও মাকড়শা, সাপ, অন্ধকার, ৮ সংখ্যা, সাদা রঙ, ব্যাঙ, বই, হাসি, উচ্চশব্দ, ইঁদুর, একা থাকা, আলো কিংবা খাবার খাওয়াসহ চারপাশের সবকিছুতেই ফোবিয়া দেখা দিতে পারে।
ফোবিয়ার চিকিৎসা কী?
কগনিটিভ বিহাভিয়ারাল থেরাপি (CBT) হলো ফোবিয়ার সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে সবচেয়ে কমন থেরাপিউটিক ট্রিটমেন্ট। এছাড়াও অ্যান্টি-ডিপ্রেসেন্ট ও অ্যান্টি-অ্যাংজাইটি মেডিকেশনও ফোবিয়ার সমস্যা কমাতে সাহায্য করে।