সুস্বাস্থ্যের জন্য আঁশযুক্ত এই খাবারগুলো খেতে হবে প্রতিদিন
পরিপাক প্রক্রিয়ার জন্য ফাইবার (Fiber) তথা আঁশ দারুণ উপকারী উপাদান।
পরিচিত এই তথ্যটি অজানা থাকার কথা নয়। তবে একদম নতুন ও চমকপ্রদ একটি তথ্য জানিয়েছে ভারতের এলিট এস্থেটিক এন্ড কসমেটিক ক্লিনিকের ডাক্তার, ডায়টেশিয়ান ও পুষ্টিবিদেরা। তারা জানান, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার প্রায় ৮৫ শতাংশ নির্ভর করে পরিপাক ক্রিয়ার উপর!
শুধু তাই নয়। বেশ কিছু বিশদ গবেষণা থেকে গবেষক ও বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত করেছেন যে, মানুষের মগজ ও পাকস্থলীর মধ্যে সরাসরি সংযোগ আছে! তাইতো আঁশযুক্ত খাদ্য শুধুই পরিপাক ক্রিয়ার জন্য কিংবা সুস্বাস্থ্যের নয়, মানসিক সুস্থতার জন্যেও সমানভাবে প্রয়োজনীয়।
আরো জানুন: জীবাণু দ্বারা প্রভাবিত হয় আমাদের আবেগ ও আচরণ!
তবে বর্তমান সময়ের বেশ কিছু ডায়েটে আঁশযুক্ত খাবারের কমতি দেখা যায়। যা প্রকৃতপক্ষেই বিপদাশঙ্কাপূর্ণ। কারণ খাদ্যের আঁশ ক্যান্সার, হৃদরোগ, কিডনির পাথর, পিএমএস, ওবেসিটি ও ডায়বেটিস প্রতিরোধে ‘হেলথ গার্ড’ হিসেবে কাজ করে থাকে।
খাদ্য আঁশ প্রধানত দুই প্রকার হয়ে থাকে- দ্রবণীয় আঁশ ও অদ্রবণীয় আঁশ। দ্রবণীয় আঁশ পাকস্থলীতে গিয়ে জেলে রূপান্তরিত হয়। এই আঁশ পরিপাক হয় খুব ধীরে। ফলে শরীরের কোলেস্টেরলের মাত্রা ও রক্তে চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে।
অন্যদিকে অদ্রবণীয় আঁশে কোন পরিবর্তন হয় না। একদম অপরিবর্তিত ও অক্ষত অবস্থায় এই আঁশ বৃহদন্ত্র থেকে পরিত্যাক্ত হয়ে গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ট্র্যাক্টে পতিত হয়।
পরিষ্কারভাবে বোঝা যাচ্ছে খাদ্য আঁশ কখনোই পুরোপুরিভাবে শরীরে শোষিত (Absorb) হয় না। যে কারণে প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে আঁশযুক্ত খাবার খাওয়া প্রয়োজন। গবেষকদের মতে প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় ২৫-৩৮ গ্রাম আঁশযুক্ত খাবার থাকা উচিৎ।
কোন খাবারে কতটুকু আঁশ রয়েছে জানা না থাকলে, সঠিক পরিমাণে আঁশযুক্ত খাবার খাওয়া বেশ সমস্যার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। আজকের ফিচারে তুলে ধরা হলো কিছু উচ্চমাত্রার আঁশযুক্ত খাবারের নাম। যা একই সাথে সহজলভ্য, স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিকর।
শিমের বিচি
প্রোটিন ও আঁশযুক্ত দারুণ পুষ্টিকর খাবার হলো শিমের বিচি। প্রতি কাপ শিমের বিচিতে ১৬.৩ গ্রাম পরিমাণ আঁশ থাকে। ঝোল রান্না কিংবা ভর্তা হিসেবে খাওয়া যাবে শিমের বিচি।
ডাল অথবা কুইনো
প্রোটিন, আয়রন, ফলেট, ম্যাঙ্গানিজ ও ফসফেটের উৎস হলো বিভিন্ন প্রজাতির ডাল ও কুইনো। এক কাপ পরিমাণ ডাল কিংবা কুইনোতে পাওয়া যাবে ১৫.৬ গ্রাম আঁশ।
আরো জানুন: স্বাস্থ্যকর কুইনো-চিংড়ি সালাদ
মটরশুঁটি
ভিটামিন সমূহ, ফলেট, ওমেগা-৩ সমূহ, প্রোটিন ও অদ্রবণীয় আঁশ থাকে মটরশুঁটিতে। প্রতি কাপ মটরশুঁটিতে ৮.৮ গ্রাম আঁশ থাকে।
ব্রকলি
ব্রকলিকে বলা হয়ে থাকে ফুলকপি ঘরানার ‘পাওয়ার-প্যাক’ সবজী। পর্যাপ্ত পরিমাণ অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের সাথে প্রতি কাপ ব্রকলিতে পাওয়া যাবে ৫.১ গ্রাম আঁশ।
ওটস
ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে ওটসের চেয়ে উপকারী খাবার আর নেই। সকালের নাস্তায় দুধের সাথে ওটস খাওয়া সবচেয়ে ভাল। এক কাপ ওটসে ৪ গ্রাম আঁশ থাকে।
তিসি
তিসিতে (Flax Seeds) প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি উপাদান থাকার কারণে বেশ জনপ্রিয় একটি খাদ্য উপাদান এটি। এতে রয়েছে প্রোটিন, থায়ামিন, ম্যাঙ্গানিজ, ফসফরাস, ম্যাগনেসিয়াম, কপার, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমূহ ও আঁশ। শরীরে বাড়তি কোলেস্টেরল কমাতে ও মেনোপজের উপসর্গ কমাতে দারুণ সাহায্য করে তিসি। এক টেবিল চামচ তিসিতে ৩ গ্রাম পরিমাণ আঁশ থাকে।
আরো জানুন: খাওয়ার মাঝে পানি পান: উচিৎ না অনুচিত
নাশপাতি
স্বল্প মিষ্টির এই ফলে আঁশের সঙ্গে সাথে ওমেগা-৬ ফ্যাটি অ্যাসিড সমূহ। যা মগজের কোষ ও নার্ভ সমূহকে সুস্থ রাখতে কাজ করে। একটি মাঝারি আকারের নাশপাতিতে ৫.৫ গ্রাম পরিমাণ আঁশ পাওয়া যাবে।
আর্টিচোকস (Artichokes)
একেবারেই নতুন ও অপরিচিত সবজী ঘরানার এই খাবারটি হলো আর্টিচোক। একে বলা হয়ে থাকে সর্বোচ্চ অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার। এতে আরো আছে ভিটামিন- এ, সি, ই, বি, কে, পটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও ফসফেট। একটি মাঝারি আকারের আর্টিচোকে ১০.৩ গ্রাম আঁশ থাকে।
ব্রাসেলস স্প্রাউট
খুচরা বাজারে সহজলভ্য না হলেও সুপারশপ গুলোতে খুঁজলেই পাওয়া যাবে ব্রাসেলস স্প্রাউট। দ্রবণীয় ও অদ্রবণীয় উভয় ধরণের আঁশের পাশাপাশি এতে থাকে ভিটামিন- সি, কে, বি১, বি২, বি৬, ফলেট ও ম্যাঙ্গানিজ। প্রতি কাপ ব্রাসেলস স্প্রাউটে থাকে ৪.১ গ্রাম আঁশ।
অ্যাভোকাডো
স্বাস্থ্যকর ফ্যাট থাকার জন্য অ্যাভোকাডো কোলেস্টেরলের মাত্রা ও হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। এছাড়াও মজার এই ফলটিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফলেট, ভিটামিন- সি, ই, বি৬, কে ও পটাসিয়াম। অর্ধেকটি কাঁচা অ্যাভোকাডো থেকে পাওয়া যাবে ৬.৭ গ্রাম আঁশ।