অ্যাসিডিটির সমস্যা: কারণ ও পরিত্রাণের উপায়
অ্যাসিডিটির সমস্যায় ভোগা মানুষের সংখ্যা নেহাত কম নয়। অস্বস্তিকর ও যন্ত্রণাদায়ক এই সমস্যাটির ফলে রোগীদের দীর্ঘদিন ধরে ভুগতে হয়। টক ঢেঁকুর ওঠা, বুক জ্বালাপোড়া করা, পেট ফেঁপে যাওয়া সহ নানান ধরণের শারীরিক উপসর্গ দেখা দেয় এই সমস্যাটির ফলে।
কেন অ্যাসিডিটির সমস্যা দেখা দেয়?
নানান কারণেই অ্যাসিডিটির সমস্যা দেখা দিতে পারে। তার মাঝে কিছু হলো-
১. খাবার খাওয়ায় অনিয়ম করা।
২. অস্বাস্থ্যকর ও ভাজাপোড়া খাবার বেশি খাওয়া।
৩. অতিরিক্ত ধূমপান কিংবা মদ্যপান করা।
৪. ওজন বেশি বেড়ে যাওয়া।
৫. গর্ভকালীন অ্যাসিডিটির সমস্যা দেখা দেওয়া।
কীভাবে অ্যাসিডিটির সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যাবে?
সঠিক জীবন ব্যবস্থা ও নিয়মতান্ত্রিক খাদ্যাভাসই অ্যাসিডিটির সমস্যা কমাতে পারে অনেকখানি। বিরক্তিকর অ্যাসিডিটি থেকে নিজেকে রক্ষা করতে মেনে চলুন কিছু সহজ নিয়ম-
খাওয়ার শুরুতে পানি পান
খাবার খাওয়ার মাঝে কখনোই পানি পান করা যাবে না। এতে অ্যাসিডিটি বৃদ্ধি পায়। খাবার খাওয়ার অন্ততপক্ষে আধাঘন্টা আগে ও পরে পানি পান করতে হবে।
নাস্তা খেতে হবে ভারী
সাধারণত সকালের নাস্তা খুব হালকা কিছু খাওয়া হয়। আসলে নিয়ম হলো সকালেই ভারী কিছু নাস্তা করা। দুপুরে তার চেয়ে কিছুটা কম খাবার ও রাতে সবচেয়ে কম খাবার খেতে হবে।
পেট কিছু খালি রাখতে হবে
খাওয়ার সময় বেহিসেবিভাবে খাওয়ার ফলে পেট অনেক বেশি ভরে যায়। যা অনুচিত। খেতে হবে পেট কিছুটা খালি রেখে। অর্থাৎ পেট ভরে খাবার খাওয়া যাবে না। এতে পাকস্থলিস্থ খাদ্য ভালোভাবে পরিপাক হতে পারে না। বিধায় দেখা দেয় অ্যাসিডিটির সমস্যা।
ঘুম থেকে উঠেই পানি পান
সকালে ঘুম থেকে উঠেই এক গ্লাস পানি পান করতে হবে। এক গ্লাসের বেশি পানি পান করতে পারলে আরও ভালো।
প্লাস্টিকের বোতল পরিহার করা
প্লাস্টিকের বোতল ব্যবহার করা শরীরের জন্য ভীষণ ক্ষতিকর। যার প্রভাব দেখা দেয় অ্যাসিডিটির সমস্যার উপরেও। নিত্য ব্যবহারের জন্য তাই কাঁচের বোতল ব্যবহার করতে হবে।
রাতে আঁশযুক্ত খাবার না খাওয়া
রাতের বেলা খাবার নির্বাচনে সতর্ক থাকা প্রয়োজন। অতিরিক্ত আঁশযুক্ত খাবার অ্যাসিডিটির সমস্যা তৈরি করে। তাই রাতের খাবার হতে হবে আঁশবিহীন অথবা স্বল্প আঁশযুক্ত।
দুই ঘন্টা পর অল্প পরিমানে খাবার খাওয়া
অ্যাসিডিটির সমস্যা তৈরি হওয়ার অন্যতম বড় কারণ হলো একবারে অনেক বেশি পরিমানে খাবার খাওয়া। যে কারণে পরামর্শ দেওয়া হয় দুই ঘন্টা অন্তর স্বল্প পরিমাণ খাবার খাওয়ার জন্য। এতে করে খাবার ঠিকভাবে পরিপাক হবার সময় পায় ও অ্যাসিডিটির সমস্যা এড়ানো যায়।
পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান
প্রতিদিন অন্তত আট থেকে দশ গ্লাস পানি অবশ্যই পান করতে হবে। পানি কম পান করা হলেই অ্যাসিডিটির প্রকোপ দেখা দেওয়া শুরু করবে।
ভরপেটে এক্সারসাইজ করা যাবে না
খাবার খাওয়ার দুই-তিন ঘন্টা পর এক্সারসাইজ করা যাবে। ভরপেটে এক্সারসাইজ করার ফলে পাকস্থলিস্থ অ্যাসিড অনেক বেশি নিঃসৃত হয়। ফলে অ্যাসিডিটির সমস্যা দেখা দেয়।
নিয়ন্ত্রনে রাখতে হবে ওজন
সঠিক ও স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভাস এবং শরীরচর্চার মাধ্যমে ওজনকে নিয়ন্ত্রনে রাখতে হবে। বাড়তি ওজন ও ওবেসিটি অ্যাসিডিটি দেখা দেবার অন্যতম একটি কারণ। ওজন নিয়ন্ত্রনে থাকলে অ্যাসিডিটির সমস্যাও নিয়ন্ত্রনে চলে আসে।
ধূমপান বর্জন করতে হবে পুরোপুরি
ধূমপানের ফলে তৈরি হওয়া নেতিবাচক চাপ অ্যাসিডিটির সমস্যা তৈরি করে, যা থেকেই দেখা দেয় বুক জ্বালাপোড়ার সমস্যা। দীর্ঘমেয়াদী অ্যাসিডিটির সমস্যাও ধূমপানের অভ্যাস বাদ দেবার ফলে কমে যায়।
বাদ দিতে হবে অ্যালকোহল
মদ্যপানের ফলে শরীরে তৈরি হয় পানি শূন্যতা। যার প্রভাব থাকে বহুদিন পর্যন্ত। এই পানিশূন্যতা থেকে অ্যাসিডিটির প্রভাব তৈরি হয় ও দেখা দেয় বুক জ্বালাপোড়ার সমস্যা। যে কারণে মদ্যপানের অভ্যাস বাদ দিতে হবে একেবারেই।
অতিরিক্ত ঝালযুক্ত খাবার এড়িয়ে যেতে হবে
বিস্বাদ কিংবা পানসে খাবার খেতে ভালো না লাগলেও বাড়াবাড়ি ঝালযুক্ত খাবার একেবারেই খাওয়া যাবে না। বিশেষত কোন খাবার তৈরিতে শুকনা মরিচ ব্যবহার করা হলে, সেই খাবার এড়িয়ে যাওয়াই শ্রেয়।
পরিহার করতে হবে ক্যাফেইন
কফি কিংবা চায়ের স্ট্রং ক্যাফেইন অনেক ক্ষেত্রেই অ্যাসিডিটি তৈরি জন্য দায়ী। অ্যাসিডিটির সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে চাইলে বাদ দিতে হবে ক্যাফেইন গ্রহণ।
পেটের কাছে টাইট জামা পরা যাবে না
পেটের কাছে টাইট ফিট জামা পরার ফলে খাদ্য ভালোভাবে পরিপাক হতে পারে না। ফলে দেখা দেয় অ্যাসিডিটির সমস্যা।
কোন খাবারে বাড়ে অ্যাসিডিটির সমস্যা
একেকজন মানুষের একেকটি খাবারে অ্যাসিডিটির সমস্যা বৃদ্ধি পায়। কারোর হয়তো চকলেট খাওয়ার সাথে সাথেই বুক জ্বালাপোড়া শুরু হয়, কেউ হয়তো টমেটো একেবারেই খেতে পারেন না। নিজের কোন খাবারে অ্যাসিডিটির সমস্যা বাড়ে সেটা নির্ধারন করতে হবে।
চেয়ারে দিতে হবে দুপুর ঘুম
অ্যাসিডিটির সমস্যার সাথে দুপুরে ঘুমানোর অভ্যাস আছে? তবে চেষ্টা করুন চেয়ারে আধশোয়া হয়ে ঘুমানোর। এতে অ্যাসিডিটি কম হবে।
ঘুমাতে হবে মাথা কিছুটা উঁচু রেখে
অ্যাসিডিটির সমস্যা খুব বেড়ে গেলে ঘুমাতে হবে কিছুটা উঁচু বালিশে মাথা রেখে। এতে পেটের খাবার ভালোভাবে পরিপাক হয় এবং অ্যাসিডিটি তৈরি হয় না।
প্রয়োজন পর্যাপ্ত ঘুম
প্রতিদিন অন্তত ছয়-আট ঘণ্টা অবশ্যই ঘুমাতে হবে। ঘুম কম হলে পাকস্থলিস্থ খাদ্য ভালোভাবে পরিপাক হয় না। ফলে অ্যাসিডিটির সমস্যা দেখা দেয় অথবা বেড়ে যায়।
ঘুমানোর আগে খাবার না খাওয়া
যদি ঘুমাতে যাওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে পেট ভরে খাবার খাওয়া হয়, তবে অ্যাসিডিটির সমস্যা দেখা দেবার ব্যাপারে নিশ্চিত থাকতে পারেন। ঘুমাতে যাওয়ার অন্তত দুই-তিন ঘন্টা আগে খাবার খাওয়ার নিয়ম। এতে করে পাকস্থলী পর্যাপ্ত সময় পায় খাবার ঠিকভাবে পরিপাক হবার জন্য।
কোন খাবার অ্যাসিডিটির সমস্যা কমাতে সহায়ক?
উপকারী খাবার কমাবে অ্যাসিডিটি
অ্যালোভেরার জুস, কলা, কাজু বাদাম ও আদা খাওয়ার ফলে বুক জ্বালাপোড়া ও অ্যাসিডিটির সমস্যা কমে যায় অনেকটাই।
সুগার ফ্রি চুইংগাম
সুগার ফ্রি চুইংগাম চিবানোর ফলে স্যালাইভা অনেক বেশি নিঃসৃত হয়। যা অ্যাসিডিটির প্রকোপ ও বুক জ্বালাপোড়াভাব কমাতে অনেকটা কার্যকর।
ঠাণ্ডা পানি পান
যদি হুট করে বুক জ্বালাপোড়া ভাব দেখা দেয় তবে এক-দুই গ্লাস ঠাণ্ডা পানি পান করতে হবে। ঠাণ্ডার সমস্যা থাকলে নরমাল পানি পান করলেও হবে।
পান করতে হবে বেকিং সোডার মিশ্রণ
অ্যাসিডিটির সমস্যা থেকে তাৎক্ষণিকভাবে মুক্তি চাইলে এক গ্লাস পানিতে এক চা চামচ বেকিং সোডা মিশিয়ে ধীরে ধীরে পান করতে হবে।
অ্যাসিডিটির সমস্যা না থাকলে আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন শরীর কতটা সুস্থ ও ঝরঝরে বোধ হয়। তাই সঠিক খাদ্যাভাস ও জীবন ব্যবস্থার মধ্যে থাকার চেষ্টা করতে হবে এবং দূরে সরিয়ে দিতে হবে অ্যাসিডিটি নামক যন্ত্রনাকে।