গ্রামেও দুষ্প্রাপ্য ‘থানকুনি’
অনন্য ঔষধি গুণে ভরপুর ‘থানকুনি’ পাতা। শুধু পাতা নয়, এই উদ্ভিদটির শিকড়েও রয়েছে বহু স্বাস্থ্য উপকারিতা। শহরের সচেতন মানুষতো বটেই, গ্রামের সাধারণ মানুষও জানেন এর গুণাগুণ সম্পর্কে। তাইতো অনেকেই সময়ে অসময়ে এই ‘থানকুনি’ পাতার রস খেয়ে থাকেন।
শুধু রস নয়, ‘থানকুনি ভর্তা’ গ্রামীণ সমাজের একটি অন্যতম জনপ্রিয় খাবার। কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হলো উপকারী ও ঔষধি থানকুনি পাতার দেখা ইদানিং সচরাচর পাওয়া যায় না। শহর অঞ্চলে তো দূরের কথা, গ্রামের পর গ্রাম খুঁজেও দেখা মেলে না থানকুনির।
থানকুনির বৈজ্ঞানিক নাম হলো Centella asiatica. ইংলিশে বলা হয় Centella বা Indian pennzwor.
ছোট প্রজাতির এই ভেষজ উদ্ভিদ বাংলাদেশ, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়াসহ এশিয়ার বিভিন্ন প্রান্তে পাওয়া যায়। থানকুনিকে স্থানীয়ভাবে বিভিন্ন নামে ডাকা হয়। যেমন: তিতুরা, আদামনি, টুনিমুনি, ধুলাবেগুনসহ আরও অনেক নামে।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে একাধিক ঔষধের চেয়েও অধিক উপকারিতা পাওয়া যাবে এই থানকুনি থেকে। বেশ কিছু স্বাস্থ্য উপকারিতার মাঝে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো-
১. মুখে ঘা ও অন্যান্য ক্ষত দূর করে।
২. পেটের অসুখে থানকুনির ব্যবহারে উপকার পাওয়া যায়।
৩. গ্যাস্ট্রিক সমস্যায় অন্যতম ঔষধ এই থানকুনি।
৪. সর্দির সমস্যায় থানকুনি পাতা ও শিকরের রস খেলে উপকার পাওয়া যায়।
৫. থানকুনি পাতা হজম শক্তি ও মুখের রুচি বাড়াতে সাহায্য করে।
৬. আমাশয়ের সমস্যায় থানকুনি পাতার রস খেলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।
৭. হঠাৎ করে কাশি বৃদ্ধি পেলে থানকুনি পাতার রস গ্রহণে উপকার পাওয়া যায়।
৮. ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা দূর করতে থানকুনি পাতা কার্যকরি।
এতগুলো গুণের অধিকারী থানকুনি একটা সময় বাংলাদেশের সর্বত্র পাওয়া গেলেও এখন তার দেখা পাওয়া কষ্টকর হয়ে উঠেছে। শুষ্ক মৌসুমে জমির আল বা বিভিন্ন মাঠে থানকুনির দেখা মিললেও বর্ষা মৌসুমে অতি প্রয়োজনেও পাওয়া যায় না এই থানকুনি।
হবিগঞ্জ শহরের শ্যামলী এলাকার বাসিন্দা আনোয়ারা বেগম হবিগঞ্জ-বানিয়াচং এলাকায় প্রায় ৫ কিলোমিটার জায়গা জুড়ে খোঁজ করেও থানকুনি পাতার সন্ধান পাননি। অবশেষে সুবিদপুর এলাকায় দূর্বা ঘাসের আড়ালে কয়েকটি থানকুনি পাতার খোঁজ পেলে বয়স্ক স্বামীর জন্য সেখান থেকেই মাটি মেশানো বেশ কয়েকটি থানকুনি সংগ্রহ করেন তিনি।
তিনি বলেন- ‘আমরা যখন ছোট ছিলাম তখন এগুলো চারদিকে বড় হয়ে উঠতে দেখতাম। কিন্তু এখন এলাকার পর এলাকা ঘুরেও একটা থানকুনি পাওয়া যায় না।’
তিনি আরও বলেন- ‘থানকুনি পাতার খোঁজে শহর থেকে গ্রামে আসলাম। কিন্তু গ্রামেও এখন আর থানকুনি পাতা পাওয়া যায় না।’
বানিয়াচং উপজেলার সুবিদপুর গ্রামের আরতি বালা বলেন- ‘আগে পুকুরপাড় ও ক্ষেতের আইলে অনেক টুনিমুনি (থানকুনি) পাতা পাওয়া যাইত। কিন্তু এখন আমিও মাঝে মধ্যে সকালে টুনিমুনির রস খাওয়ার লাগি খোঁজি কিন্তু পাই না।’
একই উপজেলার কবিরপুর এলাকার বৃদ্ধ আলী হোসেন বলেন- ‘ছোটবেলা আমাদের যখন অসুখ হতো তখন দেখতাম গ্রামের ডাক্তার থানকুনি পাতার রস দিয়া ঔষধ বানাইত। এগুলো খেয়েই বিভিন্ন রোগ সারত। তখনই বুঝতে পারতাম থানকুনি পাতার গুণাগুণ অনেক বেশি।’
তিনি আরও বলেন, ‘মাঝে মধ্যে হাওর থেকে তুলে এনে থানকুনি খাই। কিন্তু এখন আর পাওয়া যায় না।’