ভুতুড়ে ভবনে কলেজের ছাত্রী হোস্টেল
জমিদার বাড়ির পুরোনো জরাজীর্ণ ভবনে চলছে ময়মনসিংহের গৌরীপুর মহিলা ডিগ্রি (অর্নাস) কলেজের একমাত্র ছাত্রী হোস্টেল। ছাত্রীদের দাবি, ভবনটি দ্রুত সংস্কার করা না হলে যেকোনো মুহূর্তে ভবন ধসে দুঘর্টনা ঘটতে পারে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ভবনের ছাদের চারপাশে আগাছা জন্মেছে। দেয়ালের বুক চিরে উঁকি দিচ্ছে গাছের শিকড়। খসে পড়ছে দেয়ালের পলেস্তার। সন্ধ্যার পর কীটপতঙ্গের ডাক ও চামচিকার উড়াউড়িতে সৃষ্টি হয় ভুতুড়ে পরিবেশ। তার মাঝে চলে ছাত্রীদের পড়াশোনা ও থাকা।
শিক্ষার্থীরা জানান, হোস্টেলে সিট নিলে প্রতি মাসে খাওয়া বাবদ ২ হাজার ১০০ টাকা জমা দিতে হয়। বাইরে থাকতে গেলে খাওয়া ছাড়াই সিট ভাড়া ৩ হাজার টাকা দিতে হয়। তাই সেবার মান খারাপ হলেও টাকা বাঁচাতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এখানেই থাকতে হচ্ছে।
কলেজ সূত্রে জানা গেছে, এই কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক, স্নাতক (ডিগ্রি পাস কোর্স) ছাড়াও পাঁচটি বিষয়ে স্নাতক (সম্মান) কোর্স চালু রয়েছে। কলেজের সর্বমোট শিক্ষার্থীর আড়াই হাজারের বেশি। এর বিপরীতে ছাত্রী হোস্টেল মাত্র একটি। সিট সংখ্যা মাত্র ৪৮। এ কারণে বেশির ভাগ শিক্ষার্থীই সিটের জন্য আবেদন করেন না।
সরজমিনে আরও দেখা গেছে, গৌরীপুরের জমিদার বজেন্দ্র কিশোর রায় চৌধুরীর দেড়শত বছরের পুরোনো পরিত্যক্ত বাড়ির একটি কাঠের দোতালায় কলেজের ছাত্রী হোস্টেল। সিট সংখ্যা ৪৮টি। প্রতিটি সিটেই গাদাগাদি করে ২/৩ শিক্ষার্থী থাকছেন। হোস্টেলের কক্ষগুলোর দরজা-জানালাগুলো জরাজীর্ণ। সিলিং ও টিনের চাল ভাঙাচোরা থাকার কারণে বৃষ্টি হলেই শিক্ষার্থীদের বই খাতা-জামাকাপড় নষ্ট হয়।
দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী তাহমিনা তাসমিন জানান, রাতে বিদ্যুৎ না থাকলে অন্ধকারে হোস্টেলে ভুতুড়ে পরিবেশ তৈরি হয়। ওই অন্ধকারের মধ্যেই শিক্ষার্থীদের কলেজ ক্যাম্পাসে গিয়ে খাবার পানি সংগ্রহ হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার বাইরের অঞ্চলের অনেক শিক্ষার্থী এই কলেজে এসে পড়াশোনা করেন। কিন্তু আবাসন সংকটের কারণে হোস্টেলে সিট না পেয়ে অনেক শিক্ষার্থী পৌর শহরের বিভিন্ন এলাকায় মেস কিংবা বাসা ভাড়া নিয়ে থাকেন। কিন্তু সেখানে পানি ও বিদ্যুৎ ব্যবহারের ওপর মালিক পক্ষের কড়াকড়ির কারণে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। পাশাপাশি কিছু এলাকায় বখাটের উৎপাতের কারণে শিক্ষার্থীরাও নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন।
কলেজের অর্নাস দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ফাতেমাতুজ জোহুরা জানান, হোস্টেলে সিট না পাওয়ায় বাইরে ভাড়া বাসা নিয়ে থাকতে হয়। এ জন্য তাদের অতিরিক্ত টাকা খরচ হয়।
গৌরীপুর মহিলা ডিগ্রি (অনার্স) কলেজের অধ্যক্ষ রুহুল আমিন বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, ‘কলেজের ছাত্রী হোস্টেলের ভবন নির্মাণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।’