পদ্মায় ভাঙন: বিপর্যস্ত শিবচরের চরাঞ্চলের জীবনমান
গত কয়েকদিনের পদ্মা নদীর ভাঙনে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে পদ্মা ও আড়িয়াল খাঁ নদীর তীরবর্তী মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার চরাঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রা। ঘর বাড়ি জায়গা জমি হারিয়ে অনেকেই ইতোমধ্যে নিঃস্ব হয়ে গেছেন।
পদ্মা ও আড়িয়াল খাঁ বেষ্টিত শিবচরের ১৯টি ইউনিয়নের মধ্যে বেশ কয়েকটি ইউনিয়ন নদী বেষ্টিত। এর মধ্য পদ্মা নদী বেষ্টিত উপজেলার বন্দোরখোলা, কাঁঠালবাড়ি ও চরজানাজাত ইউনিয়ন। তাছাড়া চরজানাজাত ইউনিয়নটি উপজেলার মূল ভূ-খণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন পদ্মার চরে গড়ে উঠা একটি গুরুত্বপূর্ণ জনপদ। পদ্মার বুকে জেগে ওঠা এই চরজানাজাত ইউনিয়নসহ বাকি দুইটি ইউনিয়নের হতদরিদ্র হাজার হাজার মানুষ এই নদী ভাঙনে নিঃস্ব হচ্ছে। হারাচ্ছে বাড়ি ঘর, ফসলি জমি।
আরও পড়ুন: পদ্মায় ভাঙনের ঝুঁকিতে শিবচরের বাতিঘর
বাড়ি ঘর হারিয়ে কেউ রাস্তায় পলিথিন দিয়ে অস্থায়ী ঘর বানাচ্ছে, কেউ চলে যাচ্ছেন মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলায়, কেউ বা আবার ফরিদপুরের সদরপুরে।
জানা যায়, গত কয়েক দিনের টানা পানি বৃদ্ধি ও নদী ভাঙনের ফলে প্রতিদিনই ভেঙে চলেছে এ উপজেলার বিস্তীর্ণ জনপদ। গত এক সপ্তাহ ধরে এ তিনটি ইউনিয়নে শুরু হয়েছে ব্যাপক ভাঙন। পদ্মার আগ্রাসী ভাঙনের কাছে অসহায় হয়ে পড়েছে এই এলাকার মানুষ। বসতভিটা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাট-বাজার, রাস্তা-ঘাট ও ফসলি জমি হারিয়ে প্রতিদিনই নিঃস্ব হচ্ছে এই এলাকার শতশত মানুষ। পদ্মায় পানি বৃদ্ধির ফলে এ এলাকার অধিকাংশ এলাকাই পানিতে তলিয়ে গেছে। ফলে ভাঙনের আগাম অবস্থা বোঝাও কঠিন হয়ে পড়েছে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই গাছপালা, বাড়ি ঘর, মসজিদ, মন্দির চলে যাচ্ছে নদীগর্ভে। কোনো মতে বাপ দাদার রেখে যাওয়া বসতবাড়ি ভেঙে নিয়ে নিরাপদ স্থানে ছুটছে ভাঙন কবলিত এলাকার মানুষ।
সরেজমিনে সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) এসব এলাকা থেকে জানা যায়, গত ৭ দিনে কাঁঠালবাড়ি ইউনিয়নে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ দুই শতাধিক ঘর-বাড়ি পদ্মা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। বন্দোরখোলা ইউনিয়নে দেখা দিয়েছে ব্যাপক নদী ভাঙন। গত এক সপ্তাহে এই এলাকার প্রায় দেড় শতাধিক পরিবার তাদের বসতভিটা হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছে। এ ইউনিয়নে নদী ভাঙন আতঙ্কে কমপক্ষে আরও তিন শতাধিক পরিবার ঘর-বাড়ি ভেঙে নিরাপদ স্থানে চলে যাচ্ছেন।
আরও পড়ুন: পদ্মায় ভাঙন: মাদারীপুরে প্রাথমিক বিদ্যালয় বিলীন
চরজানাজাত ইউনিয়নে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, কমিউনিটি ক্লিনিক, একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ কয়েক কিলোমিটার রাস্তাঘাট ও বসতবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়াও নদী ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে বন্দোরখোলা ইউনিয়নের নুরুদ্দিন মাদবরের কান্দি এসইএসডিপি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়,বন্দোরখোলা ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্সে ভবন, বন্দোরখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কাজীরসূরা হাট, ২টি কমিউনিটি ক্লিনিক, ৩টি মোবাইল অপারেটরের টাওয়ারসহ শতশত ঘর-বাড়ি, ব্রিজ, কালভার্ট, গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা।
তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড ভাঙন ঠেকাতে কিছু জিও ব্যাগ ও কিছু জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার ফলে কিছু স্থাপনা এখনো দাঁড়িয়ে আছে। তবে এগুলো কিছু দিনের মধ্য বিলীন হওয়ার আশঙ্কা করেছে এলাকাবাসী।
শিবচর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান বি এম আতাহার জানান, গত এক সপ্তাহে পদ্মা নদীর ভাঙনে কাঁঠালবাড়িসহ তিনটি ইউনিয়নে অসংখ্য বাড়িঘর স্কুল, হাসপাতালসহ বিভিন্ন স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বসতভিটা হারিয়ে সড়কে, খোলা স্থানে আশ্রয় নিয়েছে ভাঙন কবলিত এলাকার মানুষ।
আরও পড়ুন: শিবচরে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ শতাধিক ঘর বাড়ি নদী গর্ভে বিলীন
শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) আল নোমান বলেন, ‘গত কয়েকদিনের পদ্মা নদীর ভাঙনে শিবচরের চরাঞ্চলে ব্যাপক ক্ষয় ক্ষতি হয়েছে। বিশেষ করে ২ শতাধিক ঘরবাড়ি, একটি স্কুল, একটি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, হাট-বাজারসহ বিভিন্ন স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।'
মাদারীপুর জেলা প্রশাসক ওয়াহিদুল ইসলাম বলেন, ‘নদী ভাঙন ঠেকাতে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। এছাড়াও উপজেলা ও জেলা প্রশাসন ভাঙন কবলিত এলাকা নিয়মিত পরিদর্শন করছে।