ন্যারোগেজ ইঞ্জিন এখন ইতিহাস!
১৮৬২ সালের ১৫ নভেম্বর ক্যু ঝিক ঝিক শব্দ তুলে আর কালো ধোঁয়ার কুণ্ডলী পাকিয়ে হিস হিস শব্দে পশ্চিমবঙ্গের রানাঘাট রেলওয়ে জংশন থেকে তৎকালীন পূর্ব বাংলার কুষ্টিয়ার জগতি স্টেশনে এসে দাঁড়িয়েছিল একটি ট্রেন। ট্রেনটি টেনে এনেছিল একটি বাষ্পীয় ইঞ্জিন (লোকমোটিভ)। সেদিনেই প্রথম ট্রেন দেখেছিল এ দেশের মানুষ।
রেলের ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে ন্যারোগেজ লাইনের একটি বাষ্পীয় ইঞ্জিন দাঁড়িয়ে আছে নীলফামারীর সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার প্রবেশদ্বারের সামনে প্রদর্শনী ইয়ার্ডে। এটি সযত্নে সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে। তা এক সময় সচল ছিল। এটি তৈরি করা হয় ১৯৩৬ সালে। বিজ্ঞানী জেমস ওয়াটের বাষ্পীয় ইঞ্জিন আবিষ্কারের অনেক পরে। ইঞ্জিনটি নির্মাণ করে ইংল্যান্ডের ডব্লিউজি বাগলান লিমিটেড নামের একটি কারখানা। ১০ ফুট ৬ ইঞ্চির উচ্চতা আর ১৯ ফুট দীর্ঘ ইঞ্জিনটির ওজন ১১ দশমিক ৭৬ টন।
সৈয়দপুরে যে ন্যারোগেজের বাষ্পীয় ইঞ্জিনটি রয়েছে তা এক সময় চলত খুলনা-রূপসা ইস্ট থেকে বাগেরহাট পর্যন্ত। সময়টা ১৯৬৩ থেকে ১৯৬৯ সাল। রেলপথটি ১৯১৮ সালে নির্মাণ করা হয়েছিল। ৩২ কিলোমিটার রেলপথে স্টেশন ছিল ১০টি।
স্টেশনগুলো হলো, খুলনার রূপসা থেকে কর্ণপুর-সামন্তসেনা-বাহরদিয়া-মূলঘর-খানজাহানপুর-যাত্রাপুর-ষাটগম্বুজ রোড-বাগেরহাট কলেজ ও বাগেরহাট। ১৯৮০ সালে রেলপথটিকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। সেই থেকে বাষ্পীয় (কয়লা) ইঞ্জিনের ইতি ঘটেছে।
বাংলাদেশে এখন ব্রডগেজ (বড়) ও মিটারগেজ (ছোট) রেলপথে ট্রেন চলছে। কোনো রেলপথে আর বাষ্পীয় ইঞ্জিন দেখা যায় না। সে স্থলে জায়গা করে নিয়েছে ডিজেল চালিত ইঞ্জিন। ন্যারোগেজ এখন ইতিহাস।
সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার বিভাগীয় তত্ত্বাবধায়ক (ডিএস) মো. জয়দুল ইসলাম বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, ‘সৈয়দপুর রেল কারখানায় প্রবেশপথে যে ন্যারোগেজ ইঞ্জিনটি রয়েছে তা এক সময় খুলনা বাগেরহাট এলাকায় চলাচল করত। ইঞ্জিনটি দেখতে আসেন দেশি-বিদেশি পর্যটকসহ স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরাও।’