শিবচরে প্লাস্টিক-পলিথিন পুড়িয়ে ডিজেল-পেট্রোল উৎপাদন

  • মো. রফিকুল ইসলাম, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, মাদারীপুর
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

পরিত্যক্ত প্লাস্টিক-পলিথিন পুড়িয়ে ডিজেল-পেট্রোল উৎপাদন, ছবি: বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম

পরিত্যক্ত প্লাস্টিক-পলিথিন পুড়িয়ে ডিজেল-পেট্রোল উৎপাদন, ছবি: বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম

মাদারীপুরের শিবচরে পরিত্যক্ত প্লাস্টিক ও পলিথিন থেকে প্রক্রিয়াজাতের মাধ্যমে ডিজেল ও পেট্রোল উৎপাদন করেছেন এক ব্যক্তি। শিবচর উপজেলার কাঁঠালবাড়ি ইউনিয়নের কাতার ফেরত আব্দুর রব হাওলাদার এ প্রক্রিয়ায় তেল উৎপাদনের কাজ করছেন। উৎপাদিত পেট্রোল দিয়ে মোটরবাইক এবং ডিজেল দিয়ে পাওয়ার ট্রিলার চালিয়ে ইতোমধ্যে সফলতা পেয়েছেন তিনি।

আবদুর রব হাওলাদার শিবচর উপজেলার কাঁঠালবাড়ি ইউনিয়নের বাবু মোল্লার কান্দি গ্রামের লোকমান হাওলাদারের ছেলে।

বিজ্ঞাপন

তিনি জানান, দরিদ্র পরিবারে জন্ম নিয়ে মাত্র পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশুনা করেছেন তিনি। এর কয়েক বছর পর পারিবারিকভাবে বিবাহ করেন। তারপর প্রায় তিন বছর আগে দালালের মাধ্যমে কাতারে যান তিনি। পাঁচ লাখ টাকা খরচ করে বিদেশ গিয়েও ভালো চাকরি পাননি। দুই বছর প্রবাসে থাকার পর দেশে ফিরে আসেন তিনি।

কাতারে থাকাকালীন সময় চায়নাদের দেখে শিখেছেন, পলিথিন ও প্লাস্টিক পুড়িয়ে ডিজেল এবং পেট্রোল উৎপাদনের প্রক্রিয়া। তখন দেশে ফিরে এটি করার জন্য চিন্তা করেন তিনি।

বিজ্ঞাপন
পরিত্যক্ত প্লাস্টিক-পলিথিন পুড়িয়ে ডিজেল-পেট্রোল উৎপাদন
প্লাস্টিক বর্জ্য পুড়িয়ে উৎপাদিত জ্বালানি, ছবি: বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম

 

জানা যায়, দুই মাস পূর্বে ১০ হাজার টাকা খরচ করে একটি ড্রাম ও কিছু প্লাস্টিক বোতল নিয়ে তিনি তেল উৎপাদনের কাজটি শুরু করেন। শিবচরসহ পার্শ্ববর্তী জাজিরা উপজেলা থেকে ভাঙ্গারি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে পরিত্যক্ত প্লাস্টিক সংগ্রহ করেন। এই প্রক্রিয়ায় এক কেজি পলিথিন জ্বালিয়ে প্রায় সাতশত গ্রাম ডিজেল উৎপাদন করা যায়।

বুধবার (১৬ অক্টোবর) সরেজমিনে তার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, একটি তাপ সহনশীল ড্রামে প্রায় ৭ থেকে ৮ কেজি প্লাস্টিক ও পলিথিন ঢুকিয়ে ড্রামের মুখটি বন্ধ করে দিয়ে লাকড়ি ও পাটকাঠি দিয়ে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা তাপ দিয়ে ড্রামের প্লাস্টিকগুলো গলানো হচ্ছে। এর পর গলানো প্লাস্টিক থেকে বের হওয়া বাষ্পকে কিছু কেমিক্যাল ব্যবহার করে প্রথমে ডিজেলে রূপান্তর করা হয়। পরে সেই ডিজেলকে আরও রিফাইন করে পেট্রোল তৈরি হয়।

শুধু তেল নয়, এখানে মিথেন গ্যাস ও ছাপার কাজে ব্যবহারের জন্য কালি তৈরির কাজটি তিনি কিছুদিনের মধ্য শুরু করবেন বল জানান।

রব হাওলাদার জানান, বর্তমানে এক লিটার ডিজেল তৈরিতে খরচ হচ্ছে ২০ টাকা। আর পেট্রোল তৈরিতে খরচ হচ্ছে ২৫ টাকা।

তিনি বলেন, 'আপনাদের (সাংবাদিকদের) মাধ্যমে সরকারিভাবে সহায়তা পেলে এই প্রযুক্তির আরও সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন ঘটিয়ে প্লাস্টিক বর্জ্যের সঠিক ব্যবস্থাপনা এবং তা থেকে তেল উৎপাদনের মাধ্যমে স্বল্প মূল্যে দেশে জ্বালানির চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে।'

স্থানীয় নাদিম মোল্লা বলেন, 'রব ভাই আমাদের এলাকার ফেলে দেওয়া এসব বর্জ্য থেকে পেট্রোল ও ডিজেল তেল উৎপাদন করে আমাদের উপকার করেছেন। এটা আমাদের জন্য গর্বের বিষয়। তবে আপনাদের (সাংবাদিকদের) মাধ্যমে যদি সরকারিভাবে তাকে সাহায্য, সহযোগিতা করা হয় তাহলে সে আরও ব্যাপকভাবে তেল উৎপাদন করতে পারবে বলে আমি আশা করি।'