শীতের আগমনে খেজুর গাছ পরিচর্যায় ব্যস্ত গাছিরা
ঋতুচক্রে এখন চলছে হেমন্তকাল। পঞ্জিকার পাতায় আজ কার্তিক মাসের ২১ তারিখ। সামনে পড়ে আছে পুরো অগ্রহায়ণ মাস। এরপর আসবে শীতকাল (পৌষ-মাঘ)। কিন্তু শীতকালের আগেই প্রকৃতিতে শীত শীত ভাব। এমন পরিবেশ বুঝে যশোরের গাছিরা আগাম খেজুর গাছ পরিচর্যা শুরু করেছেন।
যারা খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহের কাজ করেন তাদেরকে গাছি বলে। আগাম রস পেতে গাছিরা পুরোদমে খেজুর গাছ পরিচর্যা শুরু করেছেন। গাছ তোলা, ঠিলে ধোয়া, রস জ্বালানোর চুলা তৈরিসহ নানা কাজে ব্যস্ত যশোরের খেজুর গাছিরা।
মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) দুপুরে যশোর সদর উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে এমন দৃশ্য দেখা গেছে।
জানা গেছে, যশোরের ঐতিহ্য খেজুরের রস-গুড়-পাটালি। এ জেলার উৎপন্ন গুড়-পাটালি স্বাদ বেশ পরিচিত। তাই খেজুর গুড়ের প্রসঙ্গ উঠে আসলে সবার আগে যশোরের কথা উঠে আসে। এ জেলায় খেজুরগাছের জন্য একটি গ্রামের নামই হয়েছে খাজুরা গ্রাম। এ গ্রামের প্রায় ৮০ ভাগ মানুষ খেজুর গাছ চাষ ও রস সংগ্রহের সাথে সম্পৃক্ত।
যশোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, যশোর জেলার প্রায় আট উপজেলায় খেজুর গাছ রয়েছে। কিন্তু সবচেয়ে বেশি যশোর সদর, মণিরামপুর, শার্শা, চৌগাছা, বাঘারপাড়ায়। যশোর জেলায় ৭ লাখ ৯১ হাজার ৫১৪টি খেজুর গাছ রয়েছে। যেখান থেকে গত বছর ৪ হাজার ৬৪০ মেট্রিক টন গুড়-পাটালি ও প্রায় ৪০ মেট্রিক টন রস উৎপাদিত হয়েছে। এবছর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় ৫ লাখ মেট্রিক টন গুড়-পাটালি উৎপাদন।
যশোর খাজুরা গ্রামের খেজুর গাছি আব্দুর জলিল জানান, যশোরের ঐতিহ্য আজ বিলুপ্তের পথে। কারণ আগের মতো খেজুর গাছ এখন আর দেখা যায় না। এবছর ৩০টির মতো খেজুরগাছ পরিচর্যা করছেন তিনি। আগাম রস আনতে পারলে রস এবং নলেন গুড়-পাটলির ভালো দাম পাওয়া যাবে।
একই এলাকার চাষি নজরুল, ইবাদত, সালাম মোল্লা জানান, খেজুর গাছ থেকে রস বের করা এবং ভোরে গাছ থেকে রস নামানো খুব কঠিন কাজ। ঝুঁকি নিয়ে গাছ কাটা হয়। এতো কষ্ট করেও গুড়ের দাম না পাওয়ায় অনেক চাষি গুড় বানানো বন্ধ করে দিচ্ছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উপ-পরিচালক ইমদাদ হোসেন সেখ বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে বলেন, 'যশোরের ঐতিহ্য খেজুর গাছ অনেক কমে গেছে। সরকারিভাবে খেজুর গাছ রোপণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বর্তমান প্রজন্ম এই খেজুর গাছের গুড় সংগ্রহে উৎসাহী না হওয়ায় গাছ কমেছে।'