ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে রংপুর অঞ্চলে ট্রেন চলাচল
রংপুর অঞ্চলে রেললাইনের বেহাল দশায় ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে চলাচল। এ অঞ্চলে চলাচল করা ৮টি আন্ত:নগর ট্রেনে প্রতিদিন যাতায়াত করেন অন্তত ৬০ হাজার মানুষ। রেল বিভাগের তথ্যমতে, চলতি বছর রংপুরের বিভিন্ন স্থানে ১০টি ট্রেন দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটেছে।
গেটম্যান ছাড়াই ট্রেন চলাচল করে এ অঞ্চলের নীলফামারী জেলার চিলাহাটি রেললাইনে। লাইনটির বিভিন্ন স্থানে স্লিপার নষ্ট হয়ে গেছে, অনেক স্থানে নেই নাট-বল্টু। ব্যালাস্টের (পাথর) ঘাটতিও রয়েছে।
কুড়িগ্রাম-তিস্তা রেলপথে বড়পুলের পাড় নামক স্থানে দেবে গেছে সেতুর পিলার। মাটি সরে ঝুঁকিপূর্ণ হয়েছে প্রায় ৩৩ কিলোমিটার রেলপথ। একই অবস্থা লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধাসহ রংপুর অঞ্চলের অধিকাংশ রেলপথের।
এ কারণে নিরাপদ ট্রেন চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে। নিরাপদ ও সেকশনাল গতিতে ট্রেন চলাচলের জন্য রেলপথগুলোর স্লিপার বদলানো, ব্যালাস্টিং, টেম্পিং ও ডিপ স্ক্রিনিং করা অতি জরুরি হয়ে পড়েছে।
রেলওয়ের তথ্য মতে, রংপুর বিভাগের আট জেলায় স্টেশন রয়েছে ৮৫টি। এর মধ্যে জনবল সংকটে ২২টি স্টেশন চলছে মাস্টার বিহীন। ৪৭১টি ক্রসিংয়ের ঝুঁকিপূর্ণ স্থান ১৪৫টি। আটটি আন্ত:নগর ট্রেনে প্রতিদিন অন্তত ৬০ হাজার মানুষ যাতায়াত করেন।
রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানায়, নীলফামারী জেলার নয়টি স্টেশনের মধ্যে ৫টিতেই নেই স্টেশন মাস্টার। আর ৯টি ক্রসিংয়ের দুইটি বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। গাইবান্ধায় ১১টি স্টেশন ও ৬৬টি ক্রসিং থাকলেও নেই পাঁচটির স্টেশন মাস্টার। এখানকার ৩৯টি ক্রসিং ঝুঁকিপূর্ণ। কুড়িগ্রামে ৮টি স্টেশন রয়েছে। এর ৪৭টি ক্রসিংয়ের মধ্যে সাতটি ঝুঁকিপূর্ণ।
তিনটি স্টেশন নিয়ে সাজানো ঠাকুরগাঁওয়ে রেলপথে ৫৬টি ক্রসিং। এরমধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ ছয়টি। পঞ্চগড় জেলার ২টি স্টেশনের ৬টি ক্রসিংয়ের মধ্যে মাত্র দুইটি ঝুঁকিপূর্ণ।
লালমনিরহাট জেলার ১৪টি স্টেশনের ছয়টি স্টেশন মাস্টার নেই। ৪০টি রেল ক্রসিংয়ের মধ্যে ৩৩টিই ঝুঁকিপূর্ণ। এছাড়া রংপুরের ১০টি স্টেশনের ছয়টি স্টেশন মাস্টার বিহীন চলছে। এ জেলার ৪০টি ক্রসিংয়ের মধ্যে ১৭টি ঝুঁকিপূর্ণ।
এদিকে স্টেশন মাস্টার, গেটকিপারসহ প্রতিটি বিভাগে জনবল সংকট দূর না হলে রেলপথের উন্নয়ন সম্ভব নয় বলে দাবি করছেন রেলওয়ের লালমনিরহাটের অতিরিক্ত বিভাগীয় পরিবহন ও তথ্য কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন।
এই কর্মকর্তা বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে বলেন, গেটকিপার, স্টেশন মাস্টার সংকট আছে। সেটা যদি পূরণ করা হয়, তাহলে আমরা নিরাপদে এবং সুষ্ঠুভাবে ট্রেন চলাচল করতে পারব। অনেক স্থানে প্লাটফর্ম তৈরি করা জরুরি হয়ে পড়েছে। তবে আগের চেয়ে রেলপথ অনেকটা আধুনিকায়ন করা হচ্ছে। চাহিদানুযায়ী রেলপথ নির্মাণে একটু সময় লাগবে।
লালমনিরহাট রেলওয়ে বিভাগীয় প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেন জানান উন্নত ও নিরাপদ রেলপথের জন্য সার্ভে করা হচ্ছে।
তিনি বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, আমরা খুব দ্রুত একটি নকশা এবং প্লাটফর্ম বিষয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য যথাযথ কর্তৃপক্ষ বরাবর প্রেরণ করব।
নিরাপদ রেলপথ আন্দোলনের নেতা রংপুর নাগরিক কমিটির সদস্য পলাশ কান্তি নাগ বলেন, রেলপথ নিরাপদ করতে অনিয়ম ও দুর্নীতি দূর করতে হবে। সারাদেশে ব্রডগেজ লাইন চালু করতে হবে। ট্রেনের সংখ্যা বাড়ানো দরকার। সরকারকে প্রতিবছর রেলখাতে যে ঘাটতি গুণতে হচ্ছে, এর কারণ অনুসন্ধান করতে হবে।