পাওনা শোধ না করে পাওনাদারের বিরুদ্ধেই মামলা!
একটি সমবায় সমিতি থেকে ২ লাখ টাকা ঋণ নেন চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা আব্দুল জব্বার। মাসিক কিস্তিতে সেই ঋণ পর্যায়ক্রমে পরিশোধ করেন তিনি। কিস্তি পরিশোধের সঙ্গে সঞ্চয় বাবদ তার ১৭ হাজার ১০০ টাকা জমা হয়। ঋণের টাকা পরিশোধের পর সঞ্চয়ের সেই টাকা ফেরত পাননি আব্দুল জব্বার।
২ লাখ টাকা ঋণ নেওয়ার সময় তিনটি খালি চেক জমা দিয়েছিলেন আব্দুল জব্বার। ঋণ পরিশোধের পর চেকগুলো ফেরত দেওয়ার কথা থাকলেও সেই চেক তিনটি ফেরত না দিয়ে পৃথকভাবে তার বিরুদ্ধে সাড়ে ১৬ লাখ টাকার মামলা দিয়েছেন সমবায় সমিতির পরিচালকরা।
আব্দুল জব্বারের ভাষ্যমতে, ২০১২ সালে চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলার উয়ারুক বাজারের সেবা সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি লিমিটেডের কাছ থেকে ২ লাখ টাকা ঋণ নেন তিনি। সেই সময় তিনটি খালি চেক সমিতির কাছে জমা দেন। সোনালী ব্যাংক শাখার দেওয়া তিনটি চেক নম্বর যথাক্রমে— ৭৩৮৩৬২৭, ৭৩৮৩৬২৯ ও ৭৩৮৩৬৩০। ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাসে চাঁদপুর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালত তার ওই তিনটি চেক বাতিল করেন।
জানা গেছে, ২০১৪ সালের চাঁদপুরের সমবায় সমিতিগুলোর দুরাবস্থা শুরু হয়। তারপর শাহরাস্তি উপজেলার উয়ারুক বাজারে অবস্থিত সেবা সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতির কার্যক্রম বন্ধ হয়ে হয়ে যায়। ২০১৪ সালের পর আব্দুল জব্বারের বিরুদ্ধে তার বাড়ির নজরুল ইসলাম রুবেল প্রথম ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা, তারপর সমিতির পরিচালক জিয়াউল হক লিটন ৩ লাখ টাকার মামলা করেন। সম্প্রতি ৭৩৮৩৬৩০ নম্বরের চেকের বিপরীতে রাশেদুল ইসলাম নামে কুমিল্লার এক ব্যক্তি ১০ লাখ টাকার উকিল নোটিশ পাঠিয়েছেন।
আব্দুল জব্বার একজন ক্ষুদে ব্যবসায়ী হলেও বর্তমানে তিনি দিনমজুর। তিনি হাজীগঞ্জ উপজেলার হাটিলা টঙ্গিরপাড় মিয়াজী বাড়ির মো. তাজুল ইসলামের ছেলে। তিনটি চেকের মামলা ঘেঁটে দেখা গেছে, প্রত্যেকটি মামলাতে বাদীরা একে অপরের সাক্ষী হিসেবে রয়েছেন।
প্রথম চেকের বিপরীতে মামলা দায়ের করা নজরুল ইসলাম রুবেলের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আব্দুল জব্বার আমার কাছ থেকে নগদ ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা নিয়েছেন। ওই টাকা বাবদ চেক দিয়েছেন তিনি। এখন আমরা আদালতের শরণাপন্ন হয়েছি। উচ্চ আদালত যদি চেকটি বাতিল করেন তাহলে আমাদের আর কিছু করার নেই।
সেবা সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কোন উত্তর দিতে রাজি হননি নজরুল ইসলাম রুবেল।
দ্বিতীয় মামলাটি দায়ের করা সেবা সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতির পরিচালক জিয়াউল হক লিটন বলেন, আমি কোন সমিতিতে ছিলাম না। এমন সমিতির নামও শুনিনি। আব্দুল জব্বারের কাছে আমি টাকা পাব। টাকার জন্য চেকের মামলা দায়ের করেছি। উচ্চ আদালত যে রায় দেবে আমি সেই রায় মেনে নেব।
সেবা সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতির বন্ধ হওয়াকালীন সময়ের ম্যানেজার বলেন, আমি ২০১৪ সালে সমিতিতে যোগ দেই। একদিন অফিসে এসে সমিতির পরিচালক জিয়াউল হক লিটন ২৩টি খালি চেক নিয়ে যান। সেই চেকগুলোর মধ্যে আব্দুল জব্বারের তিনটি চেকও ছিল।
জানতে চাইলে ভুক্তভোগী আব্দুল জব্বার বলেন, নজরুল ইসলাম রুবেল আমাদের বাড়ির বাসিন্দা। দীর্ঘদিন ধরে সম্পত্তি নিয়ে তার সঙ্গে পারিবারিক বিরোধ চলছে। তারই জের ধরে রুবেল সমিতির পরিচালকদের যোগসাজশে একে একে মিথ্যা চেকের মামলা দায়ের করেছেন। নজরুল ইসলাম রুবেল চাঁদপুর সহকারী আইনজীবী সমিতির সদস্য। তিনি বিভিন্নভাবে মামলাগুলো দায়ের করে আমাকে হয়রানি করছেন। আরও মামলা-হামলা করার হুমকি দিয়ে আসছেন। আমি সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে এসব মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক চেক জালিয়াতির মামলা থেকে পরিত্রাণ চাই।
এ বিষয়ে জেলা সমবায় কর্মকর্তা মমিনুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, মিথ্যা চেকের মামলা হলে ভোক্তভুগী মানহানির মামলা করতে পারেন। বন্ধ হওয়া সমবায়গুলো আমাদের নজরধারিতে রয়েছে।