কাঁঠালবাড়ি-শিমুলিয়ায় চলছে ইলিশ প্রতারণা
রাজধানীর সঙ্গে দেশের দক্ষিণবঙ্গের ২১টি জেলার মানুষের যোগাযোগের প্রবেশদ্বার হিসেবে ক্ষাত কাঁঠালবাড়ি-শিমুলিয়া নৌরুট। যার ফলে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ ব্যবহার করছে এ পথ। আর মানুষের চলাচলকে কেন্দ্র করে ঘাটের দুই পাড়ে নামে বেনামে গড়ে উঠেছে প্রায় শতাধিক হোটেল ও রেস্তোরাঁ। এসব হোটেলে ইলিশের নামে বিক্রি হচ্ছে চায়না জাতের ইলিশ। এছাড়া হোটেলগুলোতে খাবারের দাম ও মান নিয়ন্ত্রণের বাহিরে।
যাত্রীদের মাঝপথে খাবার গ্রহণে নতুন বিড়ম্বনা সৃষ্টি করেছে এসব অসাধু হোটেল ব্যবসায়ীরা। দীর্ঘক্ষণ ঘাট পাড়ে অপেক্ষাকৃত সাধারণ যাত্রীরা বাধ্য হয়ে খেয়ে যাচ্ছেন পদ্মার ইলিশের পরিবর্তে চায়না ইলিশ।
বহু দিন ধরেই দুই ঘাটের ইলিশের চাহিদা সর্বত্র। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এখানে ইলিশ খেতে আসেন ভোজন রসিকরাও। এ বিশাল চাহিদা পূরণে ঘাটের দুই পাড়ে গড়ে ওঠেছে অনেক ছোট-বড় হোটেল। আর এ সুযোগকে কেন্দ্র করে এক শ্রেণীর অসাধু খাবার হোটেল ব্যবসায়ী মানুষের প্রয়োজনকে ব্যবহার করে ব্যবসার নামে করে যাচ্ছে প্রতারণা। প্রতারণার পাশাপাশি দুই ঘাটের হোটেলগুলো অতিরিক্ত মূল্য আদায় করে বলে অভিযোগ রয়েছে।
অন্যদিকে কাঁঠালবাড়ি-শিমুলিয়ায় নৌরুটে চলাচলরত ১৮টি ফেরী ও ৮৭টি লঞ্চেও একই অবস্থা। প্রতিটি লঞ্চের নিচ তলায় আর ফেরীর দ্বিতীয় তলায় রয়েছে খাবার হোটেল। সেখানেও একই চিত্র দেখা পরে।
শনিবার (২৩ নভেম্বর) দুপুরে সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, ঘাটের দুই পাড়ের অধিকাংশ হোটেলে বড় বড় সাইজের ইলিশ মাছ ভাজাসহ বিভিন্ন প্রকার খাবার সাজিয়ে রাখা হয়েছে। গাড়ি থেকে নামতে না নামতেই হোটেলের সামনে কর্মরত লোকেরা বলতে থাকেন 'এই মামা আসেন তাজা খেয়ে যান' 'স্যার আসেন পদ্মার ইলিশ' 'এই স্যারকে বড় সাইজের ইলিশটা দাও' বলে ডাকাডাকি ও টানাটানি শুরু করেন।
তাদের ডাকে আর অনুরোধে সাড়া দিয়ে হোটেলের কাছে গিয়ে দেখা গেছে, পদ্মার ইলিশের বদলে বিক্রি হচ্ছে চায়না ইলিশ। এ মাছের নেই কোন ঘ্রাণ ও স্বাদ। এসব ইলিশের এক পিচ মাছ বিক্রি করা হচ্ছে দেড়শত থেকে দুইশত টাকায়। তাতে দেখা যায়, একটি মাছের দাম হয় প্রায় দুই হাজার টাকা।
দোকানে গিয়ে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে ছবি তুলতে গেলে, হোটেলে কর্মরত সকলের মুখ কালো হয়ে যায়। আসল ইলিশের কথা জানতে চাইলে হাত ধরে টেনে নিয়ে যায় হোটেলের পিছনে। সেখানে বাক্সতে বরফ দিয়ে রাখা ৫-৬টি ইলিশ মাছ দেখিয়ে বলেন এটি আপনাদের জন্য। আপনারা সাংবাদিক আগে বলবেন তো স্যার।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক হোটেল ব্যবসায়ী বলেন, 'এখন পদ্মার ইলিশ বেশি পাওয়া যায়না, তাই চায়না ইলিশকে পদ্মার ইলিশ বলে বিক্রি করি। আর এতে লাভও হয় অনেক।
ঘাটে চলমানরত একটি লঞ্চে খাবার খেতে বসা আতিকুর রহমান নামে এক যাত্রী বলেন, বাড়ি থেকে আসা যাওয়ার পথে আমি ইলিশ ভাজা আর ডাল দিয়ে ভাত খাই। কয়েকদিন যাবৎ খেয়াল করছি ইলিশের কোনো ঘ্রাণ নেই।
এসব লঞ্চ, ফেরী ও ঘাটে অবস্থিত গুটিকয়েক ব্যবসায়ীর স্বার্থ না দেখে দেশের সাধারণ মানুষের স্বার্থে ঘাট এলাকার খাবারের মান ও দাম নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে ঘাট দিয়ে চলাচলকারী যাত্রীরা।