চেয়ারম্যানের দুর্নীতির তদন্তে পিয়ন
রংপুরের পীরগাছায় ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ভিজিডির এক মাসের প্রায় ১২ টন খাদ্যশস্য (চাল) বিতরণ না করেই কার্ডে স্বাক্ষর নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগের প্রেক্ষিতে উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয়ের পিয়ন (এমএলএসএস) হানিফ উদ্দিনকে প্রতিনিধি হিসেবে তদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছিল। এ নিয়ে ভুক্তভোগী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে, অনিয়মের অভিযোগে বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) ভিজিডির খাদ্যশস্য বিতরণ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ফলে ভিজিডি কার্ডধারীদের এক মাসের খাদ্যশস্য থেকে বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
ভিজিডি কার্ডধারীদের অভিযোগে জানা যায়, উপজেলার তাম্বুলপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রওশন জামিল রবু ৩৯০ জন ভিজিডি কার্ডধারীর মাঝে অক্টোবর মাসের খাদ্যশস্য বিতরণ করেননি। গত মঙ্গলবার(১০ ডিসেম্বর) থেকে নভেম্বর মাসের ভিজিডির ৩০ কেজি করে খাদ্যশস্য বিতরণ শুরু করা হয়। কিন্তু ভিজিডির সুবিধাভোগীদের মাঝে সরবরাহকৃত কার্ডের মধ্যে অক্টোবর ও নভেম্বর মাসের ঘরে স্বাক্ষর নেওয়া হয়। অক্টোবর মাসের খাদ্যশস্য না দিয়ে স্বাক্ষর নেওয়ার বিষয়টি প্রকাশ হলে সুবিধাভোগীদের মাঝে চাপা ক্ষোভ ও উত্তেজনা দেখা দেয়। পরে তারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট বিষয়টি অবগত করলে বৃহস্পতিবার খাদ্যশস্য বিতরণ না করার জন্য ইউপি চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দেওয়া হয়।
ভিজিডি কার্ডধারী মর্জিনা বেগম(৫০) বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘আমরা অক্টোবর মাসের খাদ্যশস্য না পেলেও ইউপি চেয়ারম্যান ও তার লোকজন নভেম্বরের খাদ্যশস্য বিতরণের সময় অক্টোবর ও নভেম্বর মাসের ঘরে জোরপূর্বক স্বাক্ষর নিচ্ছেন।’
তাম্বুলপুর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আঙ্গুর আলম বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘আমাদের হিসাব অনুযায়ী কার্ডধারীরা অক্টোবর ও নভেম্বর মাসের খাদ্যশস্য পাওয়ার কথা। কিন্তু চেয়ারম্যান শুধু নভেম্বর মাসের খাদ্যশস্য দিয়ে দুই মাসের ঘরে স্বাক্ষর করে নিচ্ছেন।’
অভিযোগ অস্বীকার করে তাম্বুলপুর ইউপি চেয়ারম্যান রওশন জামিল রবু বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘খাদ্যশস্য সঠিকভাবে বিতরণ করা হয়েছে। অক্টোবর মাসের খাদ্যশস্য বিতরণ করা হলেও কার্ডে স্বাক্ষর নেওয়া হয়নি। এবারে নভেম্বর মাসের খাদ্যশস্য বিতরণের সময় দুই মাসের ঘরে স্বাক্ষর নেওয়া হচ্ছে।’
এ বিষয়ে ওই ইউপির ভিজিডির খাদ্যশস্য বিতরণে তদারকির দায়িত্বে থাকা সহকারী খাদ্য কর্মকর্তা মাহমুদুল ইসলাম বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘আমি তদারকি অফিসার হলেও কোনো দিন খাদ্যশস্য বিতরণে সময় উপস্থিত থাকিনি। নিয়মানুযায়ী খাদ্যশস্য বিতরণের বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান আমাকে অবগত করবে। কিন্তু ইউপি চেয়ারম্যান আমাকে কখনও অবগত করেনি।’
তিনি আরো বলেন, ‘ভুক্তভোগীদের সাথে কথা বলে ও বিতরণের কার্ড দেখে অনিয়মের বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছি। ইউপি চেয়ারম্যান এক মাসের খাদ্যশস্য কম দিয়ে আত্মসাতের পায়তারা চালাচ্ছেন। অনিয়মের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।’
এ বিষয়ে উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা সেলোয়ারা বেগম বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি। তদন্তের জন্য আমার প্রতিনিধি হিসেবে অফিসের পিয়নকে পাঠানো হয়েছিল। তদন্ত প্রতিবেদন পেলে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
পীরগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জেসমীন প্রধান বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘অনিয়মের অভিযোগে তাম্বুলপুর ইউনিয়নের ভিজিডির খাদ্যশস্য বিতরণ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পরবর্তীতে সংশ্লিষ্ট অফিসার গিয়ে যে মাসের খাদ্যশস্য বিতরণ করবেন সেই মাসের স্বাক্ষর নিবেন।’