বরাদ্দের ৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ, তদন্তের দায়িত্বে জড়িত কর্মকর্তারা
প্রাথমিক স্কুলের ক্লাস সজ্জিতকরণের জন্য বরাদ্দের ৫ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে পীরগাছা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট স্কুলের প্রধান শিক্ষকদের বিরুদ্ধে। শিক্ষা কর্মকর্তা রফিক-উজ-জামান স্থানীয় কয়েকটি স্কুলের প্রধান শিক্ষকদের সঙ্গে যোগসাজশে কোনো কাজ না করেই ভুয়া বিল ভাউচার দেখিয়ে এই টাকা আত্মসাৎ করেন।
ইতোমধ্যে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে এই শিক্ষা কর্মকর্তাকে একই জেলার পীরগঞ্জ উপজেলায় বদলি করা হয়েছে।
গত তিন মাসে বরাদ্দের অর্থ দিয়ে কাজ না করে আত্মসাতের বিষয়ে একাধিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করা হয় সংশ্লিষ্ট দফতরে। অবাক করা বিষয় হলো, অভিযোগের ভিত্তিতে ওঠা অনিয়মের তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তাদের। ফলে কাজ না করে টাকা আত্মসাতের সত্যতা পাওয়া গেলেও নেওয়া হচ্ছে না কোনো ব্যবস্থা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রধান শিক্ষক ও কতিপয় বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতির সঙ্গে যোগসাজশে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট ক্লাস্টারের সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তারা বরাদ্দের টাকা হরিলুট করেছেন। বেশির ভাগ বিদ্যালয়ে কাজ না করেই বরাদ্দের টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। কিছু বিদ্যালয়ে শুধু সড়কের পাশের দেয়ালে লাল-সবুজ রঙ করে লোক দেখানো জাতীয় পতাকা আঁকা হয়েছে। ক্লাস সজ্জিত করণ তো দূরের কথা বরাদ্দের টাকা দিয়ে দৃশ্যত কোনো কাজই করা হয়নি।
মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, গত অর্থবছরে ১৭৮টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নে সরকারিভাবে বরাদ্দ দেওয়া হয় পাঁচ কোটি ২৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এর মধ্যে সংস্কার কাজের জন্য তিন কোটি ৪৬ লাখ টাকা বিশেষ বরাদ্দ দেয় চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি (পিইডিপি-৪)। গত অর্থবছরের ১৮ জুন অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হলেও ৩০ জুনের মধ্যে কাজ সম্পন্ন করার কথা বলা হয়। কিন্তু মাত্র ১২ দিনের মধ্যে স্টিমেট তৈরি ও কাজ সম্পন্ন করা যেহেতু সম্ভব না, তাই টাকা ফেরত যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়। এদিকে এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে সংশ্লিষ্ট সকলে রাতারাতি প্রতিটি বিদ্যালয়ের বিপরীতে ক্লাস সজ্জিতকরণের অতিরিক্ত ভুয়া বিল ভাউচারের মাধ্যমে ওই বরাদ্দের অর্থ তোলেন। পরে ওই টাকা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার অ্যাকাউন্টে জমা রাখা হয়। এছাড়া ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে স্লিপ ফান্ডে এক কোটি ১৫ লাখ ৭০ হাজার, প্রাক প্রাথমিকে ১৭ লাখ ৮০ হাজার, রুটিন মেরামতের জন্য ৪১ লাখ ৬০ হাজার ও ওয়াশ ব্লকের জন্য তিন লাখ ৪০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়।
অভিযোগে জানা যায়, উপজেলার কান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সরকার মাসুদুর রহমান ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে বিদ্যালয়টির উন্নয়নে সংস্কার কাজের জন্য দুই লাখ টাকা, ক্ষুদ্র মেরামতের জন্য ৪০ হাজার টাকা, স্লিপ ফান্ডের ৭০ হাজার টাকা, প্রাক-প্রাথমিকের ১০ হাজার টাকা, ওয়াশ ব্লকের জন্য ২০ হাজার টাকা কাজ না করেই উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার যোগসাজশে আত্মসাৎ করেছেন। অপরদিকে উপজেলার অন্নদানগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জিন্নাত রেহানা নামমাত্র কাজ করে বরাদ্দের টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ওই দুই বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি অর্থ আত্মসাতের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট একাধিক দফতরে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
কান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আব্দুল মাজেদ বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও প্রধান শিক্ষক যোগসাজশে বরাদ্দের অর্থ তুলে নিয়েছেন। অথচ বিদ্যালয়ের কোনো কাজই করা হয়নি। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নিজেই দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত থাকায় কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না’
অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ অস্বীকার করে সদ্য বিদায়ী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা রফিক-উজ-জামান বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘নির্দিষ্ট সময়ে কাজ করা সম্ভব না হওয়ায় টাকা তোলা হয়। পরবর্তীতে প্রধান শিক্ষকগণ কাজ করার বিল-ভাউচার জমা দিয়ে টাকা নিয়েছেন।’
এ বিষয়ে রংপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এ এম শাহজাহান সিদ্দিকের মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। এমনকি ফোনে মেসেজ পাঠিয়েও কোনো কাজ হয়নি।’
রংপুর বিভাগীয় উপপরিচালক আব্দুল ওয়াহাব বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘ওই শিক্ষা কর্মকর্তার দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত পূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’