রাঙামাটির পর্যটন খাতে ডিসেম্বরে লেনদেন ২৫ কোটি টাকা
শীতল হাওয়ায় প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য দেখতে হ্রদ পাহাড়ের জেলা রাঙামাটিতে সম্প্রতি পর্যটকদের বেশ সরব আগমন ঘটেছে। যার ফলে পাহাড়ি এই জেলার অর্থনীতিতে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে। রাঙামাটির হোটেল-মোটেল, বোট, রিসোর্ট, টেক্সটাইল ও পর্যটন স্পটগুলোর সাথে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ করে পাওয়া তথ্যানুসারে ডিসেম্বর মাসে প্রতিদিন গড়ে ১৫ হাজার পর্যটক রাঙামাটি ভ্রমণে এসেছে।
যার মধ্যে অন্তত ৫ হাজার পর্যটক রাঙামাটিতে রাত্রীযাপন করছে বলে আবাসিক হোটেল মালিক সমিতিসহ পর্যটন করপোরেশন কর্তৃপক্ষের সাথে আলাপ করে জানা গেছে।
এসব পর্যটকদের মাধ্যমে জেলার স্থানীয় লঞ্চ, ইঞ্জিন বোট, স্প্রিড বোট, কাপ্তাই হ্রদের ওপারে স্থাপিত পর্যটন কেন্দ্রসমুহ, হোটেল-মোটেল, কটেজ, পার্ক, কাপ্তাই উপজেলার পর্যটন কেন্দ্রগুলোসহ বস্ত্রশিল্প খাতে পার্বত্য রাঙামাটির অর্থনীতিতে গত এক মাসে লেনদেন হয়েছে অন্তত ২৫ কোটি টাকা।
স্টেক হোল্ডারদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, রাঙামাটি শহরে ৫৩টি আবাসিক হোটেল রয়েছে। যার মধ্যে প্রথমশ্রেণির হোটেল ১৮টি। ডিসেম্বরের পুরো মাসেই এসব হোটেল অগ্রিম বুকিংয়ের মাধ্যমে কাস্টমার ভরপুর ছিলো। উদ্যোক্তাদের হিসেবে ডিসেম্বর মাসে প্রতিদিন শুধুমাত্র আবাসিক হোটেল-মোটেল ও কটেজগুলোতে আয় করা হয়েছে গড়ে ৩০ লাখ টাকা। যা মাসিক হিসেবে ৯ কোটি টাকা।
গত একমাসে রাঙামাটির পর্যটক করপোরেশন কর্তৃপক্ষ তাদের প্রায় ৬০ লাখ টাকা আয় হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন প্রতিষ্ঠানটির রাঙামাটির ব্যবস্থাপক সৃজন বিকাশ বড়ুয়া।
এদিকে, রাঙামাটি শহরসহ ও কাপ্তাই হ্রদের দ্বীপগুলোতে ৫০টিরও বেশি খাবার হোটেল রয়েছে। এছাড়াও অনেক আবাসিক হোটেলের অভ্যন্তরেও রেস্তোরাঁর ব্যবস্থা রয়েছে। এসব রেস্তোরাঁগুলোতে গত একমাসে আয় হয়েছে ৭ কোটি টাকারও বেশি।
রাঙামাটির অন্যতম সৌন্দর্য বহন করা কাপ্তাই হ্রদে মোট দর্শনার্থীর প্রায় ৯০শতাংশ ভ্রমণ করেন। হ্রদে চলাচলকারি ট্যুরিস্ট বোটগুলোর মধ্যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকাসহ পর্যটন ঘাটের নিজস্ব বোটগুলোসহ কাপ্তাই হ্রদে দেশীয় বোটের সংখ্যা প্রায় ৪ শতাধিক। সংশ্লিষ্টদের মতে ট্যুরিস্ট বোটের মাধ্যমে গত এক মাসে আয় করা হয়েছে প্রায় ২ কোটি টাকা।
অপরদিকে রাঙামাটিতে বেড়াতে আসা পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ থাকে এখানে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত তাঁত বস্ত্র। পাহাড়ি নারীদের হাতে বোনা এসব বস্ত্র কিনতে বেশ আগ্রহী পর্যটকরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাঙামাটি শহরের টেক্সটাইল মার্কেট, বিভিন্ন খুচরা দোকান এবং সুবলংয়ের নতুন স্থাপনকৃত বৌদ্ধ মুর্তিস্থানে মিলে অন্তত শতাধিক দোকানে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত তাঁত বস্ত্র বিক্রি করা হয়। দোকানিদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুসারে গত এক মাসে এই খাতে আয় হয়েছে অন্তত ৩ কোটি টাকা।
জেলায় আগত পর্যটকদের অভ্যন্তরীণ সড়কপথগুলো ঘুরে দেখা যায় নিয়োজিত অতিরিক্ত দুই শতাধিকসহ অন্তত ৭শ সিএনজি অটোরিকশা রাঙামাটিতে চলাচল করছে। যার মাধ্যমে এক মাসে আয় হয়েছে অন্তত ২ কোটি টাকা।
এছাড়াও স্থানীয়ভাবে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে গড়ে উঠা পর্যটন কেন্দ্রগুলোর মধ্যে অন্যতম রাঙামাটি শহরের পলওয়েল পার্ক, পর্যটন করপোরেশনের ঝুলন্ত ব্রিজ, আরণ্যক, জেলা প্রশাসনের শিশু পার্ক, সুবলং ঝর্ণা, হ্রদের ওপারে বেশ কয়েকটি পর্যটন কেন্দ্রসহ-কাপ্তাই সড়কে অবস্থিত, বেরাইন্যা, বড়গাঙ, রাইন্যাটুকুন, কাপ্তাইয়ের জুম প্যানোরোমা, প্রশান্তি, লেক প্যারাডাইস, লেক শো, কাপ্তাই জাতীয় উদ্যান, রাঙামাটি শহরের উপজাতীয় জাদুঘর, মুন্সী আব্দুর রউফ স্মৃতিসৌধ, চাকমা রাজবাড়ি, শুকনাছড়া ঝর্ণা, ধুপপানি ঝর্ণা, মুপ্পোছড়া ঝর্ণা, পেদা টিং টিং, রাইংখ্যং পুকুর, কর্ণফুলি পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্র, চিৎমরম বৌদ্ধ বিহার, নাকাবা ছড়া ঝর্ণা, বেতবুনিয়া ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র, কাট্টলী বিল, তিনটিলা বনবিহার এসব এলাকাগুলোর অনেকগুলোতেই টিকিটের মাধ্যমে দর্শনার্থীরা প্রবেশ করতে হয়। যার মাধ্যমে একমাসে আনুমানিক আয় হয়েছে সোয়া কোটি টাকা বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে অনগ্রসর রাঙামাটি জেলায় অর্জিত এই অর্থের আরো তিনভাগ বেশি পরিমাণে আয় করা সম্ভব হতো যদি সরকারিভাবে বিনিয়োগ বান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করা হতো এমন মন্তব্য করেন জেলার চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক নেছার আহাম্মদ।
তিনি বলেন, শুধূমাত্র কাপ্তাই হ্রদের অপরূপ সৌন্দর্য আমরা ব্যবহার করতে পারলেই রাঙামাটিতে পর্যটকদের ঢল নামবে। এখনো পর্যন্ত আমরা নৌ-পথকে আধুনিকায়ন করতে পারিনি। প্রাইভেট সেক্টরকে যথাযথভাবে সুযোগ দেওয়া হচ্ছেনা। বিনিয়োগ বান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে।