টাকার জন্য প্রতিদিনের বাড়ি ফেরার সঙ্গীর হাতে খুন লিপি

  • স্টাফ করেসপন্ডেন্ট বার্তা২৪.কম, ফরিদপুর
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

নিহত লিপির মরদেহ উদ্ধার করছে পুলিশ, ছবি: বার্তা২৪.কম

নিহত লিপির মরদেহ উদ্ধার করছে পুলিশ, ছবি: বার্তা২৪.কম

টাকার জন্যই খুন করা হয় আদর্শ সার্বিক গ্রাম উন্নয়ন সমবায় সমিতি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহনাজ পারভিন লিপিকে। হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত ইয়ামিন নামের এক কিশোরকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতারকৃত ইয়ামিনের দেওয়া তথ্যানুসারে এসব জানিয়েছেন ফরিদপুরের মধুখালী থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মোঃ সাইফুল ইসলাম।

বৃহস্পতিবার (০২ জানুয়ারি) দিবাগত রাত সাড়ে ৯টার দিকে ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার বাগাট বাজারে অবস্থিত আদর্শ সার্বিক গ্রাম উন্নয়ন সমবায় সমিতি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহনাজ পারভিন লিপি তার এনজিও কার্যালয়ে কাজ শেষে ভ্যানযোগে বাড়ি ফেরার পথে নিখোঁজ হন। পরদিন  শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) সকালে উপজেলার বাগাট ঠাকুরপাড়ার একটি আখক্ষেত থেকে তার ক্ষত-বিক্ষত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করে পুলিশ। শাহনাজ পারভিন লিপি বাগাট মুন্সি পাড়ার মির্জা শহিদুল ইসলামের স্ত্রী।

বিজ্ঞাপন

এ ঘটনায় নিহত শাহনাজ পারভিন লিপির ভাই মোঃ অহিদুল ইসলাম বাদী হয়ে মধুখালী থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পর ঘাতকদের গ্রেফতারে মাঠে নামে পুলিশ। বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালাতে শুরু করেন মধুখালী থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) সাইফুল ইসলামের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল।

উদ্ধারকৃত টাকা

মধুখালী থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মোঃ সাইফুল ইসলাম জানান, আদর্শ সার্বিক গ্রাম উন্নয়ন সমবায় সমিতি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহনাজ পারভিন লিপি তার এনজিও কার্যালয়ে কাজ শেষে প্রতি রাতেই স্থানীয় সৌখিন নামের এক ভ্যানচালকের ভ্যানে বাড়ি ফেরেন। প্রতিদিনই মোটা অংকের অর্থ সাথে নিয়ে বাড়িতে ফেরেন শাহনাজ পারভিন লিপি। এই টাকার প্রতি নজর পড়ে সৌখিনের। সৌখিন ও তার বন্ধুরা লিপিকে হত্যার পরিকল্পনা করে।

বিজ্ঞাপন

এরই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার (০২ জানুয়ারি) দিবাগত রাত সাড়ে ৯টার দিকে লিপি অফিস থেকে সৌখিনের ভ্যানে বাড়ি ফিরছিলেন। পথিমধ্যে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী সৌখিনের বন্ধু হাসান ও ইয়ামিন পথরোধ করে ভ্যানে ওঠে। কিছুদূর যাওয়ার পর পূর্ব পরিকল্পিতভাবে ভ্যানের নিচে বিশেষ ব্যবস্থায় রাখা একটি কাঠের লাঠি বের করেন সৌখিন। এরপর কিছু বুঝে উঠার আগেই পেছন থেকে লিপির মাথায় আঘাত করেন সৌখিন। মাথায় আঘাত করলে লিপি ভ্যান থেকে নিচে পড়ে যায়। পরে হাসান লিপির শরীরে উপর্যুপরি আঘাত করেন। লিপির দেহ নিস্তেজ হয়ে পড়লে সৌখিন, হাসান ও ইয়ামিন একটি আখক্ষেতে নিয়ে যান লিপিকে। এরপর তারা তিনজন লিপির মুত্যু নিশ্চিত করতে লিপির পরিধেয় জামা কাপড় দিয়ে লিপির নাক ও মুখ চেপে ধরে মুত্যু নিশ্চিত করেন।

তিনি আরো জানান, লিপির মুত্যুর পর তার হাতের আঙ্গুলে থাকা কয়েকটি আংটি খুলে নেন তারা। এছাড়া দুইটি মোবাইল ও ভ্যানিটি ব্যাগে থাকা নগদ টাকা নিয়ে মরদেহটি ফেলে রেখে পালিয়ে যায়।

পুলিশ পরিদর্শক মোঃ সাইফুল আরো জানান, মঙ্গলবার (৬ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় উপজেলার বৈকণ্ঠপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে একটি ওয়াজ মাহফিল থেকে ইয়ামিনকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় ইয়ামিনের কাছ থেকে নগদ ৩৫ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়। পরে ইয়ামিনের দেওয়া তথ্যানুসারে বাগাট দক্ষিণপাড়ায় হাসানের বাড়িতে অভিযান চালানো হয়। অভিযানকালে হাসানকে পাওয়া যায়নি। তার বাড়ি তল্লাশি করে নগদ ১২ হাজার টাকা ও নিহত লিপির আংটি উদ্ধার করা হয়। এ সময় হাসানের একটি প্যান্টও উদ্ধার করা হয়। প্যান্টটিতে রক্তের দাগ পাওয়া গেছে। হত্যাকাণ্ডের সময় এই প্যান্টটি পরে ছিল হাসান।

সাইফুল জানান, ইয়ামিনকে আজ মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) আদালতে হাজির করা হয়েছে। এছাড়াও হাসান হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত বিষয়টি স্বীকার করেছে তার বাবা-মা। হাসান ও সৌখিনকে আটক করতে বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। হাসান ও ইয়ামিনের বাড়ি বাগাট দক্ষিণপাড়াতে এবং সৌখিনের বাড়ি বাগাট মুন্সিপাড়ায়।

আরও পড়ুন: মধুখালীতে এনজিওর ব্যবস্থাপনা পরিচালকের মরদেহ উদ্ধার