শহরের মতো গ্রামাঞ্চলেও হারিয়ে যাচ্ছে খেজুরের রস-গুড়

  • মো. রফিকুল ইসলাম, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, মাদারীপুর
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য খেজুরের রস-গুঁড়, ছবি: বার্তা২৪.কম

হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য খেজুরের রস-গুঁড়, ছবি: বার্তা২৪.কম

মধু বৃক্ষ খেজুর গাছ। এক সময় দেখা যেত গ্রামীণ জীবনের শীতের উৎসব শুরু হতো খেজুর গাছের রস, রসের তৈরি পিঠা বা পায়েস দিয়ে। শীতের শুরুতেই খেজুর গাছের কদর বেড়ে যেত বহুগুণে। কিন্তু কালের পরিক্রমায় গ্রামগঞ্জ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে খেজুর গাছ। তাই বিলুপ্তির পথে খেজুরের সুস্বাদু রস ও খেজুরের গুড়।

এক সময় দেখা যেত শীত মৌসুমে গ্রামের ঘরে ঘরে এই রস দিয়ে তৈরি হতো নানা ধরনের পিঠা ও পায়েস। ধীরে ধীরে খেজুর রস দিয়ে তৈরি খাবারের তালিকা ছোট হতে শুরু করেছে। শহরের অনেক ছেলেমেয়েই জানে না খেজুরের রসের স্বাদ কেমন।

বিজ্ঞাপন
গাছে উঠে খেজুরের রস সংগ্রহ করা হচ্ছে
গাছে উঠে খেজুরের রস সংগ্রহ করা হচ্ছে

এক সময় দেখা যেত গাছিরা প্রতিদিন বিকেলে খেজুর গাছ কেটে ছোট হাড়ি (মাটির পাত্র) রসের জন্য গাছে বেঁধে রাখতেন। পরদিন সকালে কাঁচা রস নিয়ে এসে হাট-বাজারে বিক্রি করতেন তারা। এছাড়া সুস্বাদু এই খেজুরের রস আগুনে জ্বাল দিয়ে বানানো হতো বিভিন্ন রকমের গুড়। ফলে সে সময় খেজুর গাছের কদরও ছিল বেশি। পুরো শীত মৌসুম চলতো সু-স্বাদু পিঠা, পায়েস খাওয়ার আয়োজন। সেসব এখন অনেকটাই স্মৃতি।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, মাদারীপুর জেলায় ১১২ হেক্টর জমিতে খেজুর গাছ আবাদ করা হয়। আর গত অর্থবছরে জেলায় ১০২৩ মেট্রিকটন রস উৎপন্ন করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন
খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করা হচ্ছে
খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করা হচ্ছে

মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলার উমেদপুর ইউনিয়নের সাতভাগিয়া, বহেরাতলা ও রাজৈর  উপজেলার পাইকপাড়া ইউনিয়নের ফুলতলা গ্রাম ঘুরে দেখা যায় খেজুর গাছের মিষ্টি রসের ঘ্রাণে ভরে উঠেছে গ্রামাঞ্চল।

এ সময় কথা হয় সাতভাগিয়া গ্রামের গাছি (যে গাছ কাটে) ইলিয়াছ মোড়লের সাথে। তিনি বলেন, এক সময় শীত মৌসুমে  ১০০ থেকে ১২০টি গাছ কাটতাম। এতে প্রায় ৭০ থেকে ৮০ হাড়ি খেজুরের রস সংগ্রহ করে বাজারে বিক্রি করতাম। তাতে প্রায় খরচ বাদে দৈনিক ১০০০ টাকার মত আয় হতো। এখন আর হয় না।

খেজুরের গুড়
খেজুরের গুড়

তিনি আরো বলেন, ‘আজ ৩০ বছর যাবত রস সংগ্রহ করে বাড়িতে বসেই গুড় উৎপাদন করি। এখন অনেক গাছির রস সংগ্রহেও নেই তেমন ব্যস্ততা। এ ছাড়াও অনেকেই এখন গাছ কাটা ছেড়ে অন্য পেশায় চলে গেছেন।

একই উপজেলার বহেরাতলা গ্রামের গাছি খোকন মাদাবর বলেন, আগে শীতের শুরুতে গাছের মালিকরা আমাকে খোঁজ করতেন। এখন অনেক গাছ মরে গেছে , তাই কেউ এখন আর আমাকে ডাকে না।

খেজুরের রস দিয়ে গুঁড় তৈরি করা হচ্ছে
খেজুরের রস দিয়ে গুড় তৈরি করা হচ্ছে

মাদারীপুর সদর উপজেলার মোস্তফাপুর গ্রামের মেহেদী হাসান সোহাগ বলেন, ‘আমাদের এলাকায় খেজুর গাছ দিনদিন হারিয়ে যাচ্ছে। এজন্য সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে বেশি বেশি খেজুর গাছ রোপণ করার দাবি জানান তিনি।'

মাদারীপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা তানভির হাসান জানান, আমাদের জেলার কিছু চাষি খেজুর গাছ রোপন করা শুরু করেছেন। গত অর্থবছরে আমাদের জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ১৪ হাজার ১০০টি খেজুরের চারা রোপন করেছেন চাষিরা। এ ব্যাপারে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের পক্ষ থেকে কারিগরি প্রশিক্ষণ এবং বীজ বা কলম প্রাপ্তির বিষয়ে পরামর্শ প্রদান করা হয়।