এক বছরে রাঙামাটিতে ৫৮৯ মামলা, গ্রেফতার ১৬৫৫ জন

  • আলমগীর মানিক, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, রাঙামাটি
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

কাপ্তাই ঝুলন্ত ব্রিজ/ছবি: বার্তা২৪.কম

কাপ্তাই ঝুলন্ত ব্রিজ/ছবি: বার্তা২৪.কম

হ্রদ-পাহাড়ের অপূর্ব মিলন শৈলী ও বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি নির্ভর পার্বত্য রাঙামাটি জেলায় জাতীয় রাজনৈতিক দলগুলোর হামলা-মামলা,ঝক্কি-ঝামেলা নেই। তবে আঞ্চলিক দলগুলোর সন্ত্রাসী তৎপরতা ও সামাজিক ফৌজদারি অপরাধ থেকে নেই। এমন অপরাধে বিগত ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত এক বছরে এক হাজার ৬৫৫ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

জেলার ১২টি থানায় দায়েরকৃত সর্বমোট ৫৮৯টি মামলা এবং আদালত থেকে প্রদত্ত এক হাজার ১৩৮টি ওয়ারেন্ট এর বিপরীতে এসব আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে রাঙামাটির পুলিশ বিভাগ।

বিজ্ঞাপন

ভৌগলিকগতভাবে ভিন্নতর অবস্থানে থাকা রাঙামাটি জেলায় জাতীয় রাজনীতির প্রতিহিংসামূলক আচরণ না থাকলেও আঞ্চলিকদলীয় সন্ত্রাসী তৎপরতার কারণে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে আনতে পারছে না প্রশাসন।

জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুসারে, গত ২০১৯ সালে রাঙামাটিতে সর্বমোট ৫৮৯টি মামলা হয়েছে। এই মামলাগুলোতে গ্রেফতার করা হয়েছে ৫১৭ জনকে। এক বছরে পুলিশের পক্ষ থেকে মাদক দ্রব্য আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে, ২০৭টি। জিডি করা হয়েছে ৪০টি। থানা পুলিশের মাদক মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে ২৫৮ জনকে। পুলিশী অভিযানের মাধ্যমে রাঙামাটি জেলায় বিগত এক বছরে ১৬ লাখ ৫৬ হাজার ৯১৫ টাকার মাদক দ্রব্য উদ্ধার করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

উদ্ধারকৃত এসব মাদকের মধ্যে রয়েছে, এক কেজি ৮১৩ গ্রাম, ১০৭ পুড়িয়া ও ২৫টি গাঁজা গাছের চারা, ২৭০০ লিটার দেশী মদ, ২৩৩৪ পিছ ইয়াবা ট্যাবলেট ও দুই বোতল বিয়ার জব্দ করা হয়েছে।

অপরদিকে বিগত এক বছরে রাঙামাটিতে জেলা মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর কর্তৃক দায়ের করা ৩৬ মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে ৪৩ জনকে। মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর কর্তৃক ৫৫০ গ্রাম গাঁজা, ৭২পিচ ইয়াবা, ৬০২.৫ লিটার চোলাই মদ ও ৪৬১ কেজি উপকরণ জব্দ করা হয়েছে। যার আনুমানিক মূল্য দেখানো হয়েছে ২ লাখ ২৪ হাজার ২০০ টাকা। বিগত বছরের শেষে এসে মামলার সংখ্যা বেড়েছে।

জেলার আইনশৃঙ্খলা সভায় উপস্থাপিত তথ্যানুসারে, ২০১৯ সালের নভেম্বর মাসের চেয়ে ডিসেম্বর মাসে ৬টি মামলা বেশি হয়েছে। অপরদিকে ডিসেম্বরে মাদকের মামলা নভেম্বর মাসের চেয়ে ২টি কমেছে। ডিসেম্বরে নারী ও শিশু নির্যাতন মামলা হয়েছে ২টি। এছাড়াও ডিসেম্বরে রাঙামাটিতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের ২৩টি মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ৮২টি মামলা দেওয়া হয়েছে। যার মাধ্যমে জরিমানা আদায় করা হয়েছে ৮১ হাজার ৩০০ টাকা। এদিকে গত এক মাসে রাঙামাটি কোতয়ালী থানাতেই আসামি গ্রেফতার করা হয়েছে অন্তত ৮০ জন।

রাঙামাটি জেলায় অন্য জেলাগুলোর চেয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অনেক ভালো এবং আরো ভালো করার চেষ্টা চলছে মন্তব্য করে রাঙামাটির পুলিশ সুপার আলমগীর কবীর(পিপিএম-সেবা) বলেছেন, সামাজিক ফৌজদারি অপরাধ কমিয়ে আনতে এবং জনগণের দৌড়গৌড়ায় আইনি সেবা পৌঁছে দিতে এবং জনবান্ধব পুলিশী ব্যবস্থা নিয়ে  প্রধানমন্ত্রী ও আইজিপি মহোদয়ের প্রত্যাশা অনুসারে মুজিব বর্ষে পুলিশকে জনতার পুলিশ করার লক্ষ্যে ইতিমধ্যেই রাঙামাটিতে প্রয়োজনীয় নানামুখী কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে।

তারই ধারাবাহিকতায় ইতিমধ্যেই রাঙামাটিতে তৃণমুল পর্যায়ে কমিউনিটি পুলিশিং কার্যক্রম জোরদার, ইউনিয়ন পর্যায়ে বিট পুলিশিং ব্যবস্থা, থানাগুলোতে হ্যালো ওসি কার্যক্রম, ট্রাফিক পুলিশিং ব্যবস্থা পরিচালনা করছে রাঙামাটির পুলিশ বিভাগ।

পুলিশ সুপার আলমগীর কবির বলেন, যে পুলিশ সদস্য ভালো কাজ করতেছে, তাকে প্রণোদনা প্রদান করা হচ্ছে। অপরদিকে যে সকল পুলিশ সদস্য অনৈতিক কোনো কাজে জড়িত থাকলে প্রমাণ সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে ডিপার্টমেন্টাল ব্যবস্থা গ্রহণও করা হচ্ছে।

এদিকে, জেলার মাসিক আইন শৃঙ্খলা সভায় জেলার সার্বিক আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে জেলায় গুরুত্বর অপরাধসহ যেকোনো অপরাধ নিয়ন্ত্রণ ও অপরাধ প্রবণতা হ্রাসের লক্ষ্যে গোয়েন্দা নজরদারী অব্যাহত রাখার জন্য পুলিশ সুপার ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোতে অনুরোধ জানানো হয়েছে।