বিদ্যুৎকেন্দ্রের গরম পানিতে ফসল নষ্টের আশঙ্কা

  • আল মামুন,ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট,বার্তা২৪.কম,ব্রাহ্মণবাড়িয়া
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

আশুগঞ্জ-পলাশ এগ্রো ইরিগেশন সেচ প্রকল্প/ ছবি: বার্তা২৪.কম

আশুগঞ্জ-পলাশ এগ্রো ইরিগেশন সেচ প্রকল্প/ ছবি: বার্তা২৪.কম

৭০ হাজার মেট্রিকটন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে বিএসিডিসি’র তত্ত্বাবধানে আশুগঞ্জ-পলাশ এগ্রো ইরিগেশন সেচ প্রকল্পে চলতি বছরের জন্য সেচের পানি অবমুক্ত করা হয়েছে।

শনিবার (১৮ জানুয়ারি) সকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশনের অভ্যন্তরে ইনটেক প্রধান সেচ খুলে দিয়ে এ পানি অবমুক্ত করা হয়। সেচের পানি অবমুক্ত করা হলেও সেচ প্রকল্পের প্রধান ওয়াটার কুলিং রিজার্ভার পুকুরের বিশাল অংশ সম্প্রতি বালু দিয়ে ভরাট করেছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) আশুগঞ্জ কর্তৃপক্ষ। এতে চলতি বোরো মৌসুমে সেচ কাজ ও ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষকরা। এ বিষয়ে বিএডিসি কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিভাগকে চিঠি দিলেও কোন সুরাহা মিলছে না।

বিজ্ঞাপন

আশুগঞ্জ-পলাশ এগ্রো ইরিগেশন সেচ প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, ১৯৭৫ সালে ব্যক্তি উদ্যোগে এবং ১৯৭৮-৭৯ অর্থবছর থেকে বিএডিসির তত্ত্বাবধানে আশুগঞ্জ বিদ্যুৎকেন্দ্রের বর্জ্যপানি রেগুলেটরের মাধ্যমে গতিপথ পরিবর্তন করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ, সরাইল, নবীনগর এবং সদর উপজেলার প্রায় ১৫ হাজার হেক্টর জমিতে নামমাত্র মূল্যে সেচ সুবিধা দেওয়া হয়। এ প্রকল্পে শুরুতেই সেচের পানি ধরে রাখতে ও বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্গত গরম পানি শীতল করতে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের আশুগঞ্জ রেলগেট এলাকায় বিদ্যুৎ বিভাগের এই পুকুরকে পানির প্রধান কুলিং রিজার্ভার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে কিছুদিন আগে কাউকেই কিছু না জানিয়ে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড সেচ প্রকল্পের কুলিং রিজার্ভার পুকুরটি ভরাট করে ফেলেছে। তবে সড়ক ও জনপথ বিভাগের জমিতে পানি নিষ্কাশনের জন্য ছোট খাল বিদ্যমান রয়েছে।

পানি ঠাণ্ডা করার জন্য ব্যবহৃত পুকুরটি ভরাট করা হয়েছে/ ছবি: বার্তা২৪.কম

প্রধান কুলিং রিজার্ভারটি বালি দিয়ে ভরাট করার কারণে এই প্রকল্পের সুবিধাভোগী প্রায় ৩৫ হাজার কৃষক রয়েছে শঙ্কায়। কারণ রিজার্ভার বালু দিয়ে ভরাট করার কারণে আশুগঞ্জ বিদ্যুৎকেন্দ্রের গরম বর্জ্যপানি সরাসরি জমিতে যাবে। ফসলি জমির ব্যাপক ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

বিজ্ঞাপন

শনিবার সকালে আশুগঞ্জ-পলাশ এগ্রো ইরিগেশন সেচ প্রকল্পের পানি উদ্বোধন করার কারণে প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ১১’শ কিউসেক পানি সরাসরি জমিতে প্রবেশ করবে।

আশুগঞ্জ-পলাশ এগ্রো ইরিগেশন সেচ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মো. ওবায়েদ হোসেনের সভাপতিত্বে পানি অবমুক্ত করেন বিএডিসির পূর্বাঞ্চলের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. আব্দুল করিম, আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেডের প্রধান প্রকৌশলী মো. শাহ আলম খান প্রমুখ।

এই প্রকল্পের সুবিধাভোগী সরাইল উপজেলার কৃষক আহমদ আলী বার্তা২৪.কমকে জানান, এই পানি ব্যবহারের কারণে প্রতিটি জমিতে সেচের পানির জন্য প্রায় আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা আমাদের কম লাগে। যদি কোনো কারণে এই পানি ব্যবহার করা না যায় তাহলে আমাদের কৃষকদের পথে বসা ছাড়া আর কোন গতি থাকবে না।

আরেক সুবিধাভোগী আবুল হাসেম বার্তা২৪.কম-কে জানান, আমরা চাই আশুগঞ্জ-পলাশ এগ্রো ইরিগেশন সেচ প্রকল্পের পানি কুলিং রিজার্ভারের মাধ্যমে ঠাণ্ডা করে জমিতে দেয়া হোক। অন্যথায় এই পানি ব্যবহার করলে ফসলী জমির ব্যাপক ক্ষতি হবে।

চলতি বছরের জন্য সেচের পানি অবমুক্ত করা হয়েছে/ছবি: বার্তা২৪.কম

আশুগঞ্জ-পলাশ এগ্রো-ইরিগেশন সেচ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মো. ওবায়েদ হোসেন বার্তা২৪.কম-কে বলেন, এ প্রকল্পে নদীর পানি ব্যবহার করায় ভূগর্ভস্থ পানির ওপর চাপ কমে। এই পানি ব্যবহারের কারণে উৎপাদনও ভালো হয়। দেশের কোথাও এত কম খরচে সেচের সুবিধা নেই। প্রধান কুলিং রিজার্ভারটি বালি দিয়ে ভরাট করার কারণে ফসলি জমির ব্যাপক ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বিদ্যুৎ বিভাগকে কয়েক দফা চিঠি দেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও কৃষি বিভাগকে অবহিত করা হয়েছে। এসব সুরাহা না হলে ৩৫ হাজার কৃষক পরিবার সেচ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবেন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া পরিবেশ অধিদপ্তরের রিসার্চ অফিসার মো. রুনায়েত আমিন রেজা বার্তা২৪.কম-কে জানান, পরিবেশ অধিদপ্তরের কার্যালয় থেকে বালু সরিয়ে নেয়ার জন্য আশুগঞ্জ তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রকে বলা হয়। এরই প্রেক্ষিতে তারা একটি লিখিত জবাব দিয়েছেন। এই বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।