খানখানাপুরে দুর্ঘটনা: গ্রিনলাইন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমঝোতা চান নিহতদের স্বজনরা
রাজবাড়ীর খানখানাপুর বড় ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় বাসচাপার ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার বিষয়ে গ্রিনলাইন পরিবহন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমঝোতা করতে চান নিহতদের স্বজনরা।
গত ১২ জানুয়ারি খানখানাপুর বড় ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় ওই সড়ক দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনার সময় যাত্রীবাহী মাহিন্দ্রাকে চাপা দেয় গ্রিনলাইন পরিবহনের একটি বাস। এতে মা-মেয়েসহ ৫ জন মাহিন্দ্রা যাত্রী নিহত হন।
এ ঘটনায় নিহতরা হলেন- রাজবাড়ী সদরের আহলাদিপুর গ্রামের নায়েব আলীর স্ত্রী রাশেদা বেগম (৪০) ও তার মেয়ে তাসলিমা খাতুন (১৬), ফরিদপুরের ঝিলটুলির আব্দুর রফিকুল ইসলামের ছেলে ইমরান হোসেন রিফাত (২৫), গোয়ালন্দের তুরাফ শেখপাড়ার আরশাদ আলী শেখের ছেলে মোস্তফা শেখ (৫২) ও গোয়ালন্দের চর মাইটকুড়া গ্রামের মৃত জয়নাল শেখের ছেলে আনোয়ার হোসেন (৪৫)।
দুর্ঘটনার পরে গোয়ালন্দের দক্ষিণ দৌলতদিয়ার তুরাফ শেখ পাড়ার নিহত মোস্তফা শেখের ছেলে রাশেদুল বাদী হয়ে রাজবাড়ী সদর থানায় একটি মামলা করেন। তবে মামলা দায়ের করা হলেও এখন বাদীসহ নিহতদের স্বজনরা চাচ্ছেন গ্রিনলাইন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমঝোতা করতে।
কারণ হিসেবে তারা জানিয়েছেন- দীর্ঘমেয়াদে মামলা চলা, মামলায় আদালতে হাজিরা দিতে না পারা ও আর্থিক সংকটের কারণেই তারা সমঝোতা চাচ্ছেন।
অপরদিকে মানবিক দৃষ্টি ও আইনগত ঝামেলা থেকে রেহাই পেতে গ্রিনলাইন কর্তৃপক্ষও চাচ্ছেন নিহতদের পরিবারের সঙ্গে আপস করতে। দুর্ঘটনার পরের দিনই গ্রিনলাইন কর্তৃপক্ষ তাদের দৌলতদিয়া ঘাটের চেকার নুরুজ্জামানের মাধ্যমে মোবাইলে মামলার বাদী এবং মা-মেয়ে নিহতের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন।
মামলার বাদী নিহত মোস্তফা শেখের ছেলে রাশেদুল বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘দুর্ঘটনার পরে আমি একটি মামলা দায়ের করি। কিন্তু পরিবারের অন্য সদস্য ও স্বজনরা বলছেন মামলাটি নাকি দীর্ঘদিন ধরে পরিচালিত হবে। তাছাড়া মামলাটি পরিচালনা করার মতো আর্থিক সচ্ছলতা আমাদের নেই। তাই আমরা চাচ্ছি গ্রিনলাইন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে একটি সমঝোতা করতে।’
রাজবাড়ী সদরের আহলাদিপুর গ্রামের নিহত রাশেদা বেগমের স্বামী মো. নায়েব আলী বলেন, ‘ওই দুর্ঘটনায় আমি আমার স্ত্রী ও মেয়েকে হারিয়েছি। ওদের হারিয়ে এখন অসহায় আমি। আমার সাজানো সংসার ভেঙে গেছে। আমার বড় মেয়ে নাসরিন সে তার মা ও ছোট বোনকে হারানোর ব্যথায় এখনো বাকরুদ্ধ হয়ে আছে। কারো সঙ্গে কথা বলছে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘দুর্ঘটনার পরের দিন গ্রিনলাইনের দৌলতদিয়া ঘাটের চেকার নুরুজ্জামান আমাকে ফোন দিয়েছিলেন। তিনি দেখা করতে বলেছিলেন। কিন্তু তখন দেখা করার মতো পরিবেশ ছিল না। আমি যেহেতু ঢাকাতে কাজ করি তাই প্রতি মাসে আমার পক্ষে এখানে আদালতে আসা সম্ভব হবে না। তাই আমি চাচ্ছি তাদের সঙ্গে মামলার বিষয়ে সমঝোতা করতে।’
গ্রিনলাইন পরিবহনের দৌলতদিয়া ঘাটের চেকার নুরুজ্জামান বার্তা২৪.কমকে জানান, ওই দিনের দুর্ঘটনায় ৫ জন মারা গেছেন। যা খুবই দুঃখজনক ও কষ্টের। গ্রিনলাইন কর্তৃপক্ষও শোকার্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন। তারাও এ ঘটনায় সহমর্মিতা ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন। এ দুর্ঘটনার কারণে মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে নিহতদের স্বজনদের সঙ্গে একটি সমঝোতা করার জন্য তাদেরকে দেখা করতে বলা হয়েছিল। কিন্তু তখন দেখা করার মতো পরিবেশ ছিল না। এরই মধ্যে নিহতদের দোয়া মাহফিলের অনুষ্ঠান শেষ হয়ে গেছে। এখন সময় সুযোগ করে একটি আপস করা যেতে পারে।
এদিকে এ দুর্ঘটনায় মামলা হওয়ার পর রাজবাড়ী সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) স্বপন কুমার মজুমদার আহলাদিপুর হাইওয়ে থানাকে তদন্তের দায়ভার দেন। বর্তমানে আহলাদিপুর হাইওয়ে থানার এসআই মো. মিজানুর রহমান এ মামলার তদন্ত করছেন।
এ বিষয়ে এসআই মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে আমি কাজ করছি। এ ঘটনায় সদর থানায় ১২ জানুয়ারি মামলা হয়। মামলা নং-১৯।’
তিনি জানান, দুর্ঘটনার সময়ই গ্রিনলাইন বাসের চালক ও হেলপার পালিয়ে গেছে। তাদের কোনো ঠিকানা না থাকায় মামলাটির পরবর্তী কার্যক্রম চালাতে বিঘ্ন ঘটছে। তাই ঘাতক চালকের নামসহ তার সম্পূর্ণ ঠিকানা চেয়ে বাস কর্তৃপক্ষকে একটি চিঠি দেয়া হয়েছে। ঘাতক বাসটির রেজিস্ট্রেশন নং (ঢাকা মেট্রো ব-১৪-০৬৮৩)। এছাড়াও চালকের জাতীয় পরিচয়পত্র ও ড্রাইভিং লাইসেন্সের কপিও চাওয়া হয়েছে।
গ্রিনলাইন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যদি নিহতদের স্বজনদের সমঝোতা হয় তখন মামলার ভবিষ্যৎ কী হবে এমন প্রশ্নে মিজানুর রহমান জানান, মামলার বাদী ও বিবাদী যদি আপস করেন তাহলে আদালতে একটি লিখিত ডকুমেন্ট জমা দিতে হবে। আপসনামা (ডকুমেন্ট) পাওয়ার পর আদালত পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন।
উল্লেখ্য, গত ১২ জানুয়ারি ঢাকার উদ্দেশে বেনাপোল থেকে ছেড়ে আসে গ্রিনলাইনের একটি বাস। পথিমধ্যে বাসটি ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের চর খানখানাপুর এলাকার বড় ব্রিজের কাছে একটি ট্রাককে ওভারটেক করতে যায়। এ সময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দৌলতদিয়া থেকে ছেড়ে আসা রাজবাড়ীগামী একটি মাহিন্দ্রাকে চাপা দেয় বাসটি। এতে ঘটনাস্থলে মাহিন্দ্রার ৭ যাত্রীর মধ্যে মা-মেয়েসহ ৫ জন নিহত হয়।
আরও পড়ুন: খানখানাপুরে দুর্ঘটনা: গ্রিনলাইন বাস চালকের তথ্য চেয়েছে পুলিশ