চুরির অপবাদে খুঁটিতে বেঁধে কিশোর নির্যাতন
লক্ষ্মীপুরে চামড়ার আড়তে টাকা চুরির অপবাদে নিরব হোসেন (১৬) নামের এক কিশোরকে বৈদ্যুতিক খুঁটির সঙ্গে বেঁধে নির্যাতন করা হয়েছে। এ সময় তার গলায় ঝাড়ু ও জুতার মালা দেওয়া হয়। উৎসুক জনতা নির্যাতনের ভিডিও ও ছবি মোবাইলফোনে ধারণ করে। এতে ঘটনাটি সোমবার (২০ জানুয়ারি) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে স্থানীয়ভাবে ভাইরাল হয়।
তবে নিরব বলছে, আড়তদারের কাছে সে মজুরির টাকা পাওনা রয়েছে। টাকা না দিতেই নাটক সাজিয়ে তার প্রতি এমন অমানবিক নির্যাতন করা হয়েছে।
গত শনিবার (১৮ জানুয়ারি) বিকেলের এ ঘটনায় সোমবার দুপুরে ৪ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত আরও আটজনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করা হয়। নিরবের নানি আলেয়া বেগম বাদী হয়ে এ মামলা দায়ের করেন। এ ঘটনায় পুলিশ অভিযান চালিয়ে বিকেলে দুইজনকে গ্রেফতার করেছে। তদন্তের স্বার্থে অন্য আসামিদের নাম জানায়নি পুলিশ।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন- লক্ষ্মীপুর পৌরসভার বাঞ্চানগর এলাকার আবু তাহেরের ছেলে মো. রাশেদ ও মৃত নাছির আহমেদের ছেলে ইসমাইল আহমেদ। রাশেদের গরুর চামড়ার আড়ত রয়েছে। ওই আড়ত থেকেই নিরবের বিরুদ্ধে টাকা চুরির অভিযোগ আনা হয়। কিন্তু কত টাকা চুরি হয়েছে, তা নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি।
নিরব মৃত কিরন হোসেনের ছেলে। কিছুদিন আগে তার মাও মারা যান। এখন সে নানির সাঙ্গে বসবাস করছে। আহত নিরবকে সদর হাসপাতালে ভর্তি রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
ভাইরাল হওয়া ভিডিওটিতে দেখা যায়, টাকা চুরির অপবাদ দিয়ে বিদ্যুতের খুঁটির সঙ্গে বেঁধে নিরবকে মারধর করা হয়। এ সময় গলায় ঝাড়ু ও জুতার মালা দেওয়া হয়। শনিবার লক্ষ্মীপুর পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের মহিউস সুন্নাহ জালালিয়া মাদরাসা এলাকায় ঘটনাটি ঘটে।
জানা গেছে, খুঁটির সঙ্গে বেঁধে নির্যাতনের পর নিরবকে পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়। পরে নির্যাতনকারীরাই আবার পুলিশ থেকে নিরবকে ছাড়িয়ে এনে সালিশি বৈঠকের আয়োজন করেন। রাশেদের চামড়ার আড়তে সেই বৈঠকে পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. জিয়াউর রহমান শিপনসহ স্থানীয় গণ্যমান্যরা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় নিরবকে দোষী সাব্যস্ত করে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। কিন্তু নানা-নানি দায়িত্ব না নেওয়ায় বৈঠকে আবারও নিরবকে চড়-থাপ্পড়সহ মারধর করা হয়। পরে রোববার রাত ৯টার দিকে স্থানীয়দের সহযোগিতায় নিরবকে সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
নিরবের নানি আলেয়া বেগম জানান, রাশেদের চামড়ার আড়তে গত ৬ মাস ধরে নিরব কাজ করছে। কিন্তু রাশেদ ঠিকমতো তার পারিশ্রমিক দিচ্ছে না। এখনো নিরব প্রায় ৩ হাজার টাকা পাওনা রয়েছে। ওই টাকা না দিতেই নাটক সাজিয়ে তার নাতিকে অমানবিক নির্যাতন করা হয়েছে। একই অভিযোগ নির্যাতনের শিকার কিশোর নিরবের।
তবে দোকান মালিক রাশেদ সাংবাদিকদের জানান, তার আড়ত থেকে টাকা চুরির সত্যতা পাওয়ায় এলাকাবাসী নিরবকে ঝাড়ু ও জুতার মালা পরিয়ে দেয়। তবে কত টাকা চুরি হয়ে নিশ্চিতভাবে জানাতে পারেননি তিনি।
এ ব্যাপারে লক্ষ্মীপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) একেএম আজিজুর রহমান মিয়া বলেন, ‘কিশোর নির্যাতনের ঘটনায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে। অভিযান চালিয়ে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়। বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত চলছে।’