বাণিজ্যমন্ত্রীর স্বাক্ষর জাল করে অধ্যক্ষ
রংপুরের পীরগাছা উপজেলার চৌধুরাণী ফাতেহিয়া ফাজিল মাদরাসার আরবি বিভাগে প্রভাষক মোখলেছুর রহমানের বিরুদ্ধে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির স্বাক্ষর জাল করে গভর্নিং বডি গঠনের অভিযোগ উঠেছে।
উপাধ্যক্ষ থাকা সত্ত্বেও প্রভাষক হিসেবে চাকরির সাড়ে তিন বছরের মাথায় মোখলেছুর রহমান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পান। ওই অধ্যক্ষের দায়িত্ব বৈধ করতেই জালিয়াতির মাধ্যমে গভর্নিং বডি গঠন করা হয়। বিষয়টি জানাজানি হলে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি মাদরাসা শিক্ষা অধিদফতরে লিখিত অভিযোগ করেন।
সোমবার (২০ জানুয়ারি) দুপুরে অভিযোগের প্রেক্ষিতে রংপুর জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার রোকসানা বেগমের নেতৃত্বে একটি তদন্ত দল চৌধুরাণী ফাতেহিয়া ফাজিল মাদরাসায় তদন্ত কাজ শুরু করেন। এ সময় অধ্যক্ষ মোখলেছুর রহমান বৈধ কোন কাগজপত্র দেখাতে ব্যর্থ হন। ফলে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আগামী দুই দিনের মধ্যে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দাখিলের জন্য অধ্যক্ষকে নির্দেশ দেন।
এর আগে বাণিজ্যমন্ত্রীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত এক জানুয়ারি মাদরাসা শিক্ষা অধিদফতরের সহকারী পরিচালক আফাজ উদ্দিন এক আদেশে রংপুর জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে জালিয়াতির বিষয়টি তদন্তের দায়িত্ব দেন। ওই আদেশে ১৫ জানুয়ারির মধ্যে সরেজমিনে তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, মোখলেছুর রহমান চৌধুরাণী ফাতেহিয়া ফাজিল মাদরাসায় ২০১৫ সালে আরব বিভাগের প্রভাষক পদে নিয়োগ পান। ওই সময় গভর্নিং বডির সভাপতির যোগসাজশে জালিয়াতির মাধ্যমে মোখলেছুর রহমানকে প্রভাষক পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। পরে অধ্যক্ষের পদ শূন্য হলে উপাধ্যক্ষ থাকা সত্ত্বেও ২০১৮ সালে জালিয়াতির মাধ্যমে তাকে সরাসরি ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব প্রদান করা হয়। দায়িত্ব নেওয়ার পর নিজের নিয়োগ ও অধ্যক্ষের দায়িত্ব বৈধ করতে মাদরাসার গভর্নিং বডির সভাপতির জন্য বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির স্বাক্ষর জাল করে ডিও (আধা-সরকারি পত্র) তৈরি করা হয়। পরে মোখলেছুর রহমান আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ে ওই ডিও (আধা-সরকারি পত্র) জমা দেন। গত বছর ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ নিয়মিত করতে অনুমোদন চেয়ে আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করেন।
জালিয়াতির বিষয়টি ফাঁস হলে গত বছরের এক অক্টোবর বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেন। লিখিত অভিযোগে তিনি জানান, ‘মোখলেছুর রহমানের প্রভাষক পদে যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও মাদরাসার গভর্নিং বডির সভাপতির যোগসাজশে নিয়োগ পান। মাদরাসায় উপাধ্যক্ষ কর্মরত থাকার পরও জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে তাকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়। গভর্নিং বডির সভাপতির বৈধতার জন্য সই জাল করে ডিও লেটার তৈরি করা হয়েছে।’
মাদরাসা গভর্নিং বডির সভাপতি আরিফুল হক লিটন বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘নিজের নিয়োগ বৈধ করতেই মোখলেছুর রহমান বাণিজ্যমন্ত্রীর সিল ও সই জালিয়াতি করেছিলেন। বাণিজ্যমন্ত্রীর পক্ষে তদন্ত কমিটির সামনে অধ্যক্ষের অনিয়ম ও জালিয়াতির সকল প্রমাণ উপস্থাপন হয়েছে। কিন্তু অধ্যক্ষ মোখলেছুর রহমান বৈধ কোন কাগজপত্র দেখাতে পারেননি।’
এ বিষয়ে অধ্যক্ষ মোখলেছুর রহমান বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘আমি ২০১৫ সাল থেকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। আমার সকল কাগজ-পত্র বৈধ রয়েছে।’
রংপুর জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার রোকসানা বেগম বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘এ বিষয়ে তদন্ত চলছে। যথা সময়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।’