ভেড়া পুষে কারখানা গড়েছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের মাসুদ
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার কানসাট ইউনিয়নের শিবনারায়নপুর গ্রামের বাসিন্দা মো.মাসুদ রানা। মাত্র ৩১ বছর বয়সেই আদর্শ উদ্যোক্তা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন তিনি। ভেড়া পুষে খামারের পাশাপাশি শুরু করেছেন নিজের কারখানা।
মাসুদ রানা মার্কেটিং বিভাগ হতে বিবিএ ও এমবিএ সম্পন্ন করেন। এরপর নিজ বাড়ির পাশে একটি উন্নত জাতের ভেড়ার খামার গড়ে তোলেন। প্রথমে ৪৪টি ভেড়া দিয়ে খামার শুরু করেন। অল্প সময়ে তার খামারে ভেড়ার সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় শতাধিক। ভেড়ার মাংস ও চামড়ার ব্যাপক চাহিদা থাকায় খরচের চেয়ে অধিকদামে বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন মাসুদ।
উদ্যোক্তা মাসুদ রানা জানান, মার্কেটিং বিভাগ হতে বিবিএ ও এমবিএ শেষ করার পর চাকরির জন্য বেশ কিছু দফতরে যোগাযোগ করেন তিনি। এরপরেও চাকরি না হওয়ায় নিজেই কিছু করার পরিকল্পনা করেন। তখন তিনি স্থানীয় প্রাণি সম্পদ কার্যালয়ে যোগাযোগ করে ভেড়া পালনের সিদ্ধান্ত নেন।
তিনি জানান, ভেড়া পালনে তেমন খরচ হয়না। সঠিক নিয়মে পরিচর্যা ও দেখাশোনা করলেই বড় হয়। খামারের আশপাশে ব্যাপক চারণভূমি থাকায় সারাদিন বাইরের খাবারেই বড় হয়। এছাড়া ভেড়াগুলো শৃঙ্খলাবদ্ধ হওয়ায় তাদের লালন পালনে তেমন বেগ পেতে হয়না। একেকটি ভেড়া ১৪ মাসে দুটি করে বাচ্চা দেয়। বাচ্চা ও বড় ভেড়া বিক্রি করে যে টাকা আয় হয় তা দিয়ে চলে খামার খরচ ও দুই কর্মচারীর বেতন। ওই সব খরচ বাদ দিয়ে প্রতি মাসে মাসুদ রানার জমা হয় প্রায় ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা।
তার জমানো টাকা দিয়ে শুরু করেছেন মধুমতি বিজনেস ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড নামে একটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। সেখানে তিনি ব্যবস্থাপনা পরিচাল হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।
সেখানে উৎপাদিত হয়- তেল, আটা, খাতা, টিশু ব্যাগ, বিশুদ্ধ পানি, ব্যাটারির পানিসহ বিভিন্ন মসলা। এ ছাড়াও তার রয়েছে মধুমতি হাট.কম নামে আরও একটি অনলাইন বাজার। যা চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় প্রথম অনলাইন শপ। নিজেই গড়ে তুলেছেন বৃহত্তম আকারের ছাপাখানা। ওই সব প্রতিষ্ঠানে কাজ করছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার প্রায় সাড়ে ৪শ যুবক ও যুবতি। সীমান্তবর্তী এ জেলায় তার এমন কর্মকাণ্ডকে সাধুবাদ জানিয়েছে স্থানীয়রা।
মধুমতি বিজনেস ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের ম্যানেজার আবদুল মতিন জানান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুদ রানার সার্বিক সহযোগিতায় এবং সাড়ে ৪শ কর্মচারীর অক্লান্ত পরিশ্রমে তার এমন সফলতা।
সফল উদ্যোক্তা হওয়ার কারণ জানতে চাইলে মো.মাসুদ রানা জানান, ধৈর্য, ইচ্ছেশক্তি সফলতার মূল কারণ। সকল কাজ আমি পরিকল্পনা অনুযায়ী বাস্তবায়ন করি।
সম্প্রতি তার খামার ও ফ্যাক্টরি পরিদর্শন করেছেন জাপানের জুজু ইন্টারন্যাশনাল কোম্পানির প্রতিনিধি ইয়ে চাংচিং, ইয়েন গুয়োজো ও মো.আসাদ। তারা মো.মাসুদ রানাকে তরুণ সমাজের আইকন হিসেবে উল্লেখ করে তার প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করার আশ্বাস দেন।
ভেড়া পালন সম্পর্কে জানতে চাইলে শিবগঞ্জ উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা: রনজিৎ চন্দ্র সিংহ বলেন, ভেড়া পালন লাভজনক একটি পেশা। এখানে প্রচুর পরিমাণে চরণভূমি থাকায় মাঠ হতেই খাবার পাওয়া যায়। একটু যত্ন নিয়ে খামার তৈরি করলে অনেকেই লাভবান হবে। এছাড়া মাঠ পর্যায়ের কর্মী এবং আমি নিজেই খামারে গিয়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষাসহ সঠিক পরামর্শ দিয়ে থাকি।