পীরগাছায় গম চাষের বদলে ভুট্টায় আগ্রহ কৃষকদের
রংপুরের পীরগাছা উপজেলায় গম চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন কৃষকরা। কয়েক বছর আগেও সর্বত্র গম চাষ করা হতো। কিন্তু উৎপাদন খরচ না ওঠায় গম চাষ থেকে ধীরে ধীরে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন তারা। এখন গম চাষের পরিবর্তে বিকল্প ফসল হিসেবে ভুট্টা চাষের দিকে ঝুঁকছেন কৃষকরা।
বুধবার (২৯ জানুয়ারি) সরেজমিনে উপজেলার ছাওলা ও তাম্বুলপুর ইউনিয়নের চরাঞ্চলে গিয়ে কৃষকদের সঙ্গে কথা জানা যায়, ১০ বছর আগেও পীরগাছা উপজেলার ছাওলা ও তাম্বুলপুর ইউনিয়নের চরাঞ্চলসহ বেশির ভাগ এলাকায় তামাক চাষ হতো। সরকারি-বেসরকারি প্রচারণার কারণে এক সময় কৃষকরা তামাক চাষে নিরুৎসাহিত হয়। তারা তামাকের বদলে গম চাষে ঝুঁকে পড়ে।
পরবর্তীতে ভাল বীজের অভাব, বৈরি আবহাওয়া ও খরচ বেশি হওয়ায় কৃষকরা গম চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। যে জমিতে গম আবাদ করা হতো সেই জমিতে এখন চাষ হচ্ছে ভুট্টা। ভুট্টা চাষে খরচ কম, লাভও বেশি হয়।
উপজেলার কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, গত পাঁচ বছরে গম চাষ ব্যাপক হারে হ্রাস পেতে শুরু করে। ২০১৫ সালে ৬২২ হেক্টর, ২০১৬ সালে ৫১০ হেক্টর, ২০১৭ সালে ৪৭০ হেক্টর, ২০১৮ সালে ৪২০ হেক্টর, ২০১৯ সালে ৩১০ হেক্টর জমিতে গম চাষ করা হয়। চলতি বছরেও গম চাষ করা হয়েছে ৩২০ হেক্টর।
ছাওলা ইউনিয়নের চর ছাওলা গ্রামের কৃষক মতিয়ার রহমান বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘আগে আমরা চরে তামাক চাষ করতাম। কিন্তু তামাকে ক্ষতির কথা জানার পর গম চাষ শুরু করি। কিন্তু গমে খরচ বেশি হওয়ায় বারবার লোকসানে পড়তে হয়। তাই গত পাঁচ বছর থেকে চরাঞ্চলে অন্যান্য আবাদের চেয়ে ভুট্টা চাষ বেশি হচ্ছে। ভুট্টায় লাভও বেশি হয়।’
গাবুড়ার চরে আশরাফ উদ্দিন বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘গম চাষের জন্য এখন বাজারে ভাল বীজ পাওয়া যায় না। বৈরী আবহাওয়ার কারণেও ফলন ভাল হয় না। তাই গম চাষে আর আগ্রহ নেই। তাছাড়া ভুট্টা চাষে তেমন শ্রমিকও লাগে না। অন্যান্য খরচও কম।’
উপজেলা উপসহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা আব্দুল লতিফ বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘গম চাষে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। গম চাষের তুলনায় ভুট্টা চাষে খরচ অনেক কম। ফলন ভাল হয়। উৎপাদন খরচও কম।’
পীরগাছা উপজেলার কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা লোকমান আলম বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘গম চাষ বৃদ্ধির জন্য উপজেলা কৃষি বিভাগ কৃষকদের উৎসাহ দিচ্ছে। প্রণোদনা হিসেবে বীজ ও সার দেওয়া হচ্ছে। এরপরও কৃষকদের মাঝে তেমন আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। ফলে প্রতি বছরই গম চাষের লক্ষ্যমাত্রা কমে আসছে।’