বিল প্রদানেও বিদ্যুৎ নেই, ৭০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ বন্ধ
বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করার পরও বিদ্যুৎ বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা কর্তৃক বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ায় রাঙামাটি জেলার কাউখালী উপজেলার শতাধিক রোরো চাষি শঙ্কায় পড়েছেন।
নির্ধারিত সময়ের চেয়েও প্রায় এক মাস অতিবাহিত হওয়ায় সেচের অভাবে ধানের চারা, বীজ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে মাঠেই। ফলে বোরো মৌসুমে প্রায় ৭০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ করা কৃষকরা মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হতে চলেছে। কৃষকদের দাবি, বিদ্যুৎ বিভাগের পনের হাজার টাকা না দেয়ায় আবাসিক প্রকৌশলী বিদ্যুৎ সংযোগ দিচ্ছেন না।
বুধবার (২৯ জানুয়ারি) কাউখালী উপজেলা পরিষদের মাসিক সমন্বয় সভায় বিদ্যুৎ বিভাগের এমন কর্মকাণ্ডের কারণে ক্ষোভ প্রকাশ করে দ্রুত বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ার আহবান জানিয়েছেন কাউখালী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সামশুদোহা চৌধুরী।
সরজমিনে কাউখালী উপজেলার ৪টি ব্লকে ঘুরে এবং কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রায় ৭০ হেক্টর জমিতে শতাধিক কৃষক যুগ যুগ ধরে শুকনো মৌসুমে বোরো চাষ করে আসছে। পাশাপাশি ভুট্টা, ধনিয়া ও মৌসুমি সবজি উৎপাদন করে থাকেন তারা। দীর্ঘদিন ধরে নিয়মতান্ত্রিকভাবে বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে বিদ্যুৎ সংযোগ নিয়ে নিয়মিত বিলও পরিশোধ করে আসছেন এসব কৃষকরা। কিন্তু গত এক মাস যাবত কাউখালীর বেতবুনিয়া বিদ্যুৎ সরবরাহের নতুন দায়িত্বে আসা আবাসিক প্রকৌশলী অশোক কুমার ঘোষ বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে ৪টি ব্লকের কৃষকদের সেচ পাম্পের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে রেখেছেন। এতে একদিকে কৃষকদের মধ্যে দিন দিন যেমন ক্ষোভ বাড়ছে অপরদিকে ব্যাপক লোকসানের সম্মুখিন হচ্ছেন।
এসব জমিতে সেচের দায়িত্বে থাকা স্কিম ম্যানেজার ও কৃষক মো. সোলতান জানান, গত পনের দিন যাবত বিদ্যুৎ সংযোগ পেতে আমরা আবাসিক প্রকৌশলীর দফতরে যাচ্ছি। আবাসিক প্রকৌশলী প্রথমে সংযোগ দেয়ার বিষয়ে বিভিন্ন অজুহাত দেখালেও পরে সংযোগ দিতে কৃষকদের কাছে ১৫ হাজার টাকা দাবি করেন। এ টাকা পরিশোধ করলেই কেবল সংযোগ প্রদান করা হবে জানান কৃষক সোলতান।
এ বিষয়ে আবাসিক প্রকৌশলী অশোক কুমার ঘোষ জানান, পোয়াপাড়া (বি)-৩৯, লোয়ার পোয়াপাড়া (বি)-৩৮, ছোটডলু (বি)-৪৩ ও ছোট ডলু (বি) ১২৬ এ চারটি ব্লকে মোট ৪টি সেচ পাম্প দীর্ঘ সময় চালু ছিলো। প্রতি পাম্প ১ কিলো কথা বলে ১০-১৫ কিলো পর্যন্ত ব্যবহার করে আসছে কৃষকরা, যা নিয়ম বহির্ভূত। ফলে তাদের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।
এত বছর কিভাবে এসব সেচ পাম্প চলে আসছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি এড়িয়ে যান। নিয়মানুসারে প্রতি মিটার যদি ১ কিলো থেকে ১৫ কিলোতে রুপান্তরিত করতে গেলে কৃষকদের খরচ পড়ে ১২ হাজার টাকা।
কলমপতি ইউপি চেয়ারম্যান ক্যাজাই মারমা জানান, নির্ধারিত সময়ে চাষাবাদ করতে না পারলে ৭০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ করা কৃষকরা সর্বস্বান্ত হয়ে যাবে।
আবাসিক প্রকৌশলীর এমন সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক ও কাউখালী উপজেলার দায়িত্বে নিয়োজিত কৃষি কর্মকর্তা কাজী সফিকুল ইসলাম। তিনি জানান, এ মৌসুমে চাষাবাদ করতে হলে পানির কোনো বিকল্প নেই।