স্কুলে হাজিরার অনন্য দৃষ্টান্ত গড়লেন আমানুল্লাহ
নিয়মিত স্কুলে হাজির হবার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের এক স্কুলছাত্র। দীর্ঘ ১১ বছরে একদিনও স্কুলেও অনুপস্থিত ছিলো না সে।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ এমনকি রোগবালাইও তার বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। একাধিক বার জ্বর-ঠান্ডার
মধ্যেও স্কুলে হাজির হয়েছে।
বলছি চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার ফুলকুঁড়ি ইসলামিক একাডেমির দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী আমানুল্লাহ হকের কথা। সে শহরের পুরাতন সিএন্ডবি ঘাট এলাকার মোজাম্মেল হক ও আয়েশা বেগমের সন্তান।
সাপ্তাহিক ও সরকারি অন্যান্য ছুটি ছাড়া ১১ বছরের প্রতিদিনই স্কুলে উপস্থিত হওয়ার রেকর্ড গড়ায় আমানুল্লাহকে গত বছর সংবর্ধনা দিয়েছেল তার বিদ্যালয়।
মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান আমানুল্লাহ হক ছয় বছর বয়সে ভর্তি হয়েছিল বাড়ি সংলগ্ন ফুলকুঁড়ি ইসলামিক একাডেমিতে। দিনে দিনে বয়স গিয়ে ঠেকেছে ১৭’র কাছে।
প্রথম শ্রেণি থেকে দ্বিতীয় শ্রেণি এভাবে দশম শ্রেণির হাজিরা খাতার পাতাজুড়ে রয়েছে আমানুল্লাহ সরব উপস্থিতি। দীর্ঘ এই এগারো বছরের একদিনও ‘স্কুল ফাঁকি’ নেই তার।
প্রতিদিনের উপস্থিতির কারণে বিদ্যালয়ের শ্রেণি শিক্ষক থেকে শুরু করে দারোয়ান আর সকল শিক্ষার্থীই তাকে চেনে এক নামে। শুধু তাই নয়, নিয়মিত স্কুলে উপস্থিত থাকার দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী স্কুলে ভর্তির পর থেকে এ পর্যন্ত প্রতিটি শ্রেণিতেই প্রথম স্থান অধিকার করেছে। সে স্কুলের স্কাউট দলের সহকারী লিডার।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘নিয়মিত স্কুলে আসার এমন নজির এই স্কুলে তো বটে অন্য কোনো স্কুলে আছে বলে মনে হয় না। আমি প্রথম শ্রেণি থেকে তাকে নিয়মিত স্কুলে দেখেছি।’
সে এবার এসএসসি পরীক্ষার্থী। ফুলকুঁড়ি ইসলামিক একাডেমিতে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের বিদায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি জেলা প্রশাসক এ জেড এম নুরুল হকের কানে আসে ১১ বছরে কোনদিন স্কুল বাদ না দেওয়ার কথা।
একথা শুনে জেলা প্রশাসক তার মা বাবাকে দেখতে চান এবং তার মা-বাবার সামনে তিনি তাকে একটি ল্যাপটপ দেওয়ার ঘোষণা দেন।
বুধবার (২৯ জানুয়ারি) জেলা প্রশাসকের কক্ষে তাকে একটি ল্যাপটপ তুলে দেন। এসময় বিদ্যালয়ের শিক্ষকসহ তার মা-বাবা উপস্থিত ছিলেন।
আমানুল্লাহ বলেন, ‘স্কুল খুললেই বাড়িতে আর মন টিকে না। প্রতিদিনই স্কুলের মাঠ, আর ক্লাসরুম হাতছানি দিয়ে ডাকে।’
তিনি জানান, প্রতিদিন স্কুলে উপস্থিত থাকার ব্যাপারে তার মা-বাবা উৎসাহ জুগিয়েছেন।
ভবিষ্যৎ ইচ্ছে কী এমন প্রশ্নের জবাবে আমানুল্লাহ জানায়, ‘মা-বাবার ইচ্ছে আমি যেন ডাক্তার হই। আর আমার ইচ্ছে বড় হয়ে যোগ দেব প্রশাসন ক্যাডারে।’