জ্যেষ্ঠতা ভঙ্গ করে ভারপ্রাপ্ত, পরিচয় দেন অধ্যক্ষ বলে!
২০১৫ সালে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পান সহকারী অধ্যাপক মো. বিল্লাল হোসেন মোল্লা। বর্তমানে তিনি সভা-সেমিনার, ব্যানার-ফেস্টুনে নিজের পরিচয় দেন অধ্যক্ষ বলে।
২০১৫ সালের ১ জানুয়ারি জ্যেষ্ঠতা ভঙ্গ করে এক বছরের জন্য কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় বিল্লাল হোসেনকে। অধ্যক্ষ নিয়োগ প্রক্রিয়ার ৫ বছর অতিক্রম করার সুফল এখন ষোলকলাই বহন করছেন তিনি।
চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলার পালাখাল রোস্তম আলী ডিগ্রি কলেজে সহকারী অধ্যাপক মো. বিল্লাল হোসেন মোল্লা পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান। কলেজটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখন পর্যন্ত ভাইস প্রিন্সিপাল পদটিও শূন্য রয়েছে। একদিকে ভাইস প্রিন্সিপাল নেই অন্যদিকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ পরিচয় দিচ্ছেন অধ্যক্ষ!
পালাখাল রোস্তম আলী ডিগ্রি কলেজটি ১৯৯৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০০১ সালে ডিগ্রি ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয়। কলেজটিতে ১৩শ’ শিক্ষার্থী। ২৮ জন শিক্ষক। শূন্য পদ রয়েছে ছয়টি। পদগুলো হলো— অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ, অফিস সহকারী, লাইব্রেরিয়ান, কম্পিউটার ল্যাব ও অপারেটর। ২০১৮ ও ২০১৯ সালে এইচএসসিতে এ কলেজে পাসের হার ৬০ ভাগ।
জানা গেছে, কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ ড. চৌধুরী হাবিবুর রহমান অবসরে যাওয়ার পর কলেজ কর্তৃপক্ষ ৩ অক্টোবর ২০১৪ সালে ৫টি শূন্য পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়। বিজ্ঞপ্তি মোতাবেক কলেজ কর্তৃপক্ষ উল্লেখিত পদে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা গ্রহণের জন্য ওই বছর ১২ ডিসেম্বর দিন ধার্য করে। তখন শুরু হয় কূটকৌশল। কলেজের সহকারী অধ্যাপক মো. নজরুল ইসলাম বাদী হয়ে নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত চেয়ে হাইকোর্টে রিট পিটিশন দায়ের করেন। আদালত রিট আবেদনটি আমলে নিয়ে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আদেশ জারি করেন। আর এমন সুযোগে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বিল্লাল হোসেনসহ কয়েকজন শিক্ষক কলেজের নানাদিক দাবড়ে লুটেপুটে খাচ্ছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলেজের একাধিক শিক্ষকরা বলছেন, বর্তমান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বিল্লাল হোসেন মোল্লা বিধি ভঙ্গ করে কলেজের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি অনুষ্ঠানে নিজ নামের পরে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ না লিখে সরাসরি অধ্যক্ষ লিখে আসছেন। কলেজ শিক্ষকদের মধ্যে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে ৫ম স্থানে থাকা সহকারী অধ্যাপক মো. বিল্লাল হোসেন মোল্লাকে (পরিসংখ্যান) ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ করা হয়। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিয়োগ প্রক্রিয়ার সময় ওই কলেজটিতে সিনিয়র সহযোগী অধ্যাপক পদে মো. ফানাউল্যাহ (বাংলা), মো. ফজলুল হক (পদার্থ বিজ্ঞান), নজরুল ইসলাম (রাষ্ট্রবিজ্ঞান) ও আবুল খায়ের (অর্থনীতি) কর্মরত ছিলেন।
সহকারী অধ্যাপক বিল্লাল হোসেন মোল্লার বিরুদ্ধে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা বলেন, ২০১৯-২০২০ শিক্ষাবর্ষে ডিগ্রিতে ভর্তি হতে ৩ হাজার টাকা করে আদায় করেছেন তিনি। এভাবে ফরম পূরণে অতিরিক্ত ফি আদায়, বিভিন্ন পরীক্ষার ফল বিবরণী ও পরীক্ষার খাতা যাচাই-বাছাইকরণ ফি, উচ্চ মাধ্যমিক ও ডিগ্রি ভর্তির অতিরিক্ত ফি, উপবৃত্তি ফি, রেজিস্ট্রেশন ফি-সহ নানাভাবে ফি আদায় করে আসছেন বিল্লাল হোসেন।
জানতে চাইলে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বিল্লাল হোসেন মোল্লা বলেন, আমি অধ্যক্ষ পরিচয় দেইনি। আমি প্রিন্সিপাল ইনচার্জ হিসেবে এখানে দায়িত্বে রয়েছি।
শূন্য পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ওইসব ব্যাপার কলেজের পরিচালনা পর্ষদ দেখবে। আমি কিছু বলতে পারব না।
কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি মো. আইয়ুব আলী পাটওয়ারী বলেন, নিয়োগ প্রক্রিয়া মামলা জটিলতায় বন্ধ রয়েছে। আমরা মামলাটি দ্রুত শেষ করে শূন্য পদে নিয়োগ সম্পন্ন করতে চেষ্টা করছি।
জানতে চাইলে কচুয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার দীপায়ন দাস শুভ বলেন, অধ্যক্ষ পরিচয় দেওয়া ঠিক না। আমরা বিষয়টি দেখছি।