জনশুমারি ও গৃহগণনায় নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন ‘জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২১’ এর লিস্টিং অপারেশন কার্যক্রমে রংপুরের পীরগাছায় তালিকাকারী/গণনাকারী ও সুপারভাইজার পদে নিয়োগের জন্য প্রবেশপত্রের নামে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
গণনাকারী ও সুপারভাইজার পদে তিন হাজার ৬৫৬ জন বেকার যুবক ও যুব মহিলা আবেদন করেন। আবেদন যাচাই-বাছাই শেষে ৮০৫টি আবেদন বাতিল করা হয়। প্রার্থীদের নিকট থেকে কোনো টাকা নেওয়ার নিয়ম না থাকলেও প্রবেশপত্র বাবদ জনপ্রতি ১০০ টাকা করে হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে।
এ ঘটনায় বেকার যুবক ও যুব মহিলাদের ক্ষোভের মুখে বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে উপজেলা পরিসংখ্যান কর্মকর্তা নিজ কক্ষে তালা দিয়ে আত্মগোপন করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) সরেজমিনে জানা গেছে, জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২১’ বাস্তবায়নের জন্য উপজেলা পরিসংখ্যান কার্যালয় থেকে গত ১০ জানুয়ারি একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এতে উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে সুপারভাইজার পদে ৪০ জন ও তালিকাকারী/গণনাকারী হিসেবে ২২০ জন নেওয়ার কথা বলা হয়। বাছাই শেষে নির্বাচিত প্রার্থীগণ প্রশিক্ষণ ভাতা হিসেবে প্রতিদিন ৪০০ টাকা করে পাবেন। এ ছাড়া পারিতোষিক হিসেবে সুপারভাইজারদের ৮৫০০ টাকা ও গণনাকারীদের ৮০০০ টাকা প্রদান করা হবে। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর উপজেলার বেকার যুবক ও যুব মহিলারা আবেদন শুরু করেন। মোট ২৬০টি পদের বিপরীতে আবেদন পড়ে তিন হাজার ৬৫৬টি। শর্তপূরণ না করায় ৮০৫টি আবেদন বাতিল করা হয়। আবেদন বেশি হওয়ায় বেকার যুবক ও যুব মহিলাদের সঙ্গে প্রতারণার আশ্রয় নেয় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ। তারা প্রার্থী যাচাই-বাছাই করতে মৌখিক পরীক্ষার পরিবর্তে লিখিত পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নেন। পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে বৃহস্পতিবার (৬ জানুয়ারি) সকাল ১০টায়।
ওই পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য প্রবেশপত্র বাবদ দুই হাজার ৮৫১ জন প্রার্থীর নিকট থেকে ১০০টাকা করে মোট দুই লাখ ৮৫ হাজার ১০০ টাকা আদায় করেন। বিষয়টি নিয়ে প্রার্থীদের মাঝে ক্ষোভ দেখা দিলে বুধবার দুপুরে উপজেলা পরিসংখ্যান কর্মকর্তা তার কক্ষে তালা দিয়ে অন্যত্র চলে যান। এসময় উপজেলা পরিসংখ্যান অফিসের ডাটা এন্ট্রি অপারেটর আল আমিনকে হল রুমে প্রার্থীদের নিকট থেকে টাকা আদায় করতে দেখা যায়।
প্রার্থীদের অভিযোগ, পরিসংখ্যান অফিসের কতিপয় কর্মচারী টাকার বিনিময়ে আগেই লোক চূড়ান্ত করে রেখেছেন। পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে শুধু লোক দেখানো।
গণনাকারী হিসেবে আবেদনকারী শামিউল ইসলাম বার্তা২৪.কম-কে বলেন, পাশের অন্য উপজেলাগুলোতে মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে লোক নেওয়া হয়েছে। প্রার্থীদের কাছ থেকে কোনো টাকা আদায় করা হয়নি। অথচ পীরগাছায় লিখিত পরীক্ষার নামে জনপ্রতি ১০০ টাকা করে আদায় করা হচ্ছে। এটা বেকারদের সঙ্গে প্রতারণা ছাড়া আর কিছু নয়।
সুপারভাইজার পদে আবেদনকারী সাজেদুল ইসলাম বার্তা২৪.কম-কে বলেন, আদমশুমারির জন্য বেকারদের পকেট কেটে কর্মকর্তাদের পকেট ভারী করার ফন্দি করা হয়েছে। প্রার্থীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় টাকা হাতিয়ে নিতেই তারা এ বুদ্ধি করেছে।
উপজেলা পরিসংখ্যান কর্মকর্তা এস এম শাহনেওয়াজ বার্তা২৪.কম-কে বলেন, নিয়োগ পরীক্ষার জন্য অতিরিক্ত টাকা খরচের কোনো সুযোগ নেই। তাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সিদ্ধান্তক্রমে জনপ্রতি ১০০ টাকা করে আদায় করা হয়েছে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২১’ এর গণনাকারী ও সুপারভাইজার নির্বাচন কমিটির সভাপতি জেসমিন প্রধান বার্তা২৪.কম-কে বলেন, কমিটির সিদ্ধান্তে টাকা নেওয়া হচ্ছে। ওই টাকা পরীক্ষা সংক্রান্ত কাজে ব্যয় করা হবে।