ঘুষের বিনিময়ে স্কুল-মাদ্রাসায় নিষিদ্ধ গাইড বই

  • মনিরুজ্জমান বাবলু, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, চাঁদপুর
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

হাজীগঞ্জ উপজেলায় একটি গাইড বইয়ের দোকান

হাজীগঞ্জ উপজেলায় একটি গাইড বইয়ের দোকান

শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত গাইড বই নিষিদ্ধ করলেও চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলায় ৩৬টি উচ্চ বিদ্যালয় ও ১৩টি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের নির্দেশনায় গাইড বই কিনছে। বিভিন্ন পুস্তক প্রকাশনী থেকে ঘুষ নিয়ে শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের গাইড বই কেনার নির্দেশনা দিচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

উপজেলার বিভিন্ন লাইব্রেরির গাইড বিক্রেতারা বলছেন, গাইড বই প্রকাশনীগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষকরা নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানে গাইড বই পাঠ্য করেছেন। আমরা সব প্রকাশনীর গাইড বই বিক্রি করছি। একেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান একেক প্রকাশনীর বই পৃথকভাবে পাঠ্য করেছে।

বিজ্ঞাপন

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি বছর হাজীগঞ্জ মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির নেতাদের দ্বন্দ্বের কারণে গাইড বই পাঠ্য করাতে পারেননি প্রকাশনীগুলো। তাই প্রকাশনীগুলো নতুন কৌশলে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান ও কমিটির সভাপতিদের ম্যানেজ করে নিজেদের প্রকাশনীর বই পাঠ্য করেছে।

সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, উপজেলার আমিন মেমোরিয়াল, বেলচোঁ, সুহিলপুর, ধড্ডা পপুলার, পিরোজপুর, মৈশাইদ পল্লীমঙ্গল, পালিশারা, রাজারগাঁও, হাটিলা টংঙ্গীরপাড়, রামচন্দ্রপুর ভূঁইয়া একাডেমিতে লেকচার পাবলিকেশন্সের গাইড ও ব্যাকরণ বই নির্ধারণ করা হয়েছে। এভাবে নাসিরকোট, বাকিলা, জগন্নাথপুর হাজী এরশাদ মিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স; মালিগাঁও, রান্ধুনীমূড়া, বোরখাল ও অলিপুর উচ্চ বিদ্যালয় পুঁথিনিলয় প্রকাশনী; বলাখাল ও বেলচোঁ উচ্চ বিদ্যালয় ক্লাসফ্রেন্ড পাবলিকেশন্স; দেশগাঁও, প্যারাপুর, আনোয়ার আলী মেমোরিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, বেলঘর স্কুলে গ্যালাক্সি পাবলিকেশন; বলাখাল জেএন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, শ্রীপুর, রামপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে ক্যাপটেন প্রকাশনী; মেনাপুর পীর বাদশা মিয়া ও মেনাপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ফাহাদ বুক; সপ্তগ্রাম ও বড়কুল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে অনুপম পাবলিকেশনের গাইড ও ব্যাকরণ বই পাঠ্য করা হয়েছে। এছাড়া ১৩টি মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ও সুপার আল ফাতাহ প্রকাশনীর সঙ্গে সমন্বয় করে গাইড বই নির্ধারণ করেছেন।

বিজ্ঞাপন
হাজীগঞ্জ উপজেলায় একটি গাইড বইয়ের দোকান

বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে পালিশারা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাকির হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার স্কুলের শিক্ষার্থীরা লেকচার কিনছে। আমরা শুধু পরামর্শ দিয়েছি।

ঘুষ বাণিজ্য প্রসঙ্গ তিনি বলেন, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এক থেকে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত নিয়েছেন, আমি এখনো নেইনি।

গাইড বই বিক্রি নিষিদ্ধ প্রসঙ্গে মির্জা লাইব্রেরির মালিক মির্জা গিয়াস উদ্দিন ও কিশোর লাইব্রেরির মালিক জাবের আহম্মেদ সুমন বলেন, উচ্চ আদালতে পুস্তক প্রকাশনীর একটি রিট চলমান রয়েছে। তার প্রেক্ষিতে গাইড বই বিক্রি পুরোপুরি বন্ধ হচ্ছে না।

হাজীগঞ্জ উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, নোট বা গাইডবই সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। সরকারি বইয়ের বাহিরে কোন বই শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করানো যাবে না। এ জন্য আমরা সরকারি প্রজ্ঞাপন সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দিয়েছি এবং আমরা নিজেরাও মনিটরিং করছি। মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি পেলে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে বই লাইব্রেরিগুলোতে অভিযান পরিচালনা করব।

জানতে চাইলে চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) জাকারিয়া বলেন, সরকার গাইড বই নিষিদ্ধ করেছে। এসব বিষয়ে প্রমাণ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।